দেশে যেসব জরুরি টিকা আলোচনার বাইরে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩১
বাংলাদেশে টিকা শব্দটা বললেই করোনাভাইরাস, পোলিও, হাম বা এমন হাতে গোনা কয়েকটি কয়েকটি টিকার নাম সামনে আসে। কিন্তু এমন কিছু টিকাও রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে ব্যক্তির শরীরে ওই রোগের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে।
এসব টিকার মধ্যে রয়েছে কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস এ, মেনিনজাইটিস, মাম্পস, জলবসন্ত ইত্যাদি। যেসব রোগের বিস্তার বাংলাদেশে থাকলেও সরকারের কোনো কর্মসূচির আওতায় এই টিকাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এছাড়া রোটাভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, জাপানি এনসেফেলাইটিস এবং টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগের টিকা বিনামূল্যে আসবে বললেও এ নিয়ে এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
ভুক্কোভোগীদের অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগের অভাব এবয় একইসাথে প্রচার প্রচারণা না থাকায় এ ধরনের টিকা যে পাওয়া যায় সেটিও মানুষের জানাশোনার বাইরে থেকে গেছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে টিকা নিতে পারলে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়া আক্রান্ত হলেও ব্যাপকতা কমানোও সম্ভব।
প্রকল্পের আওতায় আছে টিকা, প্রকল্পের অগ্রগতি নেই
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালিত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় চারটি টিকাকে মূল কর্মসূচির আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ইপিআই’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এস এম আবদুল্লাহ আল মুরাদ।
তিনি জানান, বর্তমানে তারা ডায়রিয়া নির্মূলে রোটাভাইরাসের টিকা, যৌনবাহিত সংক্রমণ ও জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস-এইচপিভি টিকা, মস্তিষ্ক প্রদাহজনিত হলুদ জ্বর ঠেকাতে জাপানি এনসেফেলাইটিস টিকা এবং পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড ঠেকাতে টাইফয়েড কনজুগেট টিকা (টিসিভি) নিয়ে কাজ করছেন।
এর মধ্যে জরায়ু মুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী এইচপিভি ঠেকানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালে পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। যার আওতায় ৩০ হাজারের মতো ১০ বছর বয়সী মেয়ে-শিশুকে এইচপিভি টিকা দেয়া হয়।
ছয় মাসের মধ্যে দুই ডোজ টিকা দেয়ার মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পটি শেষ হলেও এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিটি এখন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়নি। এই টিকা দিতে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) বাংলাদেশকে অনুমোদন দিলেও সেটি এখনো থমকে আছে। বাকি তিনটি টিকা কবে নাগাদ আসতে পারে তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য তারা জানাতে পারেননি।
দেশে রোটাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর এর টিকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক অভিভাবক বাজারে ঘুরে ঘুরে টিকা কিনতে চাইলেও সরবরাহ না থাকায় পান না বলে অভিযোগ করেছেন। টিকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে এবং কবে থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে তারও কোনো সদুত্তর নেই।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ইপিআইর আওতায় বিনামূল্যে টিকাটি পাওয়া যাবে। কিন্তু এর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোনো অগ্রগতি নেই।
এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা কর্মসূচির মাধ্যমে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটির সুফল সবাই ভোগ করতে পারছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এর টিকা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও সেটি নির্ভর করে প্রাপ্যতার ওপর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এখনো প্রতিবছর কুকুরের কামড়ে দুই লাখেরও বেশি মানুষ আহত হচ্ছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু। এছাড়া ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ মানুষ পশুর কামড়ের চিকিৎসা নিতে আসেন।
সম্প্রতি আরোহী রায় নামে একজন অভিযোগ করেন, জলাতঙ্কের টিকা নিতে তার এলাকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও তিনি টিকা পাননি। পরে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে টিকা কিনে তাকে দিতে হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় এসব টিকার একেক জায়গায় একেকরকম মূল্য ধরারও অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় বিনামূল্যে জলাতঙ্কের পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আলোচনার বাইরে থাকা টিকা
বাংলাদেশে কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস এ, মাম্পস, জলবসন্ত ইত্যাদি রোগের বিস্তার থাকলেও সরকারের কোনো কর্মসূচির আওতায় এই টিকাগুলো নেই।
কেন এসব টিকা নেই এমন প্রশ্ন রাখা হলে ইপিআই কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মুরাদ জানান, বাজারে কোন টিকা আসবে সেটি নির্ভর করে ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি নামে একটি স্বাধীন কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর। এটি তাদের হাতে নেই।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে কথা বলেই কমিটি আমাদের রিকমেন্ড করেন যে কোন টিকাগুলো দেয়া হবে। তারা যদি কোনো টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখনই সেটা আমরা মানুষকে বিনামূল্যে দিতে পারি আর প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারি‘।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই টিকাগুলোর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তবে প্রাদুর্ভাব যেহেতু দেশজুড়ে নেই সেক্ষেত্রে যেখানে সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র সেসব জায়গায় বিনামূল্যে টিকা কর্মসূচি চালানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
বেশ কয়েক বছর ধরে সরকার কলেরা নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করে আসলেও গত বছর এপ্রিলে হঠাৎ কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল ডায়রিয়া আক্রান্তদের ২০ থেকে ২৫ ভাগেরও বেশি রোগী কলেরায় আক্রান্ত।
সাধারণত যেসব অঞ্চলে নিরাপদ পানির অভাব দেখা দেয় সেখানেই কলেরার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। গতবছর গ্রীষ্ম মৌসুমে ঢাকাসহ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও পার্বত্য জেলায় কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়।
তবে টিকা দেয়া থাকলে কলেরা থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হতো বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ-নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, ‘যেসব এলাকায় নিরাপদ পানির সঙ্কট থাকে সেখানে কলেরা দেখা দেয়। তাই দেশজুড়ে না হোক, অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় বিনামূল্যে কলেরার টিকা দেয়া এবং এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণা থাকা প্রয়োজন।’
তিনি জানান, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন বাংলাদেশে আসতে শুরু করল, তখন তো নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তখন এই মানুষগুলোকে কলেরার টিকা দেয়ায় ওই রোগের সংক্রমণ ঠেকানো গিয়েছে। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত।’
মেনিনজাইটিস এমন একটি রোগ, যেখানে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস মস্তিষ্কের এবং মেরুরজ্জুর আবরণীকে আক্রমণ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ঘনবসতি ও গ্রীষ্মপ্রবণ দেশগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। ভয়ের বিষয় হল এই রোগের লক্ষণ আগে থেকে টের পাওয়া যায় না। এটি এতটাই মারাত্মক যে একবার লক্ষণ প্রকাশ পেলে চিকিৎসার জন্য সময় থাকে ২৪ ঘণ্টারও কম।
সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগী মৃত্যুবরণ করে আর ২০ শতাংশ রোগী বেঁচে গেলেও প্রতিবন্ধিতা বরণ করতে হয়। পাঁচ বছরের নিচে শিশুরা আর ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
বেনজির আহমেদ জানান, বাংলাদেশে শুধুমাত্র হজযাত্রীদের বাধ্যতামূলক মেনিনজাইটিসের টিকা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দেয়া হয়। বাকিদের কিনে নিতে হয়।
যেহেতু এই রোগের লক্ষণ অপ্রকাশিত এবং মারাত্মক প্রাণঘাতী সেক্ষেত্রে টিকা দেয়াকে গুরত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
আবার যাদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশ জরুরি টিকা। এতে তার হাঁপানি ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসের কারণে যকৃত বা লিভারে তীব্র সংক্রামণ হয়ে থাকে। উদ্বেগের বিষয় হল অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না, থাকলেও খুব ক্ষীণ। এক্ষেত্রে টিকা নেয়াকে বেশ জরুরি বলে মনে করা হয়।
ভাইরাসজনিত রোগ মাম্পস বা গাল-ফোলা রোগ বেশ সংক্রামক এবং এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ভাইরাসের সংক্রমণে কানের পেছনে চোয়ালের দুই পাশে বা একপাশের প্যারোটিড গ্রন্থি ফুলে যায়। ফলে অনেক ব্যথা হয়। আবার জলবসন্তেও প্রতিবছর বহু শিশু আক্রান্ত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে এসব রোগের বিস্তৃতি কত তা নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই।টিকা দেয়া থাকলে রোগ থেকে মুক্তি কিংবা ব্যাপকতা কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এই টিকাগুলোকে ক্ষেত্র বিশেষে সরকারি টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এনে এবং প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে দিলে সহজেই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
বিনামূল্যে কয়টি টিকা দেয় সরকার
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সার্বজনীন টিকাকরণ কর্মসূচির (ইপিআই) কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত নবজাতক, শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বাদের বিভিন্ন প্রকার টিকা দেয়া হতো।
শুরুতে যক্ষ্মা (টিবি), ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশ (পারটুসিস), ধনুষ্টংকার (টিটেনাস), পোলিও ও হাম- এ ছয়টি রোগের টিকা দেয়া হতো। পরে এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে সরকার ইপিআই’র আওতায় ১০টি টিকা বিনামূল্যে দেয়া হয়। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম সব নারী টিকা কর্মসূচির আওতায় আছেন।
বাংলাদেশে পোলিও নির্মূল এবং মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার নির্মূল কর্মসূচি শুরু হয় ১৯৯৩ সাল থেকে। পরে ২০০৩ থেকে হেপাটাইটিস বি-এর টিকা দেয়া শুরু হয়। ২০০৯ সাল থেকে পেন্টাভ্যালেন্ট এবং হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি রোগের টিকা দেয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে হাম ও রুবেলা প্রতিরোধে এমআর টিকা এবং হামের দ্বিতীয় ডোজ শুরু হয়। ২০১৫ সাল থেকে নিউমোনিয়ার নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন- পিসিভি দেয়া হচ্ছে।
গুটিবসন্তের মতো পোলিও একসময় বাংলাদেশে গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা ছিল। কিন্তু টিকা কার্যক্রম জোরদার করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে।
এছাড়া জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এর টিকা বিনামূল্যে দেয়া হয়।
স্বাধীনতার পর টিকা দেয়ার চিত্র
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে টিকার উদ্ভাবনের কারণে পোলিও, গুটিবসন্তের মতো রোগ নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর কলেরা, ডায়রিয়া, গুটিবসন্ত, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, টাইফয়েড, কালাজ্বর, কুষ্ঠ, জলাতঙ্ক, ধনুষ্টংকার ও হামের ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিয়েছিল।
এসব রোগে একসময় বহু মানুষের মৃত্যু হতো। সেই সময় থেকেই টিকা কর্মসূচির জোরদার করার বিষয়টি সামনে আসে। শুরুতে তৎকালীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গুটিবসন্ত নির্মূল কর্মসূচি জোরদার করে। এতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্মলপক্স ইরাডিকেশন প্রোগ্রাম।
‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর : বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দুই লাখ ২৫ হাজার গুটিবসন্তের রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ হাজার রোগীর।
তবে টিকা কর্মসূচি হাতে নেয়ায় ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশকে গুটিবসন্তমুক্ত ঘোষণা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে ইপিআই’র কার্যক্রম শুরু হয়।
কোন টিকা কখন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসঙ্ঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের ফ্যাক্ট-শিট অনুযায়ী শিশু জন্মের পর যক্ষ্মা বা টিবি প্রতিরোধে বিসিজি টিকা দেয়া হয়।
জন্মের ছয় সপ্তাহের মধ্যে দিতে হয় আরো তিনটি টিকা। সেগুলো হলো পোলিওর প্রতিষেধক ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন-ওপিভি, নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক নিউমোককাল কনজুগেট ভ্যাকসিন-পিসিভি এবং পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা।
শিশুর জন্মের ছয়, ১০, ১৪ সপ্তাহে এসব টিকার একটি করে ডোজ অর্থাৎ চার সপ্তাহ বিরতিতে একেকটি টিকার তিন ডোজ সম্পন্ন করা হয়। ওপিভি দু’ফোঁটা করে মুখে এবং বাকি দুই টিকা শিশুর উরুর মাংসপেশিতে দেয়া হয়।
পেন্টাভ্যালেন্ট হল ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশ (পারটুসিস), ধনুষ্টংকার (টিটেনাস), হিমোফিলিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি এবং হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে সমবেত একটি টিকা।
শিশুর বয়স নয় মাস থেকে ১৫ মাসের মধ্যে হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক এমআর টিকা দেয়া হয়। সেইসাথে ১৫-৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম সব নারীদের ধনুষ্টংকার প্রতিরোধে টিডি টিকা নিতে বলা হয়।
এটি পাঁচ ডোজের টিকা। প্রথম টিকা দেয়ার এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ, এর ছয় মাস পর তৃতীয়, এর এক বছর পর চতুর্থ এবং পরবর্তী বছর শেষ ডোজ দিতে হয়।
অন্যদিকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল শিশুর ছয় মাস থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে খাওয়াতে বলা হয়। এই টিকাগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা টিকা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার সময় গ্রহণ করা হলে সরকার এর খরচ বহন করবে।
তবে স্বেচ্ছা টিকার খরচ ব্যক্তির নিজেকেই বহন করতে হয়।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা