দরপতন ঠেকাতে উদ্বৃত্ত ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
- আশরাফুল ইসলাম
- ২১ আগস্ট ২০২০, ০৬:৪০
করোনায় গত মার্চ থেকে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য আমদানি কমে গেছে। এতে কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার; কিন্তু রেমিট্যান্স, রফতানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানসহ যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে তার বেশির ভাগই উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। প্রায় সব ব্যাংকের হাতে এখন উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় বাজারে চাহিদাও কমে গেছে। ডলার বিক্রি করতে না পারায় ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসছে। ডলারের মূল্য পতন ঠেকাতে চলতি অর্থবছরের গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনেছে ১৫৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ সুবাদে গতকাল পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৮৪০ কোটি ডলার।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলেই বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে না। প্রতিটি ব্যাংকেরই বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখার জন্য সীমা দেয়া আছে। এ সীমাকে এনওপি বা নেট ওপেন পজিশন বলে। নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে, না হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।
ব্যাংকাররা জানান, গত পাঁচ মাস দরে করোনার কারণে আমদানি ব্যয় কমে গেছে। কমে গেছে মানুষের চাহিদা। অপর দিকে আগে প্রতি মাসেই বিদেশে চিকিৎসার বিপরীতে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো; কিন্তু করোনার কারণে গত পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসার জন্য কেউ বিদেশে যাচ্ছে না। আবার প্রতি বছরই পবিত্র হজ পালনের জন্য হজযাত্রীরা বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করেন; কিন্তু এবার করোনার কারণে এটাও বলা চলে ব্যয় হয়নি। এ দিকে, দীর্ঘ দিন বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা করোনার কারণে বেকার হয়ে গেছেন। অনেক দেশ থেকেই এখন বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ দিনের জমানো অর্থ বিদেশ থেকে দেশে পাঠাচ্ছেন তারা। এ কারণে করোনার মধ্যে গত দুই মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ১২৫ কোটি ডলার এসেছে। মাস শেষে তা ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অপর দিকে কিছু রফতানি আয় দেশে আসছে। সেই সাথে বিদেশী ঋণ ও বৈদেশিক অনুদান আসছে। সবমিলে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে ওই পরিমাণ ব্যয় হচ্ছে না। এর ফলে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই বৈদেশিক মুদ্রা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কমে গেছে।
এ দিকে, ব্যাংকগুলো এখনো রেমিট্যান্স হাউজগুলোর মাধ্যমে বাড়তি দামেই বৈদেশিক মুদ্রা কিনে দেশে আনছে; কিন্তু চাহিদা না থাকায় তা কাজে লাগাতে পারছে না। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও ডলার বিক্রি করতে না পারায় তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্যপতন ঠেকাতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রতিদিনই ডলার কিনছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জনায়, চলতি অর্থবছরের গতকাল পর্যন্ত তারা এক মাস ২০ দিনে বাজার থেকে ১৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনেছে। গত পুরো অর্থবছরে কিনেছিল ৮৭ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না কিনলে বাজারে প্রতি ডলার ৮০ টাকার নিচে নেমে যেত। এতে রফতানিকারক ও প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে। এ সুবাদে গতকাল পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৮৪০ কোটি ডলার।
আর কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ চার হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে ওই সূত্র আশা করছে। তবে ব্যাংকাররা জানান, আমদানি ব্যয় আবার বেড়ে যাচ্ছে। সেই সাথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যেতে পারে। সবমিলে অক্টোবরের মধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আবার কমে যেতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা