প্রকল্পে অর্থ ছাড় স্থগিত থেকে পিছু হটল সরকার
নিম্ন অগ্রাধিকার ২৪ প্রকল্পে ১০৮৫ কোটি টাকা ছাড়- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:১৩
চাপে পড়ে এডিপিতে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড় স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটল সরকার। গত জুলাই মাসে অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছিল, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে(এডিপি) ‘নিম্ন অগ্রাধিকার’ বা কম গুরুত্বপূর্ণ ৩০ ভাগ প্রকল্পের অর্থ ছাড় স্থগিত থাকবে। কিন্তু এক মাস ২১ দিন যেতে না যেতে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে রূপপুর প্রকল্প বাদে অবশিষ্ট চব্বিশটি প্রকল্পে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ৭০ শতাংশ বরাদ্দ ব্যবহারের সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। এতে অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৮৫ কোটি টাকা।
গেল সপ্তাহে এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত নিম্ন অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত প্রকল্পসমূহ চলমান রাখার স্বার্থে রূপপুর প্রকল্প বাদে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপি ১৫৫১ কোটি দশমিক ৮৪ লাখ টাকার ৭০ ভাগ অর্থাৎ এক হাজার ৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা প্রকল্পভিত্তিক ব্যবহারের নির্দেশ, অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।’ কিন্তু ৮ জুলাই জারি করা পরিপত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিলÑ চলতি ‘২০২০-২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সীমিত সম্পদের ব্যয়সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের এডিপিভুক্ত প্রকল্পসমূহের উচ্চ/মধ্যম/নিম্ন অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে।’
বলা হয়েছে, ‘‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থাসমূহ ‘উচ্চ অগ্রাধিকার’ চিহ্নিত প্রকল্পগুলো যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।’’
পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসকল খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে, মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থাসমূহ স্বীয় বিবেচনায় সে সকল খাতে অর্থ ব্যয় করবে। এ ক্ষেত্রে যে সকল অর্থনৈতিক কোডের ব্যয় পরিহার করা সম্ভব, সে সকল কোডের ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে।’
প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের ‘উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮’সহ বিদ্যমান আর্থিক বিধি-বিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্যও পরিপত্রে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ২৪টি নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের জন্য এডিপিতে মোট এক হাজার ৫৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হিসাবে এক হাজার ৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা অর্থ ছাড়ের সম্মতি দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সহায়ক তিন প্রকল্প হলো, রূপপুুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষাব্যবস্থা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পারমাণবিক নিরাপত্তা তদারকিকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন এবং সিগন্যালিংসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য রেললাইন স্থাপন। এ তিন প্রকল্পের জন্য এডিপিতে পৃথকভাবে বরাদ্দ রয়েছে ৯০৭ কোটি সাত লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোর ৭০ শতাংশ করে ৬৪০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অর্থ অবমুক্তির সম্মতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে মূলধন বাবদ ৫২৮ কোটি ৯৪ লাখ এবং রাজস্ব বাবদ ১১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এর ফলে অন্য মন্ত্রণালয়গুলোও তাদের কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আবেদন শুরু করে দেবে। শুধু তা-ই নয়, আগামীতে হয়তো চাপের পড়ে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড়ও করতে হবে। এতে করে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়বে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা