০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ২ শাবান ১৪৪৬
`

নির্বাচিত সরকারের আগে মূল্যস্ফীতির পুরোপুরি সমাধান কঠিন : অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ - ছবি : সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার একটি বড় কারণ হিসেবে চাঁদাবাজির কথা বলছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, আগে যারা চাঁদাবাজি করত তাদের পাশাপাশি রাজনীতিতে যারা জায়গা দখলের চেষ্টায় আছে তাদের লোকজন চাঁদাবাজি করছে এবং স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য চাঁদাবাজরাও সক্রিয় আছে।

নির্বাচিত সরকার আসার আগে এটার পুরোপুরি সমাধান কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির।

সাক্ষাৎকারে তিনি বাজেট, ব্যাংক, আয়কর ও পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

প্রশ্ন : অন্তর্বর্তী সরকারের তো ছয় মাস হলো। আপনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দিলেন। এই ছয় মাসে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা যখন দায়িত্ব নিলাম অর্থনৈতিক খাতে অনেক ক্ষত ছিল, সমস্যাগুলো বহু ধরনের। প্রথমত ব্যাংকি খাতে যে অনিয়ম, পৃথিবীর কোনও দেশে ব্যাংকিং খাতে এ রকম দুরবস্থা হয়নি। অর্থ চুরি হলো, অসংখ্য ঋণখেলাপি। দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং নীয়মনীতি ভাঙা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অনিয়ম হয়েছে।

প্রশ্ন : গত ছয় মাসে একটি বড় ইস্যু বারবার সামনে এসেছে, তা হলো মূল্যস্ফীতি। গত তিন মাসেও মূল্যস্ফীতি ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি আপনারা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না কেন?

অর্থ উপদেষ্টা : মূল্যস্ফীতি এখানে লিগ্যাসি প্রবলেম। গত দুই-তিন বছরে ধরে মূল্যস্ফীতির এই রকম অবস্থা হয় নাই। দেয়ার আর লট অব মানি প্রিন্টটেন্ড, লট অব মানি ফ্লটিং অ্যারাউন্ড (প্রচুর আয়-উপার্জন হয়েছে, অনেকে টাকা উড়ে বেড়িয়েছে)। দ্য বিগ মেগা প্রজেক্টস, কোটি কোটি টাকার মেগা প্রজেক্টস। মেগা প্রজেক্টর সমস্যা হলো, রিটার্ন আর আউটফুট দ্রুত আসে না। ব্রিজ হলো, সরবরাহ চেইনে তো দ্রুত কোনো প্রভাব নাই। অ্যাট দ্য সেম টাইম, রেমিট্যান্স অনেকটা কমে গেল।

এর ফলে মূল্যস্ফীতি আমরা একেবারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, তা না। কিছুটা করেছি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি একটু বেড়েছে। কিন্তু নন-ফুডে আবার কিছুটা কমেছে। সামগ্রিকভাবে বেড়েছে। আমরা সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব।

সাপ্লাই চেইন ইজ ব্রোকেন। আর অনেক মিডল ম্যান। মহাস্থানগড় থেকে একটি ট্রাক ঢাকায় আসবে। পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাঁদাবাজির কারণে ভাড়া পড়ে ১২ হাজার টাকা। চাঁদাবাজি তো কমেনি।

প্রশ্ন : চাঁদাবাজি কমানোর দায়িত্ব তো আপনাদের মাঝেই পড়ে।

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জোর করে লোকজনকে ধরে…। এর আগে যেমন চাঁদাবাজি কম হতো। কারণ রাজনৈতিক সরকারের সুবিধা হলো, তার পলিটিক্যাল আর্মস ছিল। আমাদের তো সেরকম নেই। ইউ নো দ্য লিমিটিশেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, একজন দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

চাঁদাবাজিতে এখন তিনটি বড় দল জড়িত। এক, আগে যারা ছিল তারাও আছে… (আওয়ামী লীগের); দুই, যারা এখন পলিটিক্যালি ইমার্জিং…মাঠপর্যায়ে আছে, তারাও চাঁদাবাজি করছে; তিন, স্থানীয় জনগণ। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : আপনি যেটি বলছিলেন, পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজির ইস্যুটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছিলেন, রাজনৈতিক দল আসার আগ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসবে না? বা রাজনৈতিক দল কেন এটি নিয়ন্ত্রণে আনবে?

অর্থ উপদেষ্টা : রাজনৈতিক দলের তো ভোটের দিকে নজর থাকে। তারা ক্ষমতায় যেতে চায়। বড় রাজনৈতিক দল যাদের একেবারে মাঠ পর্যায়ে কর্মী আছে, তাদের তো নিয়ন্ত্রণ করা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটু কঠিন হয়ে পড়ছে।

দ্বিতীয়ত দুর্যোগের বিষয়টিও, কুমিল্লায় যেমন বন্যা হলো, শেরপুর-ময়মনসিংহে অতি বৃষ্টি হলো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমস্যার সম্মুখীন তো হয়েছি। তাই এখনও মুল্যস্ফীতি অনেক বেশি।

প্রশ্ন : সে সমস্যাটার কথা বলছেন, এটা কি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত সমাধান হবে না?

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, জুনের মধ্যে মুল্যস্ফীতি ৮ এর নিচে নিয়ে আসতে পারব। একেবারে পাঁচ-ছয়-চারে চলে যাওয়া অসম্ভব। পাঁচ তো আদর্শিক অবস্থান।

প্রশ্ন : এই দ্রব্যমূল্যের জন্য গত সরকারের আমলে বারবার সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়েছে। আপনি বলছিলেন, মিডল ম্যানের কথা। অলিগার্কের কথা বলা হয়েছে, তাদের হাতে সরবারহ চেইন চলে গিয়েছে। আপনিও অনেক সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। দেখা যাচ্ছে, আপনারা তো এই চেইনটা ভাঙতে পারছেন না। এর কারণটা কী?

অর্থ উপদেষ্টা : ভাঙতে চেষ্টা করছি। আমাদেরকে এখন সরকারি কয়েকটি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যারা কিনা পর্যাপ্ত নয়। টিসিবি কার্ড দিয়ে বা ডেপুটি কমিশনার, ইউএনও দিয়ে তো মার্কেট কনট্রোল করা যাচ্ছে না। তারা একবার গেল, পরে চলে এলো। মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে সচেতন হতে হবে।

আমি ডেটা সংগ্রহ করছি, মহাস্থানগড় থেকে শুরু করে কুমিল্লার কংশনগরে ফুলকপি কত টাকা বিক্রি হচ্ছে। ওখানে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। ১০ টাকা না, দুই-তিন টাকায়ও পাচ্ছে। ঢাকায় ২০ টাকায় কিনছেন। আমরা ওদিকে (প্রান্তিক পর্যায়) দামটা বাড়িয়ে দেই, কৃষক তো ভুগছে।

খুবই সত্য যে, পুলিশ আগের মতো সক্রিয় না। তাদেরকে নানা কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না, যেমন বাজারে যাও, ধরে নিয়ে আসো।

প্রশ্ন : আপনারা দায়িত্বে আসার আগ থেকে খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বিশাল একটা সমস্যা। একদিকে যেমন বিশাল বিশাল ঋণখেলাপি হয়ে রয়েছে, অন্যদিকে ছোট উদ্যোক্তারা বা উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে গিয়ে তারা পান না। কিন্তু এই যে খেলাপি ঋণ এটি উদ্ধারে আপনাদের খুব বেশি উদ্যোগ দেখা যায়নি, এখন পর্যন্ত।

অর্থ উপদেষ্টা : এটা রিয়েলি একটা প্রবলেম। খেলাপি ঋণের কারণে যেটা হয়েছে, যারা বড় বড় খেলাপি তারা পালিয়ে গেছে, ধরা যাচ্ছে না, ওদের অ্যাসেটও কিন্তু খুব বেশি না। এই যে কালকে একটা মিটিং করলাম, বেক্সিমকো, আমরা সবসহ খুঁজে পেয়েছি চার হাজার ৫০০ কত কোটি টাকার যেন সম্পদ।

তারা জনতা ব্যাংক থেকেই নিছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। আমি এখন ব্যাংককে প্রশ্ন করেছি, কোনো ধরনের মূল্যায়ন ছাড়া তাদেরকে কিভাবে এত টাকা দেয়া হলো?

