১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্রিকস এর সদস্য হতে ভারতের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ - ছবি : সংগৃহীত

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আজ বলেছেন, বাংলাদেশ ব্রিকস-এর সদস্য হওয়ার জন্য ভারতের কাছে সমর্থন চেয়েছে।

উদীয়মান-বাজারের দেশগুলোর গ্রুপ ব্রিকস (বিআরআইসিএস) এর সংক্ষিপ্ত রূপটি হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।

তিনি বলেন, যদি ব্রিকস নতুন সদস্য বা অংশীদার নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আমরা ব্রিকস -এর অংশ হতে চাই। এই লক্ষ্যে ভারতের কাছে সমর্থন চেয়েছি (প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনার সময়)।

তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে দুই দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরের বিষয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের অনেক বিষয় রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৫৪টি অভিন্ন নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনা, পানি বণ্টন, কনেকটিভিটি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য কোটা প্রবর্তন, বাংলাদেশীদের জন্য দ্রুত চিকিৎসা এবং অংশীদারিত্বের উন্নয়ন।

বৈঠকে, গত ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং গত ১০ বছরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাওয়ায় উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘উভয় পক্ষই সম্পর্ককে আরো উন্নত করতে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন’।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। নদীগুলোর জন্য যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা গঠনের বিষয়টি প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে প্রস্তুত এবং এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভুটানের সাথে একটি চুক্তি হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে এবং ‘ভারত খুবই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।’

হাছান বলেন, শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনই যথেষ্ট নয়, বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য ট্রান্সমিশন লাইনেরও প্রয়োজন হয়।

মাহমুদ বলেন, ভারত বর্তমানে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করছে এবং এ-প্রান্তে বাংলাদেশকে ট্রান্সমিশন লাইন থেকে সুবিধা পাবে।

সীমান্ত হত্যার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই সীমান্ত হত্যাকা- শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে রাজনৈতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, উভয় দেশই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কমাতে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, তারা পেঁয়াজ, তেল, গম এবং চিনির মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য কোটা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন।

ড. হাছান বলেন, আমরা এই উদ্দেশে একটি নির্দিষ্ট কোটা চেয়েছি কারণ তারা যেন বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় জিনিস রফতানি বন্ধ না করে।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তিস্তা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশও এ বিষয়ে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং উভয় দেশের কারিগরি কমিটি বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবে। ভারত এ ব্যাপারে চীনকে নিয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে চীনকে ভূমিকা রাখতে হবে।

উত্তরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি চীন সরকারের কাছে তুলে ধরবেন কারণ তিনি শিগগিরই চীন সফরে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ বলেন, মেডিকেল ভিসা প্রদানের সময় কমিয়ে বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় মেডিকেল ভিসা নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের বিষয়টি তিনি নিজেই সামনে এনেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশীরা বর্তমানে মেডিকেল ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় লাগে বলে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সমস্যার সমাধান করতে বলেছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত তাদের সফ্টওয়্যার আপডেট এবং ই-ভিসা ইস্যু করার জন্য কাজ করছে।

ব্রিফিংয়ে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: মুস্তাফিজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো: নাঈমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement