২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সতর্কতা
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে। - ফাইল ছবি

দেশে এ বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, এর মধ্যে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৫৭১ জন রোগী আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৪৯১ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ১১ জন।

‘গত কয়েক বছরের প্রবণতা দেখে এটা হচ্ছে আমাদের একটা অনুমান, যা ভুল হলে আমরা খুব খুশি হব যে শনাক্তের সংখ্যা কম হলো। কিন্তু আপনাকে তো প্রস্তুতিটা রাখতেই হবে’- স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা: মো: নাজমুল ইসলাম জানাচ্ছিলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘিরে একটু আগেভাগেই প্রস্তুতি নেয়ার কথা।

সাধারণত বর্ষাকালেই ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বিস্তার হয়ে থাকে। আর ডেঙ্গুর ‘পিক’ বা সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়ে থাকে জুলাই মাসের পর থেকে।

কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনে এখন বর্ষার সময়কাল অনুমান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সঠিক সময় মশা নিয়ন্ত্রণের।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এবারে এডিস মশার ঘনত্বটাও একটু বেশি দেখা যাচ্ছে।

‘আমরা এখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে এডিস মশার যে ঘনত্বটা পাচ্ছি, তা একটু বেশি। আবার গত তিন দিনে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়েছে, সেই ট্রেন্ডটাও বেশির দিকে। এজন্য আমরা সতর্কবার্তা দিচ্ছি যে এডিস মশা যেহেতু বেশি, ডেঙ্গুও বেশি হতে পারে।’

চলতি মে মাসের প্রথম দুই দিনে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে আসে যথাক্রমে ২৪ ও ২৭ জন রোগী। পরের দুই দিনে অবশ্য সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ১৬ ও ৯ জনে।

তবে এটি শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। আর সরকারি হিসাবে সবটা আসে না বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, বিগত কয়েক বছরে ডেঙ্গু সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে ২০১৯ সালে। সে বছর ১ লাখের উপর লোক শনাক্ত হয়। আর সবচেয়ে বেশি মারা যায় ২০২২ সালে - মোট ২৮১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম অবশ্য মনে করেন, এখন মানুষের সচেতনতা বেড়েছে আর সে কারণে শনাক্তের সংখ্যাও বাড়ছে।

‘একটা হচ্ছে মানুষ সচেতন হয়েছে, তারা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে, ল্যাবে টেস্ট করাচ্ছে। ফলে সংখ্যাও বাড়ছে। আরেকটা অংশ হয়তো খেয়াল করেনি, নিম্ন আয়ের মানুষ অথবা তার আশপাশে সেই সুবিধাটা নিতে আগ্রহী ছিল না, জ্বর হয়ে গেছে ২-৩ দিন, ফলে সেটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

তবে পরিস্থিতি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তাদের জন্য - যারা দ্বিতীয় বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ডেঙ্গুর মোট চারটি ভ্যারিয়েন্ট আছে। একই ভ্যারিয়েন্টে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে সেটি শরীরে খুব একটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে না।

কিন্তু যদি অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয় বার কাউকে আক্রান্ত করে তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়াটা জরুরি - বলছেন চিকিৎসকরা।

‘কমিউনিটিতে চারটা ভ্যারিয়েন্টই আছে। এখন টু, থ্রি বা ফোর যদি আমাকে কামড়ায়, সেটা দিয়ে যদি আমার জ্বর হয় তাহলে সেটা মারাত্মক হবে। সেটা কিন্তু সাধারণ ডেঙ্গুর মতো হবে না। এখন গত দুই দশকে বা তারও আগে থেকে মানুষের তো ডেঙ্গু হয়েছে, অনেকে তো পরীক্ষাও করেনি, তাদের ঝুঁকিটা বেশি।’

‘যেটা গত কয়েক বছরে আমরা দেখছি, আইসিউতে বেশি যাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে,’ বলেন নাজমুল ইসলাম।

রাজধানীতে মশা নিয়ন্ত্রণের বড় দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এ বছর তারাও তাদের কাজে কিছু পরিবর্তন এনেছেন বলে জানালেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান।

‘আমরা সাধারণত সকালে লার্ভিসাইড আর বিকেলে ফগিং করতাম। এখন বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি লার্ভিসাইডের উপর, অর্থাৎ লার্ভা থেকে যাতে মশারই জন্ম না হয়, সেটা বেশি কার্যকরী হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত টুল বিটিআই আমরা এ মাস থেকেই বাংলাদেশে প্রয়োগ করতে যাচ্ছি।’

আর জলাশয়-ড্রেনে গাপটি মাছও ছাড়া হচ্ছে বলে জানান ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরও হাসপাতালগুলো এখন থেকেই প্রস্তুত রাখছে যাতে ডেঙ্গু রোগী সামাল দেয়া যায়। গত বছর থেকে ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে তারা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। সেই সাথে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সচেতনতার উপর জোর দিচ্ছেন সবাই।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement