২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সরকারের অর্থসঙ্কট

৫ সংস্থাকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা জমার নির্দেশ

- ছবি : সংগৃহীত

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় না হওয়ার কারণে সরকারের অর্থসঙ্কট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই সঙ্কট কিছুটা প্রশমনের জন্য সরকারি পাঁচটি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের উদ্বৃত্ত তহবিলের সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা যেন দ্রুত সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। এই জন্য তাদের সমস্ত হিসাব পত্র নিয়ে অর্থ বিভাগের সাথে বৈঠক করার জন্য আজ হাজির থাকতে বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা আইনের আওতায় এ নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

উল্লেখ্য, অর্থ সঙ্কটের কারণে সরকারকে ইতোমধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে প্রচুর ঋণ করতে হয়েছে। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ঋণের পরিমান ছিল ৫২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। অন্য দিকে, পুরো অর্থবছরের জন্য সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে পেট্রোবাংলার তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে চার হাজার কোটি টাকা ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার বিক্রয় বাবদ এক হাজার ৮৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকাসহ মোট ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে পেট্রোবাংলার শেয়ার বিক্রির অর্থ অনতিবিলম্বে জমা দিতে হবে।

এর আগে পেট্রোবাংলার তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থের প্রথম কিস্তি হিসেবে একহাজার কোটি টাকা গত ১০ মার্চ জমা দেয়া দিয়েছিল। পেট্রোবাংলার বাকি তিন হাজার কোটি টাকা এপ্রিল-জুন সময়ে প্রতি মাসে একহাজার কোটি টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে দুই হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এর অংশ হিসেবে ১৫ মার্চের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা জমা দিতে বলা হয়। বাকি একহাজার ৫০০ কোটি টাকা এপ্রিল-জুন সময়ে সমান চার কিস্তিতে জমা দিতে বলা হয়।

এ বিষয়টি নিয়ে আজ অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগিুলেটরি কমিশনের উদ্বৃত্ত তহবিলের হিসাব দাখিলের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিশনের উদ্বৃত্ত তহবিলের ৫০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কেমিকাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উদ্বৃত্ত তহবিলের ৬০০ কোটি টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা ২৫ মার্চের আগে জমা দিতে হবে। বাকি ৪৫০ কোটি টাকা এপ্রিল-জুন সময়ে প্রতিমাসে ১৫০ কোটি টাকা করে জমা দিতে পারবে।

বৈঠকে যোগ দিতে যেসব সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে তাদেরকে নিজ নিজ সংস্থার বিগত পাঁচ বছরের হিসাব বিবরণী, চলমান ও পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা (প্রকল্পসহ বছরভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব), বিগত তিন বছরের বাস্তবায়িত প্রকল্পের হিসাব তালিকা ও প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বছরের একটি আইন পাস করা হয়েছে।

‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা আইন, ২০২০’ এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সময়াবদ্ধ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলে জমাকৃত উদ্বৃত্ত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের নিমিত্ত বিধান প্রণয়নকল্পে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।’

আইনে বলা হয়েছে, ‘উদ্বৃত্ত অর্থ’-এর অর্থ তফসিলভুক্ত কোনো সংস্থার বার্ষিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক ব্যয় এবং বার্ষিক পরিচালনা ব্যয়ের ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থ।

আইন অনুযায়ী, তফসিলভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আপদকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ যাহা তাদের বার্ষিক পরিচালন ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে।

প্রণীত আইনে ৬১টি সংস্থাকে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড; বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড; বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল; উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর; বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি; পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি, বগুড়া; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ; বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন; বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন; পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড; রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো; বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ; বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন; বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন; পেট্রোবাংলা; বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন; ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন; বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন; বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন; বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন; বাংলাদেশ চা বোর্ড; বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম ওয়াসা; ঢাকা ওয়াসা; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড; পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড; চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ; মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন; বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড; বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন।


আরো সংবাদ



premium cement