যেসব ঋণ ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম, সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেগুলোকে হয়তো একপাশে রাখা হবে, বাকিগুলোর ব্যাপারে বিশেষ করে বড়গুলোর জন্য, যারা দেশে আছে তাদের জন্য বিশেষ একটি কমিটি করা হয়েছে।

ধরেন, তারা এখন একটি-দু’টি হাউজের জন্য খেলাপি, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে আমরা তোমাকে রিগুলেরটি ফোর-বি এনে দিবো। চারটি ইউনিট আছে, দু’টির জন্য সিআইবিতে তোমার ইস্যু হয়েছে, আমরা তখন বলছি যে তুমি ঋণ দিতে থাকো।

এজন্য এখন দরকার অর্থ, ফান্ড। এটি কোথা থেকে আসবে? ইতোমধ্যে আমরা ছয়টা ব্যাংককে ২২ হাজার কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দিয়েছি- কিছুটা আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে এবং কিছুটা ফান্ড দিতে।

তারপরে এখন আমরা কী করছি? ভালো কয়েকটি ব্যাংক (বেসরকারি) আছে, তাদেরকে ১ বিলিয়ন ডলারের গ্যারান্টি দেবে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।

প্রশ্ন : দুর্বল ব্যাংককে কি দেবে?

অর্থ উপদেষ্টা : না, তারা দেবে না। ওরা দেবে এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক এনএ...

প্রশ্ন : তাদের তো সমস্যা নেই।

অর্থ উপদেষ্টা : ওরা ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে পজেটিভ। তাদের যে বিশাল পোর্টফোলিও তার মধ্যে এখনো মোটামোটি কিছু কিছু পোর্টফোলি গুড ওয়ার্ক। আর অন্যান্য যে ছোট ছোট ব্যাংকগুলোর প্রবলেম আছে, সেগুলোকে আমরা কিছুটা ফান্ড দিচ্ছি। এটার মাধ্যমে আমরা কিছুটা ইউজ করছি আরকি।

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে ব্যাপকহারে অনুোমোদন দেয়া হয়েছিল, তার আগেও হয়েছে, এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। একইসাথে সমালোচনা হয়েছে টাকা ছাপিয়ে এই ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা নিয়ে। এখন ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে এক ধরনের সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ কাজটা আপনারা কেন করলেন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমাকে টাকা দিতেই হয়েছে, এটা কিন্তু প্রিন্ট না। এটা নিউট্রালাইজড হয়ে গেছে। দিজ ইজ নট প্রিন্ট, হার্ড ক্যাশ। দিজ ইস বেসিক্যালি ইন টার্মস অব ট্রেজারি বিলস অ্যান্ড ট্রেজারি বন্ড। এটি একেবারে শতভাগ ক্যাশ টাকা না, ১০০ টাকা ছাপালে ৫০০ টাকা হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে এই মুহূর্তে বড় ঋণ নিচ্ছে না। এর আগে কিন্তু ৬০ হাজার কোটি টাকার ওইটার বেশিভাগ কিন্তু সরকার নিয়েছিল। আর আমার ২২ হাজার কোটি সরকারকে দিইনি। বেসরকারি খাতে দিয়েছি। অ্যান্ড দেয়ার প্রডিউসিং সামথিং। সো দ্যাট ইজ নট কমপ্লিটলি পিউর মানি ক্রিয়েশন। যেটা আমরা বলি যে, স্ট্রেলাইজেশন, আমরা টাকা ছাপাচ্ছি, কিন্তু স্ট্রেলাইজ করছি। কিছু কিছু লিকুইডিটি আবার কনট্রোল করছি।

প্রশ্ন : মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে আরেকটু আসি। যেখানে কি না উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, জিনিসপত্রের দাম বেশ উচ্চ, এর মাঝখানে আপনারা কিছু পণ্যে নতুন করে ভ্যাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা কেন, এতে তো মানুষের খরচ বাড়বে।

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা যেগুলো ভ্যাট বসিয়েছি, কয়েকটি পণ্য ছাড়া বাকিগুলোতে ইমডিয়েটলি লোকের মূল্যস্ফীতি, বাজেট এসেছে, তা না।

প্রশ্ন : অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। যেমন ফলের দাম বেড়েছে, বেকারিতে বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে গেছে...

অর্থ উপদেষ্টা : ফর এক্সাম্পল, বাংলাদেশে প্রতি প্রাউন্ডের একটা বিস্কিটের দাম ২০০ টাকার উপরে হলে... ইউসুফ বেকারির বিস্কিট তো ২০০ টাকা দিয়ে কেনেন না, ৪০-৫০ টাকা দাম।

আমার আর্গুমেন্টটা হলো, বাংলাদেশ ইজ এ মোস্ট লিস্ট ট্যাক্সড কান্ট্রি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। এমনকি ভুটানের তুলনায়ও। যাস্ট রেট ইনকাম ট্যাক্স অনুযয়ী আমরা বাড়াবো না তা তো না।

এখনো তো বাকি আছে, এটা তো অনলি ভ্যাট, কেবল ১২ হাজার কোটি টাকার একটা ... টার্গেট তো কয়েক লাখ কোটি টাকার রেভিনিউ। তাই ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে আমরা রেশনালাইজড হতে চাই। পৃথিবীর কোনো দেশে ভ্যাট দুই দশমিক চার, পাঁচ, সাত, সাত দশমিক পাঁচ এ রকমও না।

বেশিভাগ দেশে ন্যূনতম ভ্যাট ১৫ শতাংশ। আমরা ভাবছিলাম, পাঁচ যেগুলো আছে ১০ করি, সাড়ে ১০ করি। অলরেডি কয়েকটা পণ্যে আছে। এজন্য আমরা কিছুটা রেশনালাইজড করতে চেয়েছি। আর আমি চেষ্টা করব, বাজেটে ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা কমাতে।

যেহেতু এটি সাধারণ মানুষের ওপর বেশি... পণ্যের ওপরে.. আমি অন্যদিকে জোর দেবো, ইনকাম ট্যাক্স আছে।

প্রশ্ন : আপনি আয়কর আদায়ের কথা বলছিলেন, বাংলাদেশে আয়কর আদায়ের বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, আয়কর দাতার সংখ্যা কম। আপনি বলছিলেন যে, আনুপাতিক হারে খুবই কম। কিন্তু অন্যদিকে আরেকটা বিষয় আছে। যারা নিয়মিত আয়কর দিচ্ছেন এবং সঠিকভাবে দিচ্ছেন, তাদের ওপর বছরের পর বছর বোঝাটা বেড়েছে, বিশেষ করে প্রভাবটা পড়ছে চাকরিজীবীদের উপরে।

যেমন গতবছরও সর্বোচ্চ আয়কর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানে দেখা যাচ্ছে, চাকরিজীবী আয়কর দাতাদের ওপর বোঝাটা বাড়ছে। কিন্তু আয়কর দাতার সংখ্যা বাড়ছে না। এইখানে আপনারা কোনো ব্যবস্থা নেবেন, সেটা কমানোর কোনো চিন্তা আছে নাকি আরো বাড়াবেন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা অবশ্যই ট্যাক্স নেটটা (করজাল) বাড়াব। প্রথমত, ট্যাক্স লিকেজ হয়, যারা ট্যাক্স দেয়ার কথা, যত টাকার দেয়ার কথা, তা দেয় না। কারণ, তারা টেবিলের নিচে সেটেল করে। এটা আমাদের কর সংগ্রহে বড় একটি দুর্বলতা। যতটা আমরা ধারণা করি, দেয়ার কথা, তারা ততটা দেয় না। আমরা এনবিআরকে ডিজিটাইলাইজড করার চেষ্টা করছি। এবার যেমন আমরা ১২ লাখ (অনলাইনে রিটার্ন) পেয়েছি।

ব্যক্তিগত আয়করটা আমরা অনলাইন করেছি, কোম্পানিটা এখনো করা হয়নি, এটা করতে আরো সময় লাগবে। কোম্পানিরটা জটিল। এটা করলে কারো কাছে আর যেতে হচ্ছে না, তাই এখানে দুর্নীতিটা কম হবে।

আরেকটা বিষয় স্পর্শকাতর, অনেক সময় এক্সেস ট্যাক্স দেয়, রির্টানটা পায় না। অন্য দেশে বেশি ট্যাক্স দিলে রিটার্ন আসে, বলা হয় আপনি এত টাকা বেশি দিয়েছেন। পরে এটা এডজাস্ট করা হয়।

আমাদের এখানে অথরাইজড ভ্যাটের বেলায় পায়, অন্যরা পায় না। এজন্যই তো ছোটখাটো মিষ্টির দোকান পর্যন্ত বলে, আমরা দেবো? রুটি পর্যন্ত আসার আগ পর্যন্ত আটা-ময়দায় দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমার কাছ থেকে সব আদায় করছে। সেটা হচ্ছে না, এটা একটা প্রবলেম।

অলরেডি কেবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে, করনীতি ও কর প্রশাসন আমি আলাদ করে দিচ্ছি। এনবিআর কেবল কর সংগ্রহ করবে। অ্যান্ড পলিসি ইজ ইউল বি ডান বাই ডিফারেন্ট বডি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

২০০৮ সালে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল, করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা হবে। কিন্তু এটা হয়নি। কারণ, এনবিআর অফিশিয়ালস এটিকে এলাউ করেনি। বলে কি, আমরা নিজরাই পলিসি করব...

নিজেরা যদি পলিসি করি, ওটা আমার মন মতো করে করব। একজনের ওপর ট্যাক্স চাপাবো, এটা এডজুডিকেট আমি করব, রাইট অর রং। সেটা তো হয় না। পলিসি যারা করবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

এটা করলে সুবিধা হবে কী তখন, ব্যবসায়ীরা বলছে, এনবিআরের কাছে আমার ধর্ণা দিতে হয়, টাক্স আরো কমান। এখন থেকে আপনারা আমাদেরকে পলিসি দিয়ে দিবেন, আমার সেটি ফলো করব। তখন কর সংগ্রহকারী আমাকে ডিসক্রিশিয়নারি কিছু করতে পারবে না। দিজ ইজ দ্য পলিসি, দিজ ইজ দ্য রেট।

প্রশ্ন : তাহলে আপনি বরছিলেন ট্যাক্স নেট অর্থাৎ করদাতার সংখ্যা বাড়াবেন।

অর্থ উপদেষ্টা : কর দাতার সংখ্যা বাড়াব। আর সিস্টেমটাও পরিবর্তন করছি। ডিজিটালাইজেশন প্লাস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ট্যাক্স কালেকশন উইল বি ডিফারেন্ট জব।

প্রশ্ন : তাতে নিশ্চিতভাবে কি বলা যায়, কর সংগ্রহের পরিমাণ বাড়বে?

অর্থ উপদেষ্টা: হ্যাঁ, বাড়বে।

প্রশ্ন : করদাতাদের থেকে নেয়া টাকার পরিমাণ বাড়বে, ২৫-৩০ শতাংশ থেকেও আপনারা বাড়ানোর চিন্তা করছেন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমি ওটা চিন্তা করছি না। ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর চিন্তা করছি।

প্রশ্ন : বাজেটের পরিচালন ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশটা যায় সরকারে পরিচালনার ক্ষেত্রে। সরকারের পেছনে এই অর্থটা ব্যয় হয়। এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, কথা হয়েছে। সেই জায়গায় কি আপনারা হাত দেবেন, সরকারের পরিচালনায় ব্যয় কিভাবে কমানো যায় বা আদৌ কমবে কি না।

অর্থ উপদেষ্টা : কিছু তো আমরা তো আমরা চেষ্টা করব। সরকারের পরিচালন ব্যয়ে বেতন-ভাতা দেয়া আছে। আমরা তো অলরেডি শুরু করেছি। নতুন গাড়ি কেনা, নতুল বিল্ডিং করা, বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার করা এখন তো টোটালি বন্ধ। নতুন গাড়ি আমরা দিচ্ছি যেমন, পুলিশের ৩০০ গাড়ি পুড়ে গেছে, আমরা তাদেরকে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অনুমতি দিচ্ছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, রাষ্ট্রদূতের জন্য আমাদের গাড়ি দরকার। আমি না বলেছি। আমরা রেশনালাইজড করবো। রিভাইসড বাজেটে অলরেডি আই এম টেকিং কেয়ার অব দ্যাট। পরবর্তী বাজেটে ফোকাস দেবো, ওখানে কত কমানো যায়।

দ্বিতীয়ত আমরা যেটা করতে চাচ্ছি, বড় বড় মেগা প্রকল্পের দিকে আমরা যাবো না। যেসব মেগা প্রকল্প পাইপলাইনে আছে আমরা সেগুলো তো করছি। যেমন মাতারবাড়ি করছি, মোংলারটা করছি।

আমরা এমন কতগুলো প্রকল্প নিবো যেগুলো স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অবকাঠামো, মার্কেট, অন্যান্য প্রোডাকশন ফেসিলিটিজ করে। স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে নজর দিচ্ছি।

প্রশ্ন : এক্ষেত্রে বলি, অগাস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে আপনারা যখন থেকে দায়িত্ব নিলেন, এরপর অনেক দাবি-দাওয়া এসেছে- বেতন-ভাতা, সরকারিকরণ, জাতীয়করণ। কিছু কিছু জায়গায় আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আপনারা করবেন। এটাতে অতিরিক্ত যে ব্যয়টা হবে, এটা কিভাবে সমাল দেবেন। এটা তো দীর্ঘকালীন একটা ব্যয় তৈরি হবে।

অর্থ উপদেষ্টা : রাজনৈতিক সরকার থাকতে ওরা এটা করেনি। এখন আমরা যেটা দিচ্ছি, এটা একেবারেই নয়, এসব লোক একেবারেই বঞ্চিত হয়েছে। পে কমিশন করে সামনে পে বাড়াবো, এসবে আমরা কিন্তু হাত দিচ্ছি না। এটা আমাদের কাজও না। রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা পে কমিশন করবে, এর আগে ২০১৫ সালে পে কমিশন হয়েছে।

প্রশ্ন : অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো নিয়ে এখন কিছু হচ্ছে না?

অর্থ উপদেষ্টা : (মাথা নেড়ে না সূচক ) কেবল স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ওভারটাইম, অন্যান্য কিছু বিষয় আমরা দেখবো, যদি সম্ভব হয়। এটি অবশ্যই ফ্রেমের মধ্যে, আমরা কোনো পে স্কেল পরিবর্তন করব না।

আমি কিন্তু সামাজিক খাতে বরাদ্ধ কমাব না। শিক্ষা, আইটি, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণে আমাদের কমিটমেন্ট আছে, এগুলোতে কিন্তু বরাদ্দ কমাব না। আমাদেরকে অর্থদাতারাও বলেছে, তোমরা অবকাঠামো করবে, আমাদের থেকে বাজেট সহায়তা নেবে, কিন্তু এইসব খাতে বরাদ্দ কমাবে না।

প্রশ্ন : বাজেটের প্রসঙ্গে আসি, প্রধান উপদেষ্টা একটি ধারণা দিয়েছেন, চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হতে পারে, সেক্ষেত্রে এই বছর আপনারা যে বাজেটটা ঘোষণা করবেন সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা কি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলবেন, তেমন কিছু কি চিন্তা করেছেন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা কিন্তু বাজেট এক বছরের জন্য করব। বাজেট ছয় মাসের হয় না। পরবর্তী সরকার এসে যদি বলে, ছয় মাসের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে, রিভাইস করা হবে, এটি তারা করতে পারে। আমরা যেমন রিভাইসড বাজেট করি।

জুনে বাজেট দেবো, আমি মার্চ বা এপ্রিল থেকে আলোচনা শুরু করব। প্রথমে আমি চেম্বার বডি ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করব। তারপর কিছু মানুষের সাথেও কথা বলব। চেম্বার বডি ক্ষুদ্র পর্যায়ের মানুষের স্বার্থ রিপ্রেজেন্ট করে না।

ডিফারেন্ট টাইপের বিজনেস বডির সাথে কথা বলতে চাই। মানে সব ধরনের মানুষের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি। স্পেশালি বিজনেস পিপল।

প্রশ্ন : বাজেট প্রক্রিয়া কী হবে, যেহেতু এখন সংসদ নেই। কিভাবে এটি করবেন?

অর্থ উপদেষ্টা : এর আগেও কেয়ারটেকার সরকারের সময়ে বাজেট হয়েছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে কথা বলবো, তারা যদি বলেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৃহৎ আকারে কথা বলবে, তখন আমরা শেয়ার করতে পারি, এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল।

আল্টিমেটলি ইট ইউল বি অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড বাজেট। আমরা ঘোষণা দেবো, তারপর বাস্তবায়ন করবো, যতদিন আছি।

প্রশ্ন : গত কয়েক বছর ধরে আমরা টাকার অবমূল্যায়ন দেখছি। এই বছরে কি এই ধারা অব্যাহত থাকবে?

অর্থ উপদেষ্টা : ফরেন রিজার্ভ অনেক স্থিতিশীল। এটি তো কমে গিয়ে অনেক নিচে নেমে আসছিল। আমি এসে দেখলাম, এলসি বাবদ প্রায় সাড়ে বিলিয়ন ডলারের দেনা রয়ে গেছে।

এটি এখন কমে গিয়ে ৫০০ মিলিয়নে চলে আসছে। এখন ডলারের রেটটা ১২০-১২৩ এর মধ্যে আছে, ক্রলিংয়ের মধ্যে আছে।

প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয়, এটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে? সামাল দিতে পারবেন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমরা আপাতত অবজার্ভ করছি। একেবারেই যদি ছেড়ে দিই, শ্রীলঙ্কায় যেমন ৪০০ টাকায় চলে গিয়েছিল, পাকিস্তানেও যেমনটা হয়েছিল। এটি তো আমরা এফোর্ট করতে পারব না। ক্রলিংয়ের যে করিডোর, ওটার মধ্যে থাকবে। মোটামুটি স্থিতিশীল থাকবে। আমরা একটু অভজার্ভ করি... ওই করিডোরের মধ্যে রাখা হবে আরকি।

প্রশ্ন : দেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যদি দেশের অভ্যন্তরের বিনিয়োগের কথা বলি, বিনিয়োগে একটি মন্থর গতি দেখা যাচ্ছে। একইসাথে যোগ হয়েছে, সুদের হার বৃদ্ধি‒ যার কথা ব্যবসায়ীরা বলেন। তার সাথে আইনশৃঙ্খলার কথা বলেন। এই বিষয়গুলোকে কীভাবে সামাল দেবেন?

অর্থ উপদেষ্টা : এটা আমাদের জন্যও মেজর কনসার্ন। ব্যবসাটাকে যদি আমরা উজ্জীবিত না করি, তাহলে আমরা ট্যাক্সও আদায় করতে পারবো না। কর্মসংস্থান… সেটাও…। মেইন ইস্যু হলো এখন সুদের হার বেশি। কিন্তু ইস্যু হচ্ছে দুর্নীতি কমানো... পরিবহন খরচ যদি কিছুটা কমে, ওয়েটিং খরচ যদি কমে... আগেও তো সুদের হার নয় শতাংশ ছিল, তখনও তো ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করতেন।

সবমিলিয়ে ব্যবসায় খরচ কমানো... ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের যদি আমরা ক্ষুদ্র ফান্ড না দিই তাহলে, তারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না।

ব্যবসায়ীদের জন্য মূল হলো আত্মবিশ্বাস, নীতির ধারাবাহিকতা; তখন ব্যবসাটা একটু ভালো হবে।

প্রশ্ন : দেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগের কথা বলি, সেখানে দেখা গেছে যে কমে গেছে। আপনাদের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম প্রান্তিকে ৭১ শতাংশ কমেছে বিদেশী বিনিয়োগ। এ নিয়ে আপনারা এখন কী করবেন?

অর্থ উপদেষ্টা : শুরুতে তো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ছিল। আর রেগুলেটরিতে বৈষম্য ও অনিশ্চিয়তা ছিল। কাকে কী দিবে।

উদাহারণ দেই, কোরিয়ান ইপিজেডের জমিরি বিষয়টি নিয়ে সমস্যা ছিল। ওরা এত বছর চেষ্টা করেছে, কিন্তু জমি দেবে কি দেবে না ১৫ বছর ধরে চললো। এখন জমি রেজিস্ট্রি হওয়ায় ওরা খুশি। আমরা এসে চেষ্টা করছি... জমি ও চুক্তির বিষয়গুলো সহজ করতে। তখন তো লোকজন আসবে।

প্রশ্ন : কবে নাগাদ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করছেন?

অর্থ উপদেষ্টা : আমি যেটা আশা করছি, রিভাইসড বাজেটটা করার পর বাজেট ডিসকাশন যখন শুরু হবে, তখন এ নিয়ে আমরা একটা ধারণা পাব। মার্চ-এপ্রিলের দিকে, তখন আমরা বলব এটি আমাদের পলিসি।

প্রশ্ন : পুঁজিবাজারে বারবার কারসাজির ফলে পুঁজিবাজারের ওপর থেকে মানুষের আস্থা চলে গেছে। সেই আস্থা আপনারা কিভাবে ফিরিয়ে আনবেন?

অর্থ উপদেষ্টা : পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন ইতোমধ্যে আগের কতগুলো অনিয়ম... জেড ক্যাটাগরির শেয়ার, ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়েছিল…ওদেরকে অ্যালাও-ই করা হয় নাই। উই আর গেটিং রিড অব অল দোজ। বিনিয়োগকারীরা দেখেছে, এই দাম বেড়েছে, হুট করে আবার দাম পড়ে যাচ্ছে।

এই যে সুকুক বন্ড- বেক্সিমকো নিয়েছে, আইসিবির মিউচুয়াল ফান্ড থেকে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে। এইগুলোর একটা প্রভাব তো শেয়ার বাজারে আসবে। তখনকার যে দুর্নীতিগুলো আছে, আমরা চেষ্টা করছি ওগুলো কমাতে।

আমরা নতুন আইপি আনারও চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন : বিনিয়োগকারীদের জন্য পুঁজিবাজার কি এখন নিরাপদ জায়গা?

অর্থ উপদেষ্টা : আমাদের ভালো শেয়ারের সংখ্যা। আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে, পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ভালো পরামর্শ পায় না। অর্থাৎ বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে।

প্রশ্ন : যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে এখন নতুন প্রশাসন এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতি সারা পৃথিবীতেই স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রভাব ফেলে। অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে একটি রক্ষণশীল নীতি ট্রাম্প প্রশাসন নিচ্ছে, আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশে এর কোনো প্রভাব পড়বে?

অর্থ উপদেষ্টা : খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। আমেরিকার যে নীতি আমাদের রফতানির ওপর ইতোমধ্যে আছে। এর থেকে ওর্স্ট তো আর হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের যে সহায়তা আমরা পাই, এটি সম্পূর্ণভাবে দ্বিপক্ষীয়।

আমার সাথে যেমন গ্যাপের কথা বলেছে; তারা বলেছে সহজে আমরা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যাব না। আমাদের যেতে হলে তো চায়না প্লাস ওয়ানে যেতে হবে। বাংলাদেশের মার্কেট নিয়ে তারা খুব আত্মবিশ্বাসী।

প্রশ্ন : জুলাই অভ্যুত্থানের একটি বড় বিষয় ছিল বৈষম্য দূরীকরণ। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সম্পদের অসমতা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, অল্প মানুষের হাতে বড় একটা সম্পদ। যার বড় একটি অংশ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে আপনি কতটা আশাবাদী?

অর্থ উপদেষ্টা : এটি করতেই হবে। ন্যারেটিভ হচ্ছে, আমাদের গ্রোথ অনেক হয়েছে। কিন্তু গ্রোথের সুফল তো লোকজন পায়নি। আমাদের আয়ের যে বৈষম্য... আয়ের চেয়ে বেশি খারাপ হলো সম্পদের বৈষম্য অনেক বেশি। একজনের ৫০টা ফ্ল্যাট-বাড়ি, দেশে-বিদেশে। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

আমরা একেবারে খুবই হাই গ্রোথ পাব, আট থেকে নয় পাব এটি না। আমরা প্রাক্কলন করেছি, পাঁচ দশমিক পাঁচ দুই শতাংশ পাব। এর ফলটা যেন সবাই পায়, সমভাবে বলছি না, তবে সুফলটা যেন কাছাকাছি আকারে যায়। এটলিস্ট আশা করি, তা কৃষকের যাক, নারী কর্মীদের কাছে যাক, ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে যাক।

আই ওয়ান্ট ওয়ান কাইন্ড অব ওয়েলফেয়ার অরিয়েন্টেডে স্টেট। লোকের জীবনযাত্রাটার মানটা কেবল খাবার-দাবারে না, স্বাস্থ্যের সুবিধাও যেন পায়। সবার যেন কোয়ালিটিফুল লাইফ চাই। আর এটা সম্ভব।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement