ক্যাম্প থেকে রায়হানকে হাতকড়া পরিয়ে উড়োজাহাজের গেটে আনা হয়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ আগস্ট ২০২০, ০৬:৫৪
মালয়েশিয়ায় লকডাউন চলার সময় অভিবাসীদের নিয়ে আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেয়ার অভিযোগে অভিবাসন পুলিশের হেফাজতে থাকা বাংলাদেশী প্রতিবাদী যুবক মো: রায়হান কবির অবশেষে দেশে ফিরেছেন। তবে তিনি আর কোনো দিন দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না। তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখেই তাকে ব্ল্যাকলিস্টেড করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
এর আগে রায়হান কবিরকে ইমিগ্রেশন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কুয়ালালামপুর শিপাং ইমিগ্রেশন ক্যাম্প থেকে দুই হাতে হাতকড়া লাগিয়ে কে এল আই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারলাইনসের স্টাফদের হাতে সোপর্দ করেন।
কে এল আই বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রায়হান কবিরকে তুলে দেয়ার জন্য শিপাং ইমিগ্রেশন ক্যাম্প থেকে রায়হান কবিরকে কঠোর নজরদারির মধ্যে একটি গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় তার চার পাশে অবস্থান নেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। এ সময় তার হাতে হাতকড়া লাগানো ছিল। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর রায়হান কবিরকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় ইমিগ্রেশনে। সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষে তাকে সোজা নেয়া হয় বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায়। উড়োজাহাজের গেটের সামনে যাওয়ার পর রায়হান কবিরের দুই হাত থেকে হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়া হয়। একই সাথে তার পাসপোর্ট ও টিকিট এয়ারক্রাফটের দায়িত্বশীলদের হাতে দেয়া হয়। বিমানবন্দরে আলোচিত বাংলাদেশী রায়হান কবিরকে যখন হাতকড়া পরিয়ে নেয়া হচ্ছিল তখন তার দিকে সবাই তাকাচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের (শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে) মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন।
গতকাল কুয়ালালামপুরে অবস্থানকারী একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে এসব তথ্য জানিয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের নিয়ে রায়হান কবির যেসব কথা ইন্টারভিউতে বলেছেন সেগুলো সত্য কথা। তবে ওয়ার্কার হয়ে এভাবে একটি দেশের বিরুদ্ধে রায়হান তো কথা বলতে পারেন না। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই ব্যবসায়ী বলেন, যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোনো চার্জশিট হয়নি সেহেতু তাকে দেশে পাঠানোটাই ঠিক হয়েছে। মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে যাওয়াটা অবশ্যই আনন্দের বার্তা। তবে আমাদেরকে কথা বলতে হলে সংযত ও সতর্কভাবে কথা বলতে হবে বলে আমি মনে করি। কারণ এখানে অনেক ধরনের পলিটিক্স থাকতে পারে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, রায়হান কবিরকে যে ল’ইয়ার ইন্টারভিউ করেছিলেন সেই ল’ইয়ার তার মুক্তির জন্য লড়েছেন। এতে কী বোঝা যায়? রায়হান কবির কি আর কখনো মালয়েশিয়া যেতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না। বিমানবন্দরেই তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে তাকে আজীবনের জন্য ব্ল্যাকলিস্ট করে দিয়েছে। এখন যদি সে আপিল করে সেটি ভিন্ন কথা।
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই আলজাজিরার তথ্যচিত্রে মালয়েশিয়ার লকডাউনে আটকে থাকার পরে বাংলাদেশের এম ডি রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের আগে রায়হান কবির ফেসবুক লাইভে এসে বলেছিলেন, অভিবাসীদের নিয়ে আমি যা বলেছিলাম তা সব সত্য কথাই বলেছি। তিনি কোটি প্রবাসীর সমর্থন চেয়েছিলেন। এরপরই মালয়েশিয়ার অভিবাসী ও স্পেশাল পুলিশ তাকে কুয়ালালামপুরের একটি কনডোনিয়াম থেকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। এরপরই মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার আটকের ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। তবে মালয়েশিয়ার সরকার শুরু থেকেই আলজাজিরার প্রতিবেদনটিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে আসছে।