ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও স্বার্থে এগিয়ে যাবে : প্রণয় ভার্মা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৪৯
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, ‘তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের অংশীদারিত্ব অবশ্যই উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষকে উপকৃত করবে এবং তাদের সম্পর্ক সবসময় জনকেন্দ্রিক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংযোগের বাস্তবতা এবং আমাদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সুবিধার যৌক্তিকতাই আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নেবে।’
ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তারা একটি ‘গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বাংলাদেশকে সমর্থন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সাথে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক, দূরদর্শী এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সম্পর্কের সন্ধান অব্যাহত