১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`

পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগকারী কমেছে ১২ লাখ

- ছবি - ইউএনবি

গত আট বছরে পুঁজিবাজার থেকে ১২ লাখ বিনিয়োগকারী কমেছে। ২০১৬ সাল থেকে পুঁজিবাজারে অর্থ লগ্নিকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট কমতে কমতে চলতি বছরে এসে অবস্থান করছে সর্বনিম্নে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকার পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৯ লাখ ২৯ হাজার ১৮৯টি, যা ২০২৪ সালে কমে হয়েছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫২। এতে করে আট বছরে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৭ জন বিনিয়োগকারী হারিয়েছে পুঁজিবাজার।

২০২৩ সালে বাজারে বিও অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ জন। সে হিসাবে এক বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ৯০ হাজারেও বেশি।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় তারা বাজারে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছেন। অনেকে মার্জিন ঋণের খপ্পরে ফোর্স সেলের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে বাজার ছেড়েছেন।

পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারী তারেক মাহমুদ বলেন, প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাচ্ছেন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী আসার মূল আগ্রহ আর্থিক লাভের জন্য। কিন্তু লাগাতার লোকসান হওয়ায় এখন আর কেউ ভরসা পাচ্ছেন না।

মার্জিন ঋণ প্রসঙ্গে আরেক বিনিয়োগকারী আলতাফ হোসেন বলেন, বাজারে আগ্রহ ছিল বলেই অনেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু দেদারসে শেয়ারের দাম কমতে থাকায় মার্জিন ঋণের খপ্পরে পড়েন তারা। একদিকে মাঝারি বা খারাপ মানের শেয়ারের দাম কমায় টান পড়ছে ঋণের টাকায়, অন্যদিকে ফোর্স সেল হওয়ায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভালো শেয়ারও। এতে করে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।

ব্রোকারেজ হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায়, নেই সেই চিরচেনা কর্মচাঞ্চল্য। শাখা পরিচালকরা বলেন, আগে শেয়ার বেচাকেনায় গমগম করত হাউসগুলো। শুধু হাউসে না, অনেক প্রবাসী বিনিয়োগকারীও মোবাইল ফোনে যুক্ত থাকতেন, বেচাকেনা করতেন শেয়ারের।

ব্রোকারেজ হাউসের করুণ দশা প্রসঙ্গে গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের শাখা ব্যবস্থাপক আসাদ লিটন বলেন, নতুন করে আর কেউ বিনিয়োগে আগ্রহ পাচ্ছেন না। সবাই চাচ্ছেন বাজার থেকে টাকা তুলে নিতে। অনেকে লোকসান দিয়ে হলেও বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। যারা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাজার ছাড়ছেন, তাদের আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে পুরো বাজার স্থায়ী ধসের মুখে পড়বে বলে শঙ্কা করেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের বাজার বিমুখতা প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত বিএসইসির টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীরা বাজারে লেনদেনে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। অনেক বিও অ্যাকাউন্ট বহুদিন ধরে অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। অনেকে আবার অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে বাজার থেকে চলে গেছেন। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ভরসা কমে গেছে।

বিনিয়োগকারীদের অনেকের অভিযোগ, কমিশন কারসাজিকারীদের গণহারে জরিমানা করায় বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। গত বছর আগস্টে নতুন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৭২০ কোটি টাকার ওপর জরিমানা করেছে। এর মধ্যে শুধু বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার কারসাজিতে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।

বাজারে বিএসইসির করা জরিমানার প্রভাব প্রসঙ্গে হেলাল বলেন, ‘এখন যা জরিমানা হচ্ছে তার বেশিরভাগই আগের কমিশনের। কারসাজির ৯৮ শতাংশ বিচার তারা করেননি, যা বর্তমান কমিশনকে এসে করতে হচ্ছে। অপরাধীদের সাজা না দিলে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরবে না।’

ডিএসইসির লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু বিও অ্যাকাউন্ট না গত এক বছরে ডিএসইসির প্রধান সূচক কমেছে এক হাজার পয়েন্টের বেশি। এর বাইরে ঢাকার বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement