২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অপ্রত্যাশিত খাতেই ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা

গত বছর ‘রোজ গার্ডেন’ কেনার অর্থও এ খাত থেকে দেয়া হয়েছিল - ছবি : সংগৃহীত

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ‘অপ্রত্যাশিত’ খাতে ব্যয় ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সেটি বাড়িয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। মূলত করোনা-পরবর্তী বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে ব্যয় হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে একই পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একই পরিমাণ বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় মাত্র ৬০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র দুই কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে অপ্রত্যাশিত খাতে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছরই এ খাতে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। দেশে কোনো দৈব-দুর্বিপাক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এ খাত থেকে অর্থ ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হলেও এ খাত থেকে অর্থের সংস্থান করা হয়ে থাকে। যেমন গত বছর ‘রোজ গার্ডেন’ কেনার অর্থও এ খাত থেকে দেয়া হয়েছিল। আগামী অর্থবছরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় হঠাৎ করে যদি কোনো অর্থের প্রয়োজন হয় সে জন্য এবার এখানে বরাদ্দ ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ নামে পরিচিত এ খাত থেকে গত কয়েক অর্থবছরে তেমন অর্থ ব্যয় না হলেও চলতি অর্থবছরে এ খাতের প্রায় পুরো অর্থই ব্যয় হয়েছে। ব্যয়িত অর্থের বেশির ভাগই গেছে করোনার কারণে দেয়া স্বাস্থ্য ও প্রণোদনা খাতে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত ছয় অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের বিপরীতে খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে ব্যতিক্রম শুধু গত ২০১৮-১৯ ও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বরাদ্দের বিপরীতে খরচ হয়েছে প্রায় সব টাকা। সেই অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি টাকা গিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত অনিষ্পন্ন আবেদনগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সম্ভাব্য ৭৫৭ কোটি টাকার মধ্যে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা এ খাত থেকে ছাড় করা হয়।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করোনার আঘাতের কারণে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা বাবদ সুদ ব্যয় এবং দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থের পাশাপাশি ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকায় ভর্তুকি দিয়ে চাল বিক্রিতে সরকারের খরচ হয় আরো প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। এ অর্থও অপ্রত্যাশিত খাত থেকে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ দেয়া হবে তা-ও এ খাত থেকেই যাবে। বছর শেষে পুরো টাকাই ব্যয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই অর্থ যেন অপ্রয়োজনীয় বা অস্বচ্ছ খাতে ব্যয় না করা হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement