১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনই কি কলকাতার ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদের পথ দেখাচ্ছে

- ছবি - বিবিসি

কলকাতার সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণের শিকার ও খুনের প্রতিবাদ যখন শুরু হয়েছিল, তার কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশে ঘটে গেছে গণঅভ্যুত্থান, দেশ ছেড়ে চলে গেছেন প্রধানমন্ত্রী, পতন হয়েছে সরকারের।

বাংলাদেশের ওই আন্দোলনে যেসব স্লোগান উঠতে শুনেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, তার অনেকগুলোও শোনা যাচ্ছে ‘রাতের রাস্তা দখল’ বা তার পরবর্তী এক সপ্তাহ ধরে ওই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে যত প্রতিবাদী মিছিল হচ্ছে, সেখানে।

‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ যেমন শোনা গেছে, তেমনই কয়েকদিন ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দল – বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস যে দাবি তুলছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর পদত্যাগের, সেখানেও শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের আদলেই স্লোগান : ‘দফা এক দাবি এক, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’।

এবার রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে, নাগরিক সমাজের একাংশের মধ্যে থেকেও সেই দাবি উঠতে শুরু করেছে।

জারি রয়েছে প্রতিবাদ
গত দিন দশেক ধরে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ চলছে, বুধবারও তা অব্যাহত থেকেছে। জুনিয়র ডাক্তাররা এদিন বিক্ষোভ মিছিল করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সদর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন, অন্যদিক বিজেপি নেতারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন আরজি কর হাসপাতালের কাছে শ্যামবাজারে।

বুধবার বিকেলে বিজেপি একটি মিছিল করে, যেখানে অনেকটা বাংলাদেশের আন্দোলনের স্লোগানের ধাঁচে প্ল্যাকার্ড ছিল, ‘দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ’।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ স্ট্রিটে জড়ো হন। আবার কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একটি বড় মিছিল গিয়েছিল কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের দিকে। মিছিলকারীদের পথ রোধ করে পুলিশ। সেই ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা হলে কংগ্রেস কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়।

ক্রীড়া জগতের মানুষও পথে নেমেছিলেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর আরজি কর’ স্লোগান দিয়ে। বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আর একাধিক মিছিল-জমায়েত-প্রতিবাদ হয়েছে।

অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবাদী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শেষ করে কাজে ফেরার আবেদন করলেও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও জুনিয়র ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই এবং রাজ্য সরকারের যে ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দেয়ার কথা, সেটা দেখে তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন।

কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গে যেমন প্রতিবাদ হচ্ছে, তেমনই ভারতের অন্যান্য শহরেও ডাক্তারদের প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।

‘বাংলাদেশ পারলে আমরা পারব না?’
আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে যে কয়েক শ’ জমায়েত হয়েছিল, সেগুলোর ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে, এমন একজন কলকাতার প্রকাশক দীপায়ন ধর।

তিনি বলছিলেন, ‘আরজি করের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে এখন যে আন্দোলন চলছে, তা কিছুটা তো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ছাত্রদের আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। তবে এখন যেভাবে আন্দোলন হচ্ছে, সেটা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’

কলকাতার প্রতিবাদীদের একাংশ বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের দু’টি আন্দোলনের সব থেকে বড় মিল হল রাজনৈতিক পতাকা ছাড়া সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে পড়াটা।

‘রাতের রাস্তা দখল’ কর্মসূচিতে উদ্যোগ নিতে দেখা গিয়েছিল, এমন আরেকজন অদিতি রায়।

তিনি বলছিলেন, ‘রিক্লেইম দ্য নাইট বা রাতের রাস্তা দখল কর্মসূচির একটা দীর্ঘ ইতিহাস আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে প্রথম এই আন্দোলন হয়েছিল। এই যে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান, সেটা কিন্তু ওই আন্দোলনেরই স্লোগান ছিল। কিন্তু ঠিকই, সেই ইতিহাস হয়ত অনেকেই জানেন না। তাদের একটা বড় অংশকে সেদিন রাতে পথে নামতে সম্ভবত বাংলাদেশের আন্দোলনই উজ্জীবিত করেছে।’

‘যেভাবে সাধারণ মানুষ প্রায়ই কোনো দলীয় পতাকা ছাড়া, দলমত নির্বিশেষে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামছেন আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে, সেটার পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশই। তারা তো দেখিয়েছেন যে এভাবেও সম্ভব! অনেকেই ভেবেছেন যে বাংলাদেশ পারলে আমরা পারব না?” বলছিলেন অদিতি রায়।

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ
দীপায়ন ধরের কথায়, ‘কলকাতার একটা প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউটে কর্তব্যরত অবস্থায় এক চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা তো মানুষকে ক্ষুব্ধ করেইছে, তবে এর বাইরেও জনমানসে একটা ক্ষোভ দানা বাঁধছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। সেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ উগরে দেয়ার একটা জায়গা খুঁজছিলেন মানুষ। সেটাই এই ঘটনার প্রতিবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে বলে আমার মনে হয়। বাংলাদেশেও তো সেটাই ঘটেছে।’

শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত এবং পাকিস্তানে যে আন্দোলন হচ্ছে, সবগুলোর ধাঁচ অনেকটা একরকম বলে মনে করছেন তিন-দেশের রাজনীতির ওপরেই নজর রাখা কলকাতার তথ্যচিত্রকার সৌমিত্র দস্তিদার।

তিনি বলছিলেন, ‘তিনটি দেশের আন্দোলনের মূল সুরটা যদি দেখেন, সবগুলোই কিন্তু অচলায়তন ভাঙার চেষ্টা এবং সবক্ষেত্রেই একেবারে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন। সব জায়গাতেই এমন বহু মানুষ রাস্তায় নামছেন, যাদের একটা বড় অংশ তরুণ এবং এদের অনেকেই কোনো দিন কোনো ধরণের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না।

‘সব জায়গায়ই দেখা যাচ্ছে, একটা স্বতঃস্ফূর্ত জনজাগরণ দেখা যাচ্ছে। কোন দল কী করবে, কী দাবি তুলবে, সেটার অপেক্ষায় মানুষ বসে থাকছে না,’ বলছিলেন দস্তিদার।

তার কথায়, ‘এইসব আন্দোলন থেকে যে সিস্টেম বদলের আওয়াজ উঠছে, রাজনৈতিক দলগুলোর চেনা আখ্যানের বাইরে গিয়ে, সেটা অবশ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলনই।’

কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস?
রাজনৈতিক দলগুলো যে তার পদত্যাগ চাইছে এবং কলকাতার আন্দোলনের ওপরে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জী নিজেও।

তিনি সম্প্রতি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সেদেশের আন্দোলনকারীরা সরিয়ে দিতে পেরেছে- এটা দেখে কলকাতার আন্দোলনকারীরাও উৎসাহিত হচ্ছে, এই ভেবে যে ‘এখানেও পারবে’, অর্থাৎ তাকেও ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে পারবে।

তার দলও আরজি করের ঘটনা নিয়ে ‘রাম-বাম’, অর্থাৎ বিজেপি এবং সিপিআইএমের রাজনীতির কথা বলছে বার বার।

দলের অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডল বলছিলেন, ‘বিরোধীদলগুলো যে রাজনীতি করবে এই নারকীয় ঘটনা নিয়ে, তা তো জানা কথা। কিন্তু তার বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠছে, তা নজরে আসেনি।’

‘যে ঘটনার বিচার চাওয়া হচ্ছে, এখনো পর্যন্ত যা তদন্ত, যা গ্রেফতারি, সেই সবটাই কিন্তু মমতা ব্যানার্জীর সরকারের পুলিশই করেছে। সিবিআই তো তদন্তভার পেয়েছে ১০ দিনের বেশি হয়ে গেল। কোনো অগ্রগতি কী তারা করতে পেরেছে? তাহলে মমতা ব্যানার্জীর পদত্যাগ কেন চাওয়া হবে? সিবিআই যে মন্ত্রণালয়ের অধীন, তার মাথায় যিনি বসে আছেন – প্রধানমন্ত্রী – তার পদত্যাগ চাওয়া উচিত,’ বলছিলেন অধ্যাপক মণ্ডল।

সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকেও যে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারটি তার নজরে না এলেও সামাজিক মাধ্যমের নানা পোস্ট বা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে, চায়ের দোকানে, আড্ডাতেও যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা নজরে আসছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ফ্যাসিবাদের দোসরদের পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে : বুলবুল অবশেষে পদ হারালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি রোবেদ আমিন ফ্যাসিবাদি সরকার সব সময় শাসন ও শোষণ করেছে নীলফামারীতে ডিবি পরিচয়ে যুবককে অপহরণ, গ্রেফতার ৪ অন্যায় প্রতিহত করতে ছাত্র-জনতাকে সব সময় সোচ্চার থাকবে : সমন্বয়ক সারজিস আলম নতুন বাংলাদেশ গড়তে এ সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে জামায়াত : গোলাম পরওয়ার মানিকগঞ্জ কৃষকদলের নতুন কমিটি, সভাপতি সাইদ, সাধারণ সম্পাদক বাদল সাভারে টোল বন্ধের দাবিতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদার ফিটনেস পরীক্ষা করছে মেডিক্যাল বোর্ড চাঁদপুরে ছেলের হাতে বাবা খুন চকরিয়ায় পুকুরে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সকল