০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

ব্যাংকগুলোকে অর্থপাচার রোধের গাইডলাইন জমা দেয়ার নির্দেশ

- সংগৃহীত

আগামীকাল সোমবারের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থপাচার রোধে গাইডলাইন জমার দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে গত ১৮ মার্চ বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের উপায় নির্ধারণের বিষয়ে সভায় একটি সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএফআইইউ কর্তৃক জারি করা ‘গাইডলাইন ফর প্রিভেনশন অব ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং’ শীর্ষক গাইডলাইন/ম্যানুয়েল বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গত ৯ আগস্ট একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় উল্লেখ করা হয়, দেশ থেকে অর্থপাচারের বেশির ভাগই হচ্ছে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। এই অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ ‘গাইডলাইন ফর প্রিভেনশন অব ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং’ শীর্ষক একটি গাইডলাইন/ম্যানুয়েল অনুসরণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজস্ব গাইডলাইন/ম্যানুয়েল তৈরি করতে হবে এবং তা আগামী ৩১ আগস্ট বা সোমবারের মধ্যে প্রেরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে আরো বলা হয়, সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্র মালিকানাধীন সব ব্যাংক তাদের নিজস্ব গাইডলাইন/ম্যানুয়েল ওই ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় বোর্ড অব ডাইরেক্টরসের অনুমোদন নিয়ে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বিএফআইইউতে ভেটিংয়ের জন্য পাঠাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো: রাজী হাসান এবং সরকারি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বলা হয়, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থ পাচার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখিয়ে অর্থপাচার বেশি হচ্ছে। এর বাইরে অন্যান্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যমূল্য বেশি দেখিয়ে ও রফতানির মূল্য কম দেখিয়ে বা দেশে না এনে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। বিএফআইইউ থেকে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার প্রতিরোধে একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এটি ব্যাংকগুলোকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হলে বাণিজ্যভিত্তিক মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের বড় মাধ্যম হিসেবে বাণিজ্যভিত্তিক মানিলন্ডারিংকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে অর্থনীতির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থপাচার বন্ধে ব্যাংকগুলোকে নীতিমালা বাস্তবায়নে আন্তরিকতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিএফআইইউর প্রধান রাজী হাসান বলেন, বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডির যৌথ উদ্যোগে প্রণীত ‘বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ’ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও বিদেশে অর্থপাচারকে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন ও কঠোর তদারকি করা হলে অর্থপাচার কমে যাবে।

সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সব ব্যাংকের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিভাগ/ডিভিশনে ব্যাংকের শাখা, কর্মবল, গ্রাহক সংখ্যা, ব্যবসায়ের পরিধি বিবেচনায় পর্যাপ্ত লোকবল পদায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন নিয়োগের আগে বিদ্যমান লোকবল থেকে পদায়ন করে পর্যাপ্ত লোকবল নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগ এবং অনুমোদিত ডিলার শাখায় দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সভায় বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধে পণ্যের মূল্য তদারকির বিষয়ে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ গড়ে তোলার বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement