দুধের কেজি ২০ টাকা!
- শামীম হাওলাদার
- ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০৬:৩৫
করোনাভাইরাস আতঙ্কে দেশের সব ধরনের শিশুখাদ্য, মিষ্টির দোকান ও সব বেকারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। তাদেরকে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে ২০ টাকা লিটার। কেরানীগঞ্জসহ রাজধানীর আশপাশে গত কয়েক দিন ধরেই এভাবে কম দামে দুধ কেনাবেচা চলছে। আর আবাসিক এলাকায় গিয়ে যারা দুধ বিক্রি করেন তারা সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা লিটার দাম পাচ্ছেন।
জানা গেছে, রাজধানী ছাড়াও কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুর, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অনেক ডেইরি ফার্ম। এসব ফার্মের দুধ বিশেষ করে বিভিন্ন খাদ্য কোম্পানি ও বেকারি ছাড়াও মিষ্টির দোকানে পাইকারি বিক্রি হতো। বেকারিতে প্রচুর পরিমাণে দুধ লাগত। তবে করোনার কারণে মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় রাজধানীর আশপাশের অভিজাত এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে দুধ। মিনি ট্রাকে করে ফার্ম থেকে দুধ এনে ৩০ থেকে ৪০ টাকা ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর তারা ফার্ম থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাইকারি কিনছেন দুধ। পথে পুলিশকে ‘কিছু’ দিতে হয় এ কারণে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তা না হলে ২০ টাকা কেজি বিক্রি করা যেত বলে জানান বিক্রমপুর থেকে দুধ আনা সদর আলী। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, খুব ভোরে ও বিকেলে দুই টাইম গাভী থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। তাই বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সকালে ও রাতে পিকআপভ্যান ও মিনি ট্রাক দিয়ে ড্রাম ভর্তি করে ওইসব এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কেরানীগঞ্জের মডেলটাউন ও হাসনাবাদের আবাসিক ছাড়াও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে নক করে দুধ বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে এখন ফ্ল্যাটগুলোতে বিক্রি করতে পারছি না। তাই বাড়িওয়ালাদের ফ্রি দেই। আর বাড়াটিয়াদের কাছে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি দুধ। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শ্যামপুর নিজের বাড়ি তার। বিক্রমপুরের বেশ কয়টি ফার্ম থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করি। তা ছাড়া তারও ফার্ম রয়েছে। যেখানে ৬০টি গাভী আছে। ওখান থেকে প্রতিদিন ছয় মণ দুধ আসে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ ও বিক্রমপুরের বিভিন্ন ফার্ম থেকে প্রতি মণ দুধ ৪০০ টাকা করে বিক্রি করছেন খামারিরা। এতে তাদের লোকসান দিতে হচ্ছে। খামারিরা জানান, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে খামার করেছেন তারা। এখন করোনা আতঙ্কে দুধ বিক্রি হচ্ছে না। যেখানে আগে প্রতি মণ ১৮ শ’ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। মুন্সীগঞ্জের শ্রীপুর থানা এলাকার বালশুড় গ্রামের মাশাআল্লা ডেইরি ফার্মের মালিক জুলহাস নয়া দিগন্তকে জানান, তার খামারে ৬০টি গাভী আছে। প্রতিদিন গড়ে ৭ মণ দুধ সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছি দুধ।
কেরানীগঞ্জের শরীফ অ্যাগ্রোর ম্যানেজার সোলেমান জানান, তাদের ফার্মে শতাধিক গাভী রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৪ মণ দুধ পাওয়া যায়। কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না। তবে এলাকার পরিচিতদের বাসায় দুধ পাঠানো হচ্ছে। তা ছাড়া গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হচ্ছে। তার পরও প্রায় ৮ থেকে ৯ মণ দুধ অবশিষ্ট থাকছে। এসব দুধ মৌসুমি দুধ ব্যবসায়ীদের কাছে মণপ্রতি ৪০০টাকা দরে বিক্রি করছি।
এ দিকে, রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, বছিলা, মিরপুর ও রামপুরাসহ বিভিন আবাসিক এলাকায় মিনি ট্রাক দিয়ে বাসা বাড়ির সামনে দুধ বিক্রি করতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি দুধ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুধ বিক্রেতা তুহিন জানান, গাজীপুরের বিসমিল্লাহ ফার্ম ছাড়াও বিভিন্ন ফার্ম থেকে এসব দুধ পাইকারি কেনা হয়েছে প্রতি মণ সাড়ে চার শ’ টাকা করে। আর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গিয়ে প্রতি কেজি ৪০ টাকা বিক্রি করছি। এতে বেশি একটা লাভ থাকে না। তা ছাড়া পথে খরচ আছে। গাড়ি ভাড়া ছাড়াও পুলিশকে ম্যানেজ করতে হয়। তাই লাভ তেমন একটা করতে হয় না বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা