করোনা রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৫৯
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের ফলে এখন ঢাকার বাইরেও প্রচুর রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
প্রতিদিনই হাজারো মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় মারাত্মক চাপে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে দেশে ৬৫৪টি সরকারি এবং ৫ হাজার ৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় রোগীর চাপ ও আতঙ্কে সাধারণ রোগীরাও অতি জরুরি না হলে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন বলছে, গত আট দিনে চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন ৪১৪ জন। মারা গেছেন দু’জন চিকিৎসক। নার্স আক্রান্ত হয়েছেন ১২২জন। এ ছাড়া ৭০ জন মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানও আক্রান্ত হয়েছেন।
নোয়াখালী কোভিড হাসপাতালের পরিচালক ড. নিরুপম দাস বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হওয়ায় আরো হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা দিতে। রোস্টার ডিউটিতে যেখানে একজনকে আট ঘণ্টা কাজ করতে হয় সেখানে জনবল কম হওয়ায় কারণে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করাতে হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন এই গরমে পিপিই পরে এতক্ষণ ডিউটি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলছিলেন, এবার করোনাভাইরাসের সময় তারা দেখছেন তরুণ চিকিৎসকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে যেসব জায়গায় রোগী কম কিন্তু ডাক্তার বেশি সেখান থেকে ডাক্তার এনে যেখানে রোগী বেশি সেখানে কাজ করানো হচ্ছে। সব চিকিৎসকদের শিক্ষাকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এমনকি যারা ট্রেনিং করছিলেন তারাও পূর্ণকালীন কাজ করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক মিলি দে বলেছেন, ‘এখানে মাঝখানে কয়েক মাস চাপ কম ছিল। এখন মারাত্মক চাপ। হাসপাতালের ছয়তলা কেবিন বেড। সেখানে ১০০টা বেড ও ২০টা আইসিইউ আছে। কোনোটাই খালি থাকছে না। রোগীদের সিরিয়াল এতো দীর্ঘ যে একটা বেড খালি হলে সাথে সাথে রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে।’
মিলি দে বলেন, ‘চিকিৎসকরা বিপদে পড়ছেন যখন জেনারেল ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে যাচ্ছেন তখন। কারণ একটা করোনা পজেটিভ রোগীর ক্ষেত্রে তিনি পিপিইসহ সব প্রস্তুতি নিয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু জেনারেল ওয়ার্ডে একটা রোগী এক সপ্তাহ পর জ্বর-কাশি হচ্ছে, তাকে টেস্ট করালে পজেটিভ আসছে। এর মধ্যে যেহেতু আমরা তার সংস্পর্শে গিয়েছি, তাই এভাবেই চিকিৎসকরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছে।’
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঙ্কটাপন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ থেকে এখন বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে উচ্চচাপে অক্সিজেন সরবরাহ করা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে দেশের মাত্র ২৩টি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। অন্য হাসপাতালে চাহিদা পূরণের জন্য রয়েছে ১৬ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার।
হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই। সাধারণ বেডগুলোর কয়েকটা সাধারণ রোগীদের জন্য রেখে অন্যগুলো কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে আইসিইউ বেড আছে ১ হাজার ২৫০টি। এর মধ্যে ৮০০টির মতো আইসিইউ বেড কোভিড রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড. লেলিন আহমেদ বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে এই স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিডের সেবা দিচ্ছেন। তারা এখন মানসিক, শারীরিকভাবে ক্লান্ত ও হতাশ। তারা প্রতিদিন মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখছেন। শুধু তাই নয়, তাদের সহকর্মীদের প্রতিনিয়ত কোভিডে আক্রান্ত হতে দেখছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুও দেখছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের মানসিক অবস্থা চাঙ্গা করার জন্য কিছু কাজ করা দরকার। যেমন তাদের এক মাস ডিউটি করলে দুই মাসের বেতন দেয়া। ডিউটির প্যাটার্ন পরিবর্তন কর। টানা সাত দিন কাজ করার পর সাত দিন ছুটি দেয়া। এতে করে তারা কিছুটা মানসিক চাপমুক্ত হবেন।’
সরকারের করোনাভাইরাসের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ইকবাল আরসালান বলেন, প্রথম ওয়েভ করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য তখন স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে ইমার্জেন্সি ভিত্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। প্রশাসনের লাল ফিতা ভেঙে তারা মানুষের প্রয়োজনে মাঠে কাজ করেছিল। কিন্তু পরে তাদের কাজের বৈধতা দেয়া হয়নি। এটা তাদের মারাত্মক হতাশ করেছে।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা