২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

বাণিজ্যে সামুদ্রিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সহজ করতে জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ওমানে অনুষ্ঠিত ৮ম ভারত মহাসাগর সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন - ছবি : বাসস

বাণিজ্যে সামুদ্রিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সহজ করতে জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন। ভারত মহাসাগর এবং এর বাইরে থাকা সকল জাতির জন্য একটি উজ্জ্বল, আরো সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সামুদ্রিক যোগাযোগ সহজতর করা এবং বাণিজ্য বাধা হ্রাস করার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ওমানের রাজধানী মাস্কাটে চলমান অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলনে ‘মেরিটাইম সাপ্লাই চেইন শক্তিশালীকরণ: বাধা অতিক্রম এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক অধিবেশনের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামুদ্রিক সংযোগ সহজতর করতে হবে, বাণিজ্য বাধা কমিয়ে আনতে হবে।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘পণ্য, সেবা ও জনগণের দক্ষ চলাচলের সুবিধার্থে, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, পানি সহযোগিতা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং বৈশ্বিক জনসাধারণের পণ্যের ন্যায্য প্রবেশাধিকারের অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ সামুদ্রিক সহযোগিতাকে জোরালো গুরুত্ব দিয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি স্থিতিশীল এবং উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সম্ভাব্য সমস্ত ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার সুযোগগুলো খুঁজে বের করা জরুরি।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা (বাংলাদেশ) ভারত মহাসাগর জুড়ে আমাদের অংশীদারিত্ব জোরদার, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং এই অঞ্চলের অসাধারণ সুযোগগুলো গ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমস্ত উপকূলীয় দেশ, সেইসাথে আশেপাশের সমুদ্র এবং উপসাগরের, প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিশ্বাস, সম্মান এবং অভিন্ন স্বার্থে একসাথে কাজ করা উচিত।’

এ সময় উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল সামুদ্রিক রুটে দুর্বলতার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জ্বালানি সরবরাহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

নিয়ন্ত্রক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং অন্যদের মধ্যে অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার সামুদ্রিক নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’

উপদেষ্টা ভিসা ব্যবস্থাকে বিশেষ করে পদ্ধতি এবং সমুদ্রযাত্রীদের জন্য অন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজ করার মাধ্যমে ভিসা উদারীকরণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেন। বন্দর জট, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রক, অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক সমস্যা, সাইবার আক্রমণ, জলদস্যুতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মতো অনেক চ্যালেঞ্জের জন্য সামুদ্রিক সরবরাহ শৃঙ্খল ঝুঁকিপূর্ণ, যা মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনের দক্ষতাকে ব্যাহত করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এ সকল চ্যালেঞ্জ এবং অন্যান্য ভূ-অর্থনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত কারণগুলোর জন্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই দুর্বলতাগুলো মোকাবেলা করতে এবং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘মহাসাগরগুলো কেবল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি নয়, খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘মেরিটাইম সাপ্লাই চেইনকে শক্তিশালী করার জন্য প্রযুক্তি, অবকাঠামোগত উন্নতি, কৌশলগত পরিকল্পনা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল এবং আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি জড়িত। আমাদের অবশ্যই সংরক্ষণ এবং সমুদ্র এবং উপকূলীয় সম্পদের টেকসই ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে এই সম্পদের ব্যবহার সমুদ্র ও উপকূলীয় পরিবেশের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ না হতে পারে।’

একটি সমুদ্র উপকূলীয় রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে সামুদ্রিক কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল কারণ এটি ভারতীয় মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ওমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অষ্টম ভারত মহাসাগর সম্মেলন। এই বছর ভারত মহাসাগর সম্মেলনের থিম হল ‘সমুদ্র অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্তের যাত্রা। সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ অন্য দেশের প্রতিপক্ষের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে পারেন।

বাসস


আরো সংবাদ



premium cement