রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা
- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১২
বিশাল অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামীতে এই ঘাটতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৯) খেলাপি ঋণের বিপরীতে সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে।
বর্তমান করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতির কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে বেড়ে যাবে প্রভিশন ঘাটতি, যার ফলে ব্যাংকিং খাতে একটি চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। অথচ সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রভিশন ঘাটতি সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের চেয়ে বেশি।
গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৯৬০ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এরপর সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ১৫৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৩ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ৮৭৮ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার কর্তৃক এককালীন ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়ায় খেলাপি ঋণ কমেছে। তবে আগামীতে ঋণ আদায়ের এই হার অব্যাহত রাখাটা কঠিন হতে পারে। কারণ করোনার কারণে দেশের প্রায় মাসখানেক ধরে সব কিছু লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে করে অর্থনীতিতে একটি স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর একটি প্রভাব পরবে খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়ায়। এক দিকে যেমন খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাবে, অন্য দিকে নতুন করে সৃষ্টি হবে অনেক খেলাপি ঋণ। আর এতে ব্যাংকের আয়ও কমে যাবে। যার ফলে বেড়ে যাবে ব্যাংকিখাতের প্রভিশন ঘাটতিও।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন বা সঞ্চিতি সংরক্ষণ।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমানের বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট প্রভিশন চাহিদা ৬১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা; এর বিপরীতে মোট সংরক্ষিত প্রভিশন ৫৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের চাহিদা ২৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সংরক্ষিত প্রভিশন আছে ১৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। ঘাটতি ৭হাজার ৮১০ কোটি টাকা ]
রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকের চাহিদা ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা; সংরক্ষিত প্রভিশন আছে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত প্রভিশন ১৪০ কোটি টাকা
বেসরকারি ব্যাংক (ইসলামিকসহ) চাহিদা ৩০ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সংরক্ষিত প্রভিশন আছে ৩০ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। উদ্বৃত্ত প্রভিশন ৮৭০ কোটি টাকা বিদেশী ব্যাংকের চাহিদা ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা; সংরক্ষিত প্রভিশন আছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত প্রভিশন ১৫০ কোটি টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা