কঠোর তদারকিতে ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতারা
নতুন ঋণ পাবে না খেলাপিরা; আলাদা সিআইবি হচ্ছে- আশরাফুল ইসলাম
- ১৬ আগস্ট ২০২০, ০৯:০৮
এনজিও ঋণে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। এ জন্য তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের। এক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে পরিশোধ করা বা একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের জালে আটকে পড়া ঠেকাতে তৈরি করা হয়েছে ব্যাংকিং খাতের মতো একটি আলাদা সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) কাঠামো। সিআইবি চালু করতে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থ- ডিএফআইডির আর্থিক সহযোগিতায় এ সফটওয়্যার তৈরির কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে এনজিওদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
জানা গেছে, সিআইবি হলো গ্রাহকের ঋণতথ্য ভাণ্ডার। কোনো গ্রাহক ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে সিআইবিতে ওই গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য রক্ষিত থাকে। ব্যাংকগুলো কোনো গ্রাহককে ঋণ দেয়ার আগে ওই গ্রাহকের সিআইবি তথ্য সংগ্রহ করে। এতে কোনো গ্রাহক ঋণখেলাপি হলে সহজেই তা জানতে পারে ব্যাংকগুলো। আর ব্যাংক কোম্পানি আইন আনুযায়ী কোনো গ্রাহক ঋণখেলাপি হলে ওই গ্রাহক অন্য কোনো ব্যাংক থেকে নতুন করে আর ঋণ নিতে পারেন না। পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারেন না। এমনকি কোনো জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেও পারেন না। মূলত ঋণখেলাপিদের আটকাতেই ১৯৯৪ সালে সিআইবি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এমআরএ সূত্র জানায়, বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণ খাতে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো ঋণ তথ্যভাণ্ডার নেই; যে কারণে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একই গ্রাহক একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন। খেলাপি হলে ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করতে পারছে না। ফলে খেলাপি প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া যায়। এভাবে এক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ শোধ করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা যেমন ঋণের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন, তেমনি একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
এমআরএ সূত্র মতে, এনজিও ঋণে শৃঙ্খলা আনা এবং ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদলেই এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতাদের ঋণতথ্য সংরক্ষণ করার জন্য আলাদা একটি সিআইবি গঠন করা হচ্ছে। কোনো ঋণখেলাপি যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে না পারে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিয়ে ঝুঁকিতে না পড়ে- এসব বিষয় তদারকি করার জন্য সিআইবি গঠন করা হচ্ছে। এ জন্য ডিএফআইডির অর্থায়নে একটি সফওয়্যার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এমআরএ থেকে নিবন্ধন নিয়ে দেশে যারা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের ঋণের যাবতীয় তথ্য এখানে থাকবে। এর মধ্যে ঋণগ্রহীতার নাম, উত্তরাধিকারের নাম, ঠিকানা, ঋণের পরিমাণ, ঋণের অবস্থা, খেলাপি হলে তার বিস্তারিত তথ্য, কয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে এবং ঋণের পরিমাণসহ বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
সফটওয়্যার চালু হলেই গ্রাহকের ঋণতথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। এটি কার্যকর হলে কোনো গ্রাহককে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে হলে সিআইবি সনদ লাগবে। এই সনদ মাঠ পর্যায় থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়ে যাবে অনলাইনের মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, এমআরএ’র কাজ শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। বর্তমানে সারা দেশে এমআরএ’র নিবন্ধন নিয়ে প্রায় ৮০০টি প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া প্রায় দেড় শ’ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এমআরএ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে। সারা দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ২০ হাজার শাখা রয়েছে। এদের ঋণগ্রহীতা প্রায় তিন কোটি। প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। আদায় করে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। সদস্যদের সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা