২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিয়ে অফিস করছেন ব্যাংকাররা

- ছবি : সংগৃহীত

অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অফিস করছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে অফিসে যাওয়ার জন্য তাদের জন্য রাখা হয়নি কোনো পরিবহন ব্যবস্থা। করোনাভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী রোগ থেকে নিরাপদ রাখতে নেই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সব যান চলাচল বন্ধের মধ্যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করে অফিস করলেও রাখা হয়নি প্রণোদনা ব্যবস্থা। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা অফিস নির্দেশনা দিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। কিন্তু তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগী এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু চাকরি রক্ষার জন্য সবধরনের ঝুঁকি মাথায় রেখেই অফিস করতে হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল থেকে শুরু হয়েছে সীমিত আকারে ব্যাংকিং। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। হিসাব সম্পন্নসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়েছে দেড়টা পর্যন্ত। এরপর বেশির ভাগ ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাংকের বৈদেশিকবাণিজ্য লেনদেন সম্পন্ন করতে সাড়ে ৩টা বেজে গেছে।

স্বাভাবিক দিনের মতো গতকাল সীমিত ব্যাংকিং লেনদেনে তেমন কোনো গ্রাহক ছিল না। টাকা জমার চেয়ে উত্তোলন হয়েছে বেশি। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল ও এর অন্যান্য সামগ্রী আমদানির জন্য আমদানি ঋণপত্র স্থাপন (এলসি) করেছে কিছু কিছু ব্যাংক। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে শেষ হয়েছে গতকাল থেকে শুরু হওয়া সীমিত পর্যায়ের ব্যাংকিং।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের এক কর্মকর্তা গতকাল জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে মানবিক বোধ বলতে এখন আর কিছু নেই। শীর্ষ নির্বাহীদের কাছ থেকে শুধু চাকরি খাওয়ার হুমকি ও চোখ রাঙ্গানি দেখা ছাড়া অন্য কিছু নেই। মরো আর বাঁচো প্রধান কার্যালয়ের দেয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতেই হয়। এমনকি বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মতো মহামারী রোগের প্রাদুর্ভারের মধ্যেও জীবনের সবধরনের ঝুঁকি নিয়ে অফিস করতে হচ্ছে তাদের।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকে ছোট পর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ায় অফিস করতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু করোনাভাইরাসের মতো অতিসংবেদনশীল রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তাদের জন্য রাখা হয়নি। অথচ জনগণের সাথে সম্পৃক্ত পেশাগুলোর মধ্যে ব্যাংকিংপেশাও একটি। ডাক্তার যেখানে নিরাপত্তামূলক পোশাক না পেলে রোগীকে স্পর্শ করছে না সেখানে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার কাগজের নোট স্পর্শ করতে হচ্ছে।

নিজেদের ব্যবস্থাপনায় শুধু হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে টাকা লেনদেন করতে হচ্ছে, যা পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নয় বলে তারা মনে করেন। অথচ এ বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ নিজ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরাও ভাবছেন না। তারা শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়ে বাসায় অবস্থান করছেন।

এ দিকে সারা দেশব্যাপী লকডাউন চলছে। কোনো যান চলাচল নেই। এমনি অবস্থায় বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে পকেটের বাড়তি অর্থ খরচ করে অফিসে আসতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য বাড়তি কোনো যাতায়াত ভাতা বা প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে আক্ষেপ করে জানান, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থার মধ্যেই তাদের অফিস করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেকায়দায় আছেন নিচের স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের নিরাপত্তার কথা কেউ ভাবছেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তার হুকুম বাস্তবায়ন করতে হবে এটাই তাদের শেষ কথা। বস বাসায় বসেই নির্দেশনা দিচ্ছেন কিন্তু এ নির্দেশনা আমরা কতটুকু ঝুঁকির মধ্যে বাস্তবায়ন করছি তা দেখাতো দূরের কথা তারা অনুভবও করছেন না।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ঢিলেঢালা ব্যাংকিংয়ের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী ব্যাংক লেনদেনের শেষ সময়ে এসে এলসি খুলতে চাচ্ছেন। কিন্তু পরের দিন আসতে অনুরোধ করায় ওই কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেছেন। এর ফলে চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর এলসি খুলতে নির্দেশনা দিয়েছেন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকারদের সতর্কতার সাথে ব্যাংক লেনদেন করতে বলেছেন। এ ছাড়া গতকাল ভালোই লেনদেন হয়েছে। অনেকেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন। বিশেষ করে পাড়া মহল্লার ওষুধের দোকানদার ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা টাকা জমা দিয়েছেন। অনেকেই তাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য টাকা উত্তোলন করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement