২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`

টাকার জন্য ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধি, অপরদিকে রাজস্ব খাতে খরচ কেন বাড়াচ্ছে সরকার?

- প্রতীকী ছবি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়েছে। এর মধ্যে ওষুধ, রেস্তোরাঁ, মোবাইলফোন সেবা, ইন্টারনেটের মতো খাতে বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহার করলেও ফলমূল, বিস্কুট, টুথপেস্ট, সাবান-শ্যাম্পু থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যে বাড়তি ভ্যাটের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন আগে থেকেই নানা কারণে চাপের মুখে তখন হঠাৎ করেই অর্থবছরের মাঝামাঝি ভ্যাট বাড়ানোর নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটা ব্যবসায়ী তো বটেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে চাপে থাকা সাধারণ মানুষের ওপরও চাপ বাড়াবে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ভ্যাট বাড়িয়ে টাকা সংগ্রহের জন্য সরকার কেন মরিয়া হয়ে উঠলো?

এছাড়া এর ফলে ব্যবসার ওপরও চাপ বাড়লে সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে না এমন আলোচনাও হচ্ছে।

ব্যয় বাড়াচ্ছে সরকার, বোঝা বাড়ছে নাগরিকদের
সরকার যে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে রাজস্ব আয় বাড়বে কমবেশি ১২ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রপরিচালনা জন্য এই টাকা দরকার সরকারের।

কিন্তু সরকার একদিকে ভ্যাট বাড়িয়ে টাকা আদায় করছে, অন্যদিকে নতুন নতুন ব্যয়ের খাত তৈরি করছে। অর্থাৎ টাকার সংকটে ব্যয় কমিয়ে টাকা বাঁচানোর পরিবর্তে সরকার উল্টো টাকা খরচ করছে।

সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে সাত হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

আবার বিদেশে ৮২টি বাংলাদেশী মিশনে বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের বৈদেশিক ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নিয়ম অনুযায়ী যেটা দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।

এরসাথে আবার যুক্ত হয়েছে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন। যেখানেও নতুন করে খরচ হবে সরকারের।

যখন টাকার সংকট তখন করের বোঝা বাড়িয়ে সরকারের এমন খরচের সমালোচনা হচ্ছে। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বিবিসিকে বলেন, বেতন বাড়ানোর মতো বাড়তি খরচ এই মুহূর্তে দরকার ছিল না।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ঠিক বোধগম্য না যে এই মুহূর্তে এত উচ্চ পরিমাণে মহার্ঘ্য ভাতা দেয়ার কী প্রয়োজন আছে! সরকার আরো কিছু জায়গায় (খরচ করার) নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলো তারা পিছিয়ে দিতে পারে।’

কিন্তু সরকার করেছে উল্টোটা। আর তাতে করের চাপ বেড়েছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ওপর।

টাকার জন্য সরকার কেন মরিয়া?
সরকার হন্যে হয়ে টাকা খুঁজছে, কারণ তার টাকার ঘাটতি আছে। কিন্তু সরকারের টাকার ঘাটতি কেন হলো?

এখানে দুটি কারণ আছে।

প্রথমটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি কোষাগারে টাকার যে ঘাটতি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।

দ্বিতীয় হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনা পরবর্তী দুই মাসে যে অস্থির পরিস্থিতি তাতে করে সরকারের রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের হিসাবে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর- এই পাঁচ মাসে সরকার যে রাজস্ব আয় করেছে, সেটা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কম। এই পাঁচ মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষমাত্রা ছিল তার তুলনায় আদায় কম হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বছরের বাকি সময়ে টাকার এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়। তাই সহজ সমাধান হিসেবে ভ্যাট বাড়ানোর পথে গেছে সরকার।

তবে এর বাইরেও আরেকটি কারণের কথা বলেছেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সেটা হচ্ছে বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ।

তিনি বলেন, ‘দেখবেন যে ভারতীয় কোম্পানি আদানি সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে তাদের ৮৩০ মিলিয়ন ডলারের পাওনা বাকি রয়েছে। কিন্তু এরকম পাওনাদি শুধু ওই বিদ্যুৎ কোম্পানি না, যারা আমাদের এখানে গ্যাস এক্সপ্লোরেশন করে তারা এবং বিদেশী টেলিকম কোম্পানি রয়েছে তাদেরও বিদেশে টাকা প্রেরণ করতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’

‘তো এগুলো হিসাব করা হলে দেখা যাবে কয়েক বিলিয়ন ডলার বকেয়া পাওনা রয়ে গেছে যেগুলোর জন্য ডলার দরকার। সুতরাং সে হিসেবে সরকারের আসলে খুব দ্রুতই অর্থের প্রয়োজন।’

সরকার কী বলছে?
একদিকে মহার্ঘ্য ভাতা বা বৈদেশিক ভাতার মতো খরচ বাড়ানো, অন্যদিকে ভ্যাট আরোপ করা নিয়ে যে সমালোচনা সরকার অবশ্য তাতে গুরুত্ব দিতে চায় না।

বুধবার অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, ভাতা বৃদ্ধির সাথে ভ্যাটের সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো সম্পর্ক নেই। মহার্ঘ্য ভাতা যদি আমরা দেই সেটা আলাদা হিসাব করবো।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্যই ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হলো লোয়েস্ট ট্যাক্স পেয়িং দেশ। এত কম ট্যাক্স দিয়ে আপনি কিভাবে চান যে এটা দিয়ে সবকিছু দেখভাল হবে? অনেকেই প্রশ্ন করে যে, রাজস্ব কেন বাড়ান না? বলেন, কোথায় বাড়াবো? আমরা আসলে (বাড়ানোর) ক্ষেত্রগুলো খুঁজছি। যেন এটা যৌক্তিক হয়, আমরা চেষ্টা করবো।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনীতির জন্যই রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে।

‘প্লিজ, ভ্যাট বাড়াবেন না’
বাংলাদেশে ভ্যাট এমন এক সময়ে বাড়ানো হয়েছে যখন দেশটিতে টানা তিন মাস ধরে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতি চলছে। পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতিও প্রায় ১৩ শতাংশ।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে যখন সাধারণ মানুষ চাপে, তখন দুরবস্থার কথা জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘এই সময়ে ভ্যাটের বোঝা’ বাড়লে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘মুখ থুবড়ে পড়বে’।

তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী যারা আছি তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের ব্যয় বেড়েছে, আমাদের গ্যাসের বিল বেড়েছে, ব্যাংকের লোন বেড়েছে। উপরন্তু আমাদের ওপর ভ্যাট-শুল্ক বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা সরকারকে বলছি যে প্লিজ! আমাদের ওপর ভ্যাট বাড়াবেন না। কারণ এই সময়ে ভ্যাটের বোঝাটা বাড়ালে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে।’

তিনি আরো বলেন, বিস্কুট, জুস, টমেটো কেচাপসহ বিভিন্ন খাতে সরকার ভ্যাট বাড়ালেও তারা এখনো দাম বাড়িয়ে সেটা ‘ভোক্তাদের ওপর চাপাননি’। এতে করে ভ্যাটের বোঝা কোম্পানির ওপরই পড়ছে। কিন্তু সরকার ভ্যাট না কমালে এই ক্ষতি কোম্পানি বেশিদিন নিতে পারবে না।

‘বিস্কুটের ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আমরা সরকারকে দিতাম। কিন্তু সরকার এখন ১৫ শতাংশ ভ্যাট চাচ্ছে। রাতারাতি, কোনো আলোচনা ছাড়াই। আপনি জানেন যে, দাম বাড়লে ভোগ কমে। আমাদের দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করে। কাল যদি কনজাম্পশন কমে যায়, তখন আমার উৎপাদন কমবে। কারণ আমার এতো বিস্কুটের চাহিদা না থাকলে উৎপাদনও থাকবে না। তখন ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। এই ২০ হাজার শ্রমিকের বেতন কে দেবে?’

একইভাবে টমেটো কেচাপ বা জুসের চাহিদা কমলে সেটার প্রভাব প্রান্তিক পর্যায়ে টমেটো এবং আম বিক্রেতাদের ওপর পড়তে পারে বলে জানান আহসান খান।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
মহিলাবিষয়ক অধিদফতরে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হবে সিদ্ধান্ত জনগণের : অধ্যাপক ইউনূস ট্রাম্প নিয়ে ভারতের উচ্ছ্বাসে কি ভাটা? সীমান্তে বিএসএফের বিশেষ সতর্কতা জারি পরিস্থিতি থমথমে সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে, ঊর্ধ্বমুখী চাল-মুরগির দাম মাওনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দেড় ঘণ্টা মাটিতে পড়েছিলেন আমিনুল পশ্চিমতীরে হামলা বাড়ানোর হুমকি ইসরাইলের লন্ডন ক্লিনিকের ছাড়পত্র পেয়েছেন খালেদা জিয়া দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে : ডা: শফিকুর রহমান বহিরাগত শ্রমিকদের তাণ্ডবে দেশ ছাড়ছেন ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টের চীনা নাগরিকরা গুজব ছড়ানো হচ্ছে আমরা ভালো আছি : আসিফ নজরুল

সকল