বন্যায় ২ জনের প্রাণহানি

ভারত থেকে আসা ঢলে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। মারা গেছেন দুইজন।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সচিবালয়ে চলমান বন্যা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ন্যার কারণে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত দুর্গতদের এক কোটি ৮২ লাখ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

পানিবন্দী বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় দিতে মোট ১ হাজার ৫৩৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মোট ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন লোক এবং ৭ হাজার ৪৫৯টি পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব।

এ সময় জানানো হয়, সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনীতে পাঠানো হয়েছে। একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী যানও দুর্গত এলাকাগুলোতে কাজ করছে। সেইসাথে, বিজিবিসহ অন্যান্যরা নৌযান নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ফেনীতে একজন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন। আট জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে মোট ৪৪৪টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিক্যাল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়েও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, যার নম্বর হলো- ০১৩১৮২৩৪৫৬০।

ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ নাজমুল আবেদীন বলেন, বন্যা দুর্গত আট জেলায় মোট ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫০ টন। এছাড়া শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১১ হাজার পিস।

তিনি বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের মনু, খোয়াই, ধলাই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তীতে উন্নতি হতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য তুলে ধরে আলী রেজা আরো বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তীতে উন্নতি হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি, ইউএনবি