২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মাঠেই নষ্ট ২৫০ কোটি টাকার ফুল

মাঠেই নষ্ট ২৫০ কোটি টাকার ফুল - সংগৃহীত

করোনায় লকডাউনের কারণে সঙ্কটে রয়েছেন দেশের ফুল চাষিরা। ক্রেতা না থাকায় গত এক মাসে উৎপাদিত প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ফুল মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। চাষিরা জানিয়েছেন, ব্যবসা বন্ধ থাকায় দেশে প্রায় অর্ধ কোটি ফুলচাষি ও এর সাথে সম্পৃক্তরা ভয়াবহ সঙ্কটে পড়েছেন। করোনাভাইরাসের চেয়ে ক্ষুধার তীব্রতা মারাত্মক হওয়ায় এখন তাদের পক্ষে কাজ ছাড়া একটি দিনও ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন সঙ্কটে সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা দেশে প্রায় অর্ধ কোটি ফুলচাষি, ফুল পরিবহন শ্রমিক, যারা ফুল চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত তারা পড়েছে প্রচণ্ড বিপাকে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতা দিবস, চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে গত এক মাসে ফুলচাষিদের উৎপাদিত প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ফুল মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে। এ অপরিসীম ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ফুলচাষিদের জন্য কঠিন।

তিনি জানান, প্রধানত দুই কারণে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এক. করোনা সঙ্কটে লকডাউনের কারণে ফুলের চাহিদা শূন্যে নেমে এসেছে। দুই. ফুল চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। চাষিরা মাঠ তৈরি করেন ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে চাষবাসের লক্ষ্যে। এখন চাইলেই চাষিরা ফুল চাষের মাঠে অন্য ফসল চাষ করতে পারছেন না। এ ছাড়া এখনো বলা যাচ্ছে না আগামীতে সারা বিশ্বে ফুলের চাহিদা আগের মতো থাকবে কি না! কারণ মন্দার যে পূর্বাভাস বিজ্ঞজনরা দিচ্ছেন, তাতে ফুলচাষিদের জন্য এটা অশনিসঙ্কেতই বটে।

সম্প্রতি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফ্লাওয়ারস সোসাইটির পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, খাদ্য ঘাটতি পূরণ উল্লেখযোগ্য। সরকার যদি এ সঙ্কটে দেশের ফুলচাষিদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। তা না হলে খাত-সংশ্লিষ্টদের এ বিপদ থেকে সহজেই মুক্তি মিলবে না বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, দেশের ছয় হাজার হেক্টর জমিতে এখন ১১ ধরনের ফুল চাষ হচ্ছে। এতে করে দেশে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। এসব ফুল বিক্রির জন্য দেশজুড়ে ২০ হাজারের বেশি ছোট-বড় দোকান আছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই সাড়ে ৪০০ পাইকারি ও ৩০০র মতো খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছেন; যাদের মাধ্যমে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পয়লা ফালগুন, পয়লা বৈশাখের মতো বিশেষ দিবসে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ গোলাপ, গ্লাডিওলাস ২৫, রজনীগন্ধা ২০, জারবেরা ১০ এবং গাঁদা ও অন্যান্য ফুল ১০ শতাংশ। এ দিবসগুলোতে বাজারে ফুল ওঠানোর জন্য চাষিরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা কয়েকটি বড় দিবসেও বাজারে ফুল তুলতে পারেননি। সবশেষ লকডাউনের কারণে সব বন্ধ হয়ে পড়ায় এখন বাগানেই ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

একাধিক ফুল ব্যবসায়ী জানান, ফুলকে কেন্দ্র করেই তাদের সব কিছু। অথচ ফুল বিক্রি করতে না পারায় তা এখন গাছে শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফুল ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন। করোনা তাদের স্বপ্ন ভেঙ দিয়েছে। কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার ও শ্রমিকদের মজুরি দিয়ে দৈনিক খরচ পড়ে ৫ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু বর্তমানে তাদের আয় ঠেকেছে শূন্যের কোঠায়। আগে দৈনিক ৩০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হলেও বর্তমান অবস্থায় খরচ দিয়ে বাগান টিকিয়ে রাখাও অসম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement