বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমদানি নির্ভরতার কারণেই কি এতো লোডশেডিং?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুন ২০২৩, ২১:৫৯
বাংলাদেশে তীব্র গরম বাড়ার সাথে সাথে লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাহিদার সাথে সরবরাহের বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ সেই তালিকায় যোগ হয়েছে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লার অভাবে সোমবার থেকে এই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে।
বিদ্যুতের এই সংকটের জন্য আমদানি করা জ্বালানির ওপর অতি নির্ভরশীলতাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ডলার সংকটের কারণে এসব কেন্দ্রের জ্বালানি আনতে না পারায় সেগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে আর বিদ্যুতের সংকট তৈরি হয়েছে।
তবে কর্মকর্তারা আশা করছেন, আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে আর নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে এবং তখন এই সংকট থাকবে না।
এরকম পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনে কারণ কী?
কাগজপত্রে বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ২৫,৭০০ মেগাওয়াট বলা হলেও বাস্তবে ১৫ হাজারের সামান্য বেশি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময় যে ক্ষমতা থাকে, সেটা ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একেকটা কেন্দ্রের সক্ষমতা কমতে থাকে।
এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, যার মধ্যে প্রাকৃতিক এবং আমদানি করা এলএনজি রয়েছে। কয়লাভিত্তিক এবং তেল চালিত যেসব কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগও আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ এসব কেন্দ্রের পুরো জ্বালানি বিদেশে থেকে আমদানি করে আনতে হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’এটা তো কাকতালীয়ভাবে হয়নি। চিন্তাভাবনা করেই আমদানি নির্ভর জ্বালানির নীতি নেয়া হয়েছে। তখন ভাবা হয়েছিল, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন বলা হয়েছিল যে, সেই অর্থনীতি এজন্য সহায়ক হবে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা কারো চিন্তায় ছিল না।‘’
তিনি জানান, পরিবেশের কথা ভেবে কয়লা উত্তোলন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। আর ১৯৯৯ সালের পর থেকে খুব বেশি অনুসন্ধান করা হয়নি। নানাবিধ কারণে কোন সরকারই সেটা করতে পারেনি। এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞাও ছিল যে, বিদেশী কেউ এসে অনুসন্ধান করতে পারবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫১.০৫ শতাংশ গ্যাস নির্ভর, ফার্নেস অয়েলের ওপর নির্ভরশীল ২৮.১৫ শতাংশ, ডিজেল চালিত কেন্দ্র থেকে ৫.৭৪ শতাংশ আর কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৭.৮৬ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে।
বেসরকারি উদ্যোগে যে ৯,৯৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে, এগুলো পুরোপুরি বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে।
অধ্যাপক ম তামিম বলছেন, ‘’এরপর যখন ২০০৭, ২০০৮ সালের দিকে বিদ্যুতের প্রচণ্ড ঘাটতি দেখা গেল, তখন জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত সমাধানের জন্য তেল ভিত্তিক আর এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নীতি নেয়া হলো। কারণ দেশে অনুসন্ধান করে উত্তোলনের চেয়ে আমদানি করে আনা সহজ আর দ্রুত করা যায়। এভাবে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো আমদানি করা জ্বালানির দিকে ঝুঁকে যায়।‘’
‘’আমাদের জ্বালানির খুব বেশি মজুদ না থাকায় একসময় আমদানির দিকে যেতেই হতো, কিন্তু পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধানের চেষ্টাটাও থাকা দরকার ছিল। সেটাই করা হয়নি, বরং অবহেলাই করা হয়েছে,’’ তিনি বলছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস, তেল বা কয়লার দাম বাড়া বা কমার প্রভাব পড়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে। বিশেষ করে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকেই বিশ্ব বাজারে তেল, এলএনজি এবং কয়লার দাম বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে শুরুতে যেভাবে হিসাব করা হয়েছিল, সেই তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ অনেক বেড়ে যায়।
পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে এবং বাড়তি দামের কারণে বিশ্ব বাজার থেকে ডিজেল, এলএনজি এবং কয়লা কিনতেও হিমশিম খেতে শুরু করে বাংলাদেশের সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস এবং কয়লার দাম কম ছিল। এই কারণে মনে করা হয়েছিল, দেশে গ্যাস বা কয়লা উত্তোলন করতে যে খরচ হবে, তার তুলনায় আমদানি করলে খুব একটা পার্থক্য তৈরি হবে না। এসব কারণে দেশের ভেতর জ্বালানির উৎস খোজার পরিবর্তে আমদানি নির্ভর কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি নীতি তৈরি করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ২০১৬ সালে যে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, সেটা বিশ্লেষণ করলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের জ্বালানির ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হবে।
বাংলাদেশের ২০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও তেলের কেন্দ্রগুলো না চালানোয় প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা যায়।
তেল-চালিত কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে
বাংলাদেশে ডিজেল চালিত ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে ১২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। এর বাইরে ৬৪টি কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয় ফার্নেস অয়েল, যেখান থেকে বিদ্যুৎ আসার কথা ৬,৩২৯ মেগাওয়াট। এই দুটি মিলিয়ে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৪ শতাংশ।
এসব কেন্দ্র পুরোপুরি আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে। দেশে কিছু ফার্নেস অয়েল পাওয়া গেলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
মূলত গ্যাস সংকট তৈরি হওয়ার পর বিদ্যুতের দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে এসব কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারেও তেলের দাম কম ছিল।
কিন্তু ডলারের ওপর চাপ কমাতে ২০২২ সালের মাঝামাঝি দেশের ডিজেল-চালিত সব কেন্দ্র এবং ফার্নেস অয়েল-চালিত কিছু কেন্দ্র বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয় সরকার। কারণ এসব কেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহের দায়িত্বও ছিল সরকারের ওপর।
ফলে সেখানে প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়। বসিয়ে রাখলেও এসব কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই দিতে হচ্ছে সরকারকে।
এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে গত ২০২০-২১ অর্থবছরেই ৩৭টি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বছরের অধিকাংশ সময় অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১৩,০০০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবিকে।
দেশীয় গ্যাস নিয়েও টানাটানি
সেই সাথে সংকটের মুখে পড়েছে গ্যাস চালিত কেন্দ্রগুলোও। যদিও বর্তমান সংকটের সময় এখনো এসব কেন্দ্র থেকেই বেশি বিদ্যুৎ আসছে।
বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস চালিত ৫৭টি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ১১,৪৭৬ মেগাওয়াট। কিন্তু ঠিকমতো গ্যাস না পাওয়ায় এসব কেন্দ্র পুরো সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না।
দেশে যেখানে গ্যাসের গড় উৎপাদন হচ্ছে ২৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চাহিদাই রয়েছে ২১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে সেখানেও সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। দেশে শিল্প কারখানা, আবাসিক মিলে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। বাকিটা প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসাবে আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণের চেষ্টা করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া দামের কারণে এলএনজি আমদানিতেও ভাটা পড়েছে। সরকার স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।
ফলে গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও সংকটের মধ্যে পড়েছে। গ্যাসের অভাবে অনেক কেন্দ্রে অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলছেন, ‘’বাংলাদেশে ২০০৫ সাল থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে গেলেও সেই ধারা ধরে রাখার কোন চেষ্টা করা হয়নি। বাপেক্সের বিনিয়োগে যে আর্থিক ঝুঁকি নেয়ার দরকার ছিল, হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শূন্য হাতে ফেরার যে ঝুঁকি ছিল, সেটা সরকারই নিতে চায়নি। ফলে দেশে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়নি, বরং আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো হয়েছে। ''
গ্যাস নির্ভর নতুন যে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সেসব কেন্দ্রের কাজ এখন শেষের দিকে রয়েছে। এসব কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। কিন্তু সেই গ্যাস তারা কোথা থেকে দেবে, তা পরিষ্কার নয়। সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে এসব কেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।
বাংলাদেশের সরকার যে আরো ১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে অথবা যে নয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে, এর সবগুলোই জ্বালানি হিসাবে এলএনজি বা আমদানি করা গ্যাসের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব বাজারে এলএনজির এরকম চড়া দাম থাকলে এবং বাংলাদেশে ডলার সংকটের সমাধান না হলে এসব কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
