মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা ট্রাম্পের উচিত হবে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১১ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০৯
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ম্যাজিক ম্যান’ হিসাবে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা ট্রাম্পের উচিত হবে না। কেননা প্রবাসী শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামেই যুক্তরাষ্ট্র গড়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে প্রভাবশালী পলিটিকো ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাতকারে ড. মোমেন এসব কথা বলেন। সাংবাদিক নেহাল তুসি এই সাক্ষাতকার নিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীর সংখ্যা সীমিত করার প্রয়াস মার্কিন প্রশাসনের ত্যাগ করা উচিত। এক্ষেত্রে তিনি যুক্তি দেখান, অভিবাসী সম্প্রদায়ের কঠোর পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার (ট্রাম্পের) উচিত যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধ ও নীতি অনুসরণ করা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা উচিত হবে না প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্র ‘গ্রেট’ বা মহান। কারন এটা সব শ্রেণির নির্যাতিত মানুষের স্থান। নিজেদের নিয়ে সংকীর্ণ মানসিকতার পরিবর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক উদার মানসিকতা দেখানো উচিত।
ড. মোমেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে বাংলাদেশের সার্বিক সম্পর্ক ভাল। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে না। মোমেন বলেন, আপনি তাকে (ট্রাম্প) পছন্দ করুন বা নাই করুন, তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তার ব্যাপক সমর্থন রয়েছে মানুষের কাছে। ট্রাম্প একজন ‘ম্যাজিক ম্যান’।
বাংলাদেশে অবস্থানরত এসব রোহিঙ্গাকে ত্রাণ হিসেবে বিপুল পরিমাণ সহায়তা দেয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক্ষেত্রে জাপানের মতো এশিয়ার মিত্রদের অবদান রাখার জন্য আহ্বান জানাতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও তাতে মিয়ানমারের বড় মিত্র চীনের ক্ষোভ বাড়তে পারে। মোমেন আরো বলেছেন, মিয়ানমারের সেনানেতৃত্ব ও অন্যদের বিরুদ্ধেযুক্তরাষ্ট্রের আরো অবরোধ আরোপ করা উচিত, যাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিচার করা হয়।
মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আরো অনেক কিছু করতে পারে। চীনের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র কিছু বিষয়ে কাজ করতে পারে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাতিসঙ্ঘের কর্মকান্ডে সমর্থন দেয়। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা নির্যাতন সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের বক্তব্য ও রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। জাতিসঙ্ঘ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতাকে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে হত্যাকান্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
পলিটিকোকে দেয়া সাক্ষাতকারে মোমেন বলেন, সব কিছুই ইঙ্গিত দেয়, মিয়ানমারের এ ঘটনা একটি ক্লাসিক গণহত্যার কাছাকাছি। তবে একটি প্রশ্নের উত্তর অন্যভাবে দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা হয়েছে তাকে ট্রাম্প প্রশাসনের কি গণহত্যা ঘোষণা করা উচিত Ñ এ কথায় বিশ্বাস করেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান মোমেন।
গণহত্যা এমন একটি শব্দ, যার আইনগত পরিণাম রয়েছে। ওই প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেছেন, এটা ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়।
ট্রাম্প প্রশাসন রোহিঙ্গা সঙ্কটকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, আন্তর্জাতিক আইনে যার অর্থ খুব বেশি বড় করে দেখা হয় না। তবে এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল, জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের হাতে সিরিয়া ও ইরাকে খ্রিস্টান, ইয়াজিদি ও অন্যান্য গ্রুপ গণহত্যার শিকারে পরিণত হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা টেনে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এসব শরণার্থীকে ফেরত নিতে বার বার মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার ফেরত নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তা ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে উল্লেখ করার মতো কোনো ফল আসছে না। বহু রোহিঙ্গা ফেরত যেতেও চাইছেন না। তাদের ভয়, মিয়ানমারে ফেরত গেলে আরো নিষ্পেষণের শিকার হবেন। নাগরিকত্ব ও আইনগত মৌলিক অধিকারগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের দশকের পর দশক ধরে বঞ্চিত করেছে মিয়ানমার।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে সাক্ষাত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর। তবে সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমরা গণহত্যা অথবা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শিকার হয়েছেন কিনা - এ বিষয়ে অবস্থান নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন পম্পেও। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি জটিল। তিনি এখনো বিষয়টি দেখছেন।
তবে এটা অস্পষ্ট যে, পম্পেও কেন অবস্থান পরিষ্কার করতে এত লম্বা সময় নিচ্ছেন। তিনি ক্ষমতা নিয়েছেন প্রায় এক বছর। আর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের ঘটনা তার সেই ক্ষমতা নেয়ার কয়েক মাস আগের। এক্ষেত্রে একটি জোরালো ব্যাখ্যা হলো, তিনি হয়তো এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন যে, মিয়ানমারকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হলে তাতে দেশটিকে চীনের হাতে আরেকটু বেশি তুলে দেয়া হবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুনানি হয়েছে। সেখানে আইন প্রণেতারা মাইক পম্পেওকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি অবস্থান নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। ডিসেম্বরে প্রতিনিধি পরিষদ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে ‘গণহত্যা’ আখ্যায়িত করে একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা