২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিদেশ থেকে এসেছে ৩ হাজার প্রবাসীর লাশ

বিদেশ থেকে এসেছে ৩ হাজার প্রবাসীর লাশ - ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ৩২টিরও বেশি দেশ থেকে গত বছর প্রায় ৩ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর লাশ দেশে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা গেছেন সৌদি আরবে। আর সবচেয়ে কম লাশ এসেছে এপ্রিল মাসে। মাত্র ১৬ জন। এসব লাশ বিমানবন্দরে অবতরণের পরই পরিবহন ও দাফনে আর্থিক সাহায্য বাবদ বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের কর্মকর্তারা মৃত কর্মীর পরিবারের কাছে চেক হস্তান্তর করেছেন।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক (প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক) মো: ফখরুল আলমের তৈরি করা দেশওয়ারী মাসিক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩২টিরও বেশি দেশ থেকে ২ হাজার ৭৮৬ জন প্রবাসী শ্রমিকের লাশ আসে। এর মধ্যে সৌদি থেকে ৭৬২ জন, মালয়েশিয়া থেকে ৬৯৬, কুয়েত থেকে ২৭২ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৪৭ জন, বাহরাইন থেকে ৮২ জন, কাতার থেকে ১৬৪ জন, ওমান থেকে ২৮০ জন, সিঙ্গাপুর থেকে ২৭, জর্ডান থেকে ২৫, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১২ জন, ইতালি থেকে ৩৪ জন, লেবানন থেকে ৫৫ জন, গ্রিস থেকে ৫ জন, মালদ্বীপ থেকে ২৩ জন, মরিশাস থেকে ১৮, স্পেন থেকে ৪, ইরাক থেকে ৩০, লিবিয়া থেকে ১৩ জন এবং অন্যান্য দেশ থেকে ৮ জন। করোনার সময়ে এপ্রিল মাসে লাশ এসেছে ১৬ জনের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈধভাবে বিদেশে গিয়ে যেসব শ্রমিক মারা যাচ্ছে, তাদের লাশ দেশে আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে লিখিত অভিযোগ জানাতে হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। এরপরই শুরু হয় লাশ আনার প্রক্রিয়া।

সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপপরিচালক (আরপিটি) মো: জাহিদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলরের (শ্রম) কাছে। ‘অতীব জরুরি ওই চিঠিতে বলা হয়, উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রস্থ পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, মালয়েশিয়া প্রবাসী আফজাল হোসেন, পিতা মো: আবুল হোসেন, গ্রাম পুরানপাড়া, পো: চিনিশপুর, নরসিংদী সদর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি সাত বছর আগে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া গমন করেন। সেখানে তিনি রাশেদ আসলাম নামের পাসপোর্টে নিজের ছবি সংযুক্ত করে নিজস্ব পাসপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করেন মর্মে নরসিংদীর চিনিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রে জানা যায়। এমতাবস্থায় প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক আফজাল হোসেনের (রাশেদ ইসলাম) লাশ দেশে প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একইভাবে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী মো: নুরুন নবীর লাশ দেশে প্রেরণের জন্য ওই কর্মকর্তার স্বাক্ষরে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের কাউন্সিলরের (শ্রম) কাছে চিঠি দেয়া হয় একই দিন।

চিঠিতে প্রবাসী কর্মী নুরুন নবীর লাশ নিয়োগকর্তার খরচে জরুরি ভিত্তিতে দেশে প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ থেকে তার বকেয়া বেতন, ভাতা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও ইন্স্যুরেন্স বাবদ পরিবার কোনো সহায়তা পাবেন কি না তা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয়। শুধু মালয়েশিয়া, সৌদি আরব নয়, যে দেশেই বাংলাদেশী শ্রমিক মারা যাচ্ছেন, তাদের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য বোর্ড থেকে প্রতিটি মিশনে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। আর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওই কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন, কম্পিউটার অপারেটর বিপুল চন্দ্র, অফিস স্টাফ মনির হোসেন ও অফিস সহকারী মামুন।

তবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে কর্মীদের লাশ দ্রুত পাঠানোর জন্য মিশনগুলোতে চিঠি পাঠানোর পরও অনেক হতভাগ্য শ্রমিকের লাশ সৌদি, কাতার, কুয়েতসহ কয়েকটি দেশের মর্গে মাসের পর মাস পড়ে থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মো: ফখরুল আলম গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদেশ থেকে প্রতিদিন যেসব বৈধ প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে আসছে সেই লাশ দাফন ও পরিবহনের জন্য বিমানবন্দর থেকেই ৩৫ হাজার টাকার চেক স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার কর্তব্যকালে যত লাশ এসেছে তার বেশির ভাগের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করতে দেখেছি, হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোক। এই দুটি কারণ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার ঘটনা আসছে, তবে সেটি খুব কম। মৃত্যুর কারণের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে। তবে খুনের ঘটনা খুবই রেয়ার (কম) বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement