২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের ভবনগুলো কতটা ভূমিকম্প সহনশীল

বাংলাদেশের ভবনগুলো কতটা ভূমিকম্প সহনশীল। - ছবি : সংগৃহীত

ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশ ‘ভূমিকম্প-সম্ভাব্য অঞ্চলে’ অবস্থিত। তবে অবকাঠামো নির্মাণে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিগত দশকগুলোতে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো ভূমিকম্প হলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গুণগত-মান নিশ্চিত না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক।

সম্প্রতি তুরস্কে ভূমিকম্পে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনায় ভবন নির্মাণে নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

প্রকৌশলীরা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও গত দু’দশকে ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য তেমন পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড আইন থাকলেও, এর বাস্তবায়ন না হওয়া কারণে এমনটা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের ঝুঁকি
১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বড় আকারের বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প দেখেছে বাংলাদেশ। পরের সময়ে ছোট ছোট কিছু ভূমিকম্প হলেও বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে গত এক শ’ বছরে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় ছোট কম্পনগুলো শক্তি সঞ্চয় করে সামনে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

আর ভূমিকম্পের সময় হতাহতের বড় একটি কারণ ভবন ধস। তারপরও ভবন নির্মাণের শর্তগুলো মানা হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মেহেদি আহমেদ আনসারীর মতে, গত দু’দশকে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপাদানের মান উন্নয়ন হলেও, সার্বিক নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

তার মতে, উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে বেশ বড় অংকের বিনিয়োগ থাকায় নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। কিন্তু পাঁচ থেকে ছয় তলা ভবন নির্মাণে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

মেহেদি আহমেদ আনসারীর সাথে অনেকটাই একমত বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

তিনি বলছেন, বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকল্পের আওতায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা হয়, তবে শেষ পর্যন্ত বাস্তবভিত্তিক পরিবর্তন লক্ষ্যনীয় নয়।

তবে আবাসন নিয়ে কাজ করে এমন একটি সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ার মো: শফিউল ইসলাম বলছেন, ধীর গতিতে হলেও ভবনকে ভূমিকম্প সহনশীল করতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন
শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান মনে করেন যে ভূগর্ভস্থ মাটির অবস্থা ও পানির স্তরের কারণে ছোট ভূমিকম্পেও বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের আশঙ্কা আছে।

তিনি বলছেন, এ নিয়ে একাধিক প্রকল্পের অধীনে ঝুঁকি বিশ্লেষণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও তা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকটি ভবন। বিশ্লেষকরা বলছেন যে নির্মাতাদের সামর্থ্য, ইচ্ছা ও আইন মানার প্রবণতাই এর কারণ।

মুহম্মদ মেহেদী আহসান মনে করছেন, এই সীমিত সংখ্যাকে যদি সার্বিকভাবে বাড়ানো যায় তবে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে।

তবে প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম মনে করেন, গত ১০ বছরে নির্মাণ করা ভবনে বৈজ্ঞানিক ডিজাইন কোড মানা হয়েছে। তার আগে নির্মিত ভবনগুলো নিয়ে শঙ্কা থাকলেও পরের সময়ের ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল।

আইন আছে, বাস্তবায়ন নেই
১৯৯৩ সালে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ প্রণয়ন করা হলেও, আইনি জটিলতার কারণে ১৩ বছর পরে ২০০৬ সালে তা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তবে সময়োপযোগী না হওয়ায় এবং পেশাজীবীদের দাবির মুখে ২০২১ সালে এই কোড সংশোধন করা হয়। ভবন নির্মাণে ন্যূনতম মান নিশ্চিত করাই ছিল এই আইনের লক্ষ্য।

মেহেদি আহমেদ আনসারী বলছেন, বিল্ডিং কোড হলে পৃথিবীব্যাপী ভবন নির্মাণের গুনগত মানেও পরিবর্তন আসে। কিন্তু বাংলাদেশে আইনই ঠিকঠাক প্রণয়ন হয়নি, তাতে মানের পরিবর্তন হবে কিসের ভিত্তিতে? এই আইনের আওতায় বিল্ডিং রেগ্যুলেটরি অথরিটি নামে আলাদা একটি বিভাগের পরিকল্পনা ছিল, যাদের কাজ হবে ভবনের সার্বিক তত্ত্বাবধান। কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলছেন, ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট অঞ্চলের তদারকির দায়িত্বে থাকলেও পুরো দেশে ভবনের মান দেখাশোনার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
আইনজীবী হত্যায় উত্তাল চট্টগ্রাম জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বিভক্ত না হতে মাহাথিরের আহ্বান ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর তিন মাস পার হলেই সব ঋণ খেলাপি মিয়ানমারের জেনারেল মিন অংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইলেন আইসিসির প্রসিকিউটর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন : ফখরুল আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে? এশিয়া ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ার্ড পেল অধিকার চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ

সকল