দেশীয় কয়লার বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাত্র একটি
বাংলাদেশে বর্তমানে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়া খনিতে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে সেখানকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চলে। এটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৫২৫ মেগাওয়াট।
বাকি যে দুইটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে, তার একটি পায়রা, অন্যটি রামপাল। এই দুটি কেন্দ্রই আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে।
এসব কেন্দ্র চালুর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়েছিল যে, এগুলো পুরোপুরি চালু হলে তেল ভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর ওপর চাপ কমে যাবে এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি অনেকটা মিটবে।
কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এসব কেন্দ্রের জ্বালানিও ঠিকমতো কিনতে পারছে না বাংলাদেশের সরকার। কয়লা সংকটের কারণে এই মাসের শুরুতেই পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সারা দেশে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এর আগে কয়লা সংকটে ২৩দিন বন্ধ থাকার পর ১৬ই মে থেকে আবার একটি ইউনিট চালু হয়েছে। এই কেন্দ্রের মোট ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর পুরোটাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার ওপরে নির্ভরশীল।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল, চট্টগ্রামে, মাতারবাড়ি, পটুয়াখালী এবং ঢাকায় যেসব কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে, এসব কেন্দ্রের জ্বালানিও আমদানি করতে হবে। কিন্তু ডলার সংকট না মিটলে সেখানেও ঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলছেন, ''দেশের ভেতর থেকে কয়লা উত্তোলনের যে পরিবেশগত ঝুঁকি ছিল, সেটা রাজনৈতিক কারণে সরকার নিতে চায়নি। ফলে আমদানি করা কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে এখনো কয়লার দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে। কিন্তু এটার দাম বাড়া বা কমার কারণে জ্বালানি খাতের ওপরে তো অবশ্যই প্রভাব পড়বে।''
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বাংলাদেশের একমাত্র পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে এই বছরের ডিসেম্বর নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা প্রকাশ করা হলেও সেটি সম্ভব হবে না বলেই সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
কারণ এখনো এখানকার কাজ যেমন শেষ হয়নি, তেমনি বিদ্যুৎ সরবরাহের সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে না।
কিন্তু এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে তৈরি করা এই কেন্দ্রের পুরো জ্বালানিই রাশিয়া থেকে আমদানি করে আনতে হবে। এখান থেকে সর্বোচ্চ ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
বিকল্প কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার সংকট থেকে সরকারের নতুন করে বিবেচনা করার সময় এসেছে যে, জ্বালানির জন্য আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলছেন, ‘’সরকারের উচিত সৌর বিদ্যুতের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তারা এদিকে গুরুত্ব বাড়িয়েছে, কিন্তু সেটা পুরোপুরি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া দরকার।‘’
‘’সেই সাথে গ্যাস অনুসন্ধান আরো জোরদার করা দরকার। কিভাবে সেটা করা যেতে পারে, দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে,’’ তিনি বলছেন।
কর্মকর্তারাও বলছেন, এই সংকটের পর তারাও ভাবতে শুরু করেছেন যে, কিভাবে দেশের ভেতর থেকে জ্বালানির উৎস খুঁজে বের করা যায়।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’জ্বালানি নিরাপত্তার একটা পূর্বশর্ত হল, অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিচ্ছি। আমরা সোলারের ওপর গুরুত্ব বাড়াচ্ছি, নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করছি। আমদানির পাশাপাশি নিজস্ব সম্পদও কাজে লাগাচ্ছি।‘’
বর্তমান সংকটের বিষয়ে তিনি বলছেন পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হলেও অন্য কয়েকটি উৎস থেকে বিদ্যুৎ যোগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে বুধবার পেট্রোবাংলাসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে একটি বৈঠক হবে।
১৩ জুন থেকে এস আলমের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হবে, ২২ জুন থেকে পায়রা আবার উৎপাদনে যাবে, আদানি পাওয়ার থেকে ডাবল ইউনিটের ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে শুরু করবে। এসব কারণে এই মাসের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা