২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তুরস্ক ভ্রমণের আবেগময় উপাখ্যান `তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে'

তুরস্ক ভ্রমণের আবেগময় উপাখ্যান `তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে' - ছবি : সংগৃহীত

`তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে' ভিন্নমাত্রার আবেগময় ভ্রমণ কাহিনি নিয়ে রচিত অসাধারণ একটি বই। বইটি লিখেছেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবু তাহের মেছবাহ। লেখক বর্তমান তুরস্কে গিয়েছিলেন অতীতের তুর্কিস্তানকে সন্ধান করতে, হারিয়ে যাওয়া উসমানি খেলাফতকে খুঁজে পেতে। ভ্রমণ শেষে দেশে এসে লিখেন এই ভ্রমণকাহিনী। নাম দেন ‘তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে’।

একটি ভ্রমণ কাহিনী তখনই মনোজ্ঞ হয় যখন তার মধ্যে পথ ভ্রমণ এবং স্থান দর্শনের অতিরিক্ত কিছু থাকে। পথ ভ্রমণ বা স্থান দর্শন সহজ গতানুগতিক বিবৃতি মাত্র। পাঠক সর্বদাই মানুষকে জানতে চায় এবং মানুষের অনুসন্ধিৎসা ও আকাঙ্খাকে অনুভব করতে চায়।

একটি দেশে যখন একজন ভ্রমণকারী উপস্থিত হয়, সে যে জীবনে অভ্যস্ত সেখানে অবিকল সেই জীবনটি পায় না। নতুন দেশের মানুষের আচরণের মধ্যে, কর্মকাণ্ডের মধ্যে, উৎসাহের মধ্যে, উৎসব এবং বেদনার মধ্যে সে নতুন তাৎপর্য খুঁজে পায়। এই তাৎপর্যকে অল্প সংখ্যক পর্যটকই যথার্থভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হন। কিন্তু আবু তাহের মেছবাহ তার ভ্রমণকাহিনীতে যথাযথভাবে এই তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। এখানেই তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে বইটির অনন্যতা।

লেখকের ভ্রমণকাহিনী এবং ইতিহাসের ধারাবিবরণী একসাথে হাত ধরে চলে। লেখক সাদা চোখে যা দেখেছেন তা সরাসরি সাদামাটা ভাষায় কালো কালির পর্দায় তুলে ধরেছেন। কোন কৃত্রিমতার আশ্রয় নেননি। কোন দুর্বলতাকে ‘প্রশ্রয়’ দেননি। এখানেই লেখক আবু তাহের মেছবাহ’র ভিন্নতা।

জীবনের প্রথম এই বইটি পড়েছি একবার, দুইবার, তিনবার এবং বিক্ষিপ্তভাবে আরো অনেক বার। গল্প উপন্যাস ছাড়া কোনো বই যে পাঠককে এতো প্রবলভাবে টানতে পারে এই বই না পড়লে কখনোই বুঝতাম না। বইতে আছে শব্দের প্রাচুর্য, ভাষার মাধুর্য এবং বর্ণনা শৈলীর চাতুর্য। এই ভ্রমণকাহিনীতে আছে বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য, বিষয়গৌরবের সৌকর্য এবং চিন্তা ভাবনার অভিনবত্ব ।

বইটিতে যেমন আছে অপূর্ব সাহিত্য- সৌন্দর্য তেমনি আছে তথ্য ও তত্ত্ব। লেখকের গদ্য বড় অদ্ভুত সুন্দর। সহজ-সাবলীল এবং সুখপাঠ্য। শক্তিমান লেখকের শক্তিশালী গদ্য পড়ে আমি মুগ্ধ। লেখকের বর্ণনাভঙ্গি উপমা এতটাই মনোমুগ্ধকর যে বিস্ময়ে বাক অবাক হতবাক হয়ে যেতে হয় ! শব্দচয়ন বাক্যগঠন এতোটাই সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী যে মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়তে হয়, পড়ে যেতে হয় ! মনে হয় প্রত্যেকটা শব্দ যেন একেকটা ফুল।

প্রত্যেকটা বাক্য ফুলমালা। আর বইটি যেন ফুলের সম্ভার।
লেখক হলেন দরদী মালি।

আর প্রখ্যাত প্রচ্ছদশিল্পী বশির মেছবাহের প্রচ্ছদসজ্জায় বইটি পেয়েছে নতুন মাত্রা ।

বইটি পড়া অবস্থায় কখনো নিজেকে আবিষ্কার করেছি যে- আমি কাঁদছি ! কেঁদে কেঁদে পড়ছি ! পড়তে পড়তে কাঁদছি ! কখনো অনুতাপের, কখনো কষ্টের। কখনো আবেগের, কখনো বঞ্চনার।

আবার কখনো হাসছি। হাসতে হাসতে পড়ছি।পড়তে পড়তে হাসছি। কখনো প্রাপ্তির, কখনো তৃপ্তির। কখনো সৌভাগ্যের, কখনো আনন্দের।

আর হ্যাঁ, আমিও ছিলাম লেখকের সাথে। লেখকের সঙ্গী হয়ে আমি গিয়েছি আয়া সুফিয়ায়। ভ্রমণ করেছি তুরস্কের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। দেখেছি উসমানি সুলতানদের স্থাপত্যশিল্প। হাজির হয়েছি আবু আইয়ুব আনসারি এবং সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহের মাজার প্রাঙ্গণে। আমি তার সাথে ছিলাম এখানে ওখানে সবখানে। তিনি যেখানে থেমেছেন, আমি সেখানে থেমেছি। তিনি যেখানে ইতিহাসের পাঠদান করেছেন, সেখানে আমি শুনেছি । তিনি ঐতিহাসিক স্থান দেখেছেন, আমাকে দেখেয়িছেন, শুনিয়েছেন স্থান কেন্দ্রীক ইতিহাসের চড়াই উৎরায়ের ইতিহাসের লাল দাস্তান। ফাঁকে তুলে ধরেছেন ইতিহাসের শিক্ষা। দিয়েছেন দীক্ষা। লাভ করছি নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। ভাবে অনুভবে ভরে ওঠেছে হৃদয়পাতা।

লেখক, প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement