০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সেপ্টেম্বরে এলো ৫০ বছরের তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স

- প্রতীকী ছবি

প্রবাসী বাংলাদেশীরা সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন মোট ২৪০ কোটি বা ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে কোনো একক মাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।

সাধারণত ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মতো উৎসবকে ঘিরে দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। কিন্তু এবার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। দেশে এই প্রথম বড় কোনো উৎসব ছাড়া এত বেশি পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাসে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। তখন ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর চলতি বছরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকার পতন ও তার দেশত্যাগের পর দেশের ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়িয়ে আসে। ওই সময়ে অনেক ব্যাংক গ্রাহকের আমানতের অর্থও চাহিদা অনুযায়ী ফেরত দিতে পারেনি। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর তাই ১১টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংকবিমুখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেমিট্যান্সপ্রবাহের চিত্র বলছে প্রবাসীরা সে পথে হাঁটেননি। বরং আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় তারা বেশি আন্তরিকতা দিয়ে বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হয়েছেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রেমিট্যান্সের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সেটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা। প্রবাসীরা দেশের গণ-অভ্যুত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন বাংলাদেশ এখন আমার, এ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রবাসীরা মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের উৎসবে শামিল হচ্ছেন।’

প্রবাসীদের এ উৎসাহ ধরে রাখতে হলে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশ যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তাহলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। দেশ আবারো বিপথে গেলে প্রবাসীরা হতাশ হবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রবাসীরা যদি তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পান, তাহলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকারপ্রধানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও পালিয়ে যান। এক বছর আগে তার নেয়া বেশকিছু সিদ্ধান্তের প্রভাবে দেশে বিনিময় হারজনিত অস্থিরতা তৈরি হয়। এ কারণে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। ওই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৩৩ কোটি ডলার, যা ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ভয়াবহ সে বিপর্যয় কাটিয়ে গত মাসে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে ১০৭ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮০ শতাংশেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ব্যাংকটি সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এনেছে ৪০ কোটি ২৭ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ কোটি ২১ লাখ ডলার এসেছে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসির মাধ্যমে। আর রেমিট্যান্স আহরণে তৃতীয় স্থানটি ছিল ট্রাস্ট ব্যাংকের। গত মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘প্রবাসীরা দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখতে উদগ্রীব ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ করে আসছে। প্রবাসীদের দৃঢ় আস্থার কারণে আমরা এখনো সে স্থান ধরে রাখতে পেরেছি। আশা করছি, আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরো বাড়বে।’

বাংলাদেশীদের জন্য সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার হলো সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি থেকেই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসত। কিন্তু গত দুই বছর বেশি প্রবাসী আয় আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সৌদি আরব থেকে আসছে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। করোনাভাইরাস-সৃষ্ট দুর্যোগের ওই বছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সে প্রবাহ কিছুটা বেড়ে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বাকি সময়েও এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
গণতন্ত্র রক্ষার জন্য জিয়া পরিবার অপরিহার্য : এস এম জিলানী শ্রমিক অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে : সচিব শিবচরে পুকু‌রে ডু‌বে স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু ঈদগাঁওতে থানা ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার ৪ আর্থিক খাতের দুর্বলতা মোকাবেলায় টাস্কফোর্সকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক : আইএমএফ দেড় কোটির বেশি স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়নি দক্ষিণ আমেরিকায় বিরল ‘অগ্নিবলয়’ তৈরি করবে সূর্যগ্রহণ বাগেরহাটে বিএনপি-ছাত্রদলের হামলা, ছাত্রশিবিরের ১৫ জন আহত আবারো বাড়ল ডিমের দাম মিজানুর রহমান আজহারীকে স্বাগত জানালেন আহমাদুল্লাহ-সাইফুল্লাহ বিশ্বসভায় প্রফেসর ইউনূসের ‘নতুন বাংলাদেশ’

সকল