২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল

উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল - ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড়টি। সোমবার সারাদিনে ঘূর্ণিঝড়ের শেষ অংশটুকু সাগর থেকে উপকূলে উঠে যেতে পারে।

রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যার পর থেকেই তীব্র হাওয়ার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের পানি উঠতে শুরু করে।

ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ স্থলভাগে উঠার সময় উপকূলীয় এলাকা ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমুহে আট থেকে ১২ ফুট উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাস হয়েছে।

কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতির কথা সংবাদদাতা জানিয়েছেন। তবে ঝড়ের প্রভাব শেষ হলে ক্ষয়ক্ষতির সম্পুর্ণ চিত্র ফুটে উঠবে।

মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করে আবহাওয়া অফিস। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সাবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়ার মডেল পুর্বাভাস। এটি জানিয়েছেন কানাডা প্রবাসী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।

কিন্তু বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পেছনের অর্ধেক অংশ রোববার রাত ১২টার পর থেকে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করবে এবং সোমবার সকাল ৬টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শেষ করতে পারে।

রোববার বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস রেমালের ১৩ নম্বর বুলেটিনে জানিয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি রোববার বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমদ্র বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত ছিল। এটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গতকালই সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টিায় মংলাবন্দরের নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ড (সাগর দ্বীপ) থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করেছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রমের পর নিম্নভাগ অতিক্রম করতে থাকে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের গতিরোববার সকাল ৯টার পর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সামনে এগিয়ে যাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১৭ কিলোমিটার এবং এটা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল।

এটা হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলের যত কাছে এসেছে পানির তাপমাত্রা তত বেশি বেড়েছে। পানির তাপমাত্রা কিছুটা বেশি পাওয়ায় রোববার সকাল ৯টার পর থেকে ঘুর্ণিঝড়টির গতি কিছুটা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি যখন সাগর থেকে উপকূলে উঠার আগ পর্যন্ত খুলনা এলাকার নদীগুলোতে জোয়ার থাকায় কারণেও রেমালের গতি আরো কিছুটা বেড়েছিল বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।

মোস্তফা কামাল বলেন, ঘুর্ণিঝড়টির ৪০ থেকে ৬০ ভাগের বেশি অংশ বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাচ্ছে। বাকি অংশটা পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে। সকাল ৯টার দিকে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরগুনা জেলার উপর দিয়ে স্থলভাগে উঠছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ১৩ নম্বর বুলেটিনে জানিয়েছে, পায়রা, মংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এদের অদুরবর্তী দ্বীপ ও চরসমুহকেও ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম, কক্সাবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর এবং এদের অদুরবর্তী দ্বীপ ও চরসমুহকেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নদী বন্তরসমুহকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে।

এছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও এদের অদুরবর্তী দ্বীপ ও চরসমুহের নিম্সাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে আট থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সাবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধ্বস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমুহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘুর্ণিঝড়কে যেভাবে সংজ্ঞায়িত লাভ
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে তখন তাকে কেবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলে। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে গেলে তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয় তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তখন তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলে ধরা করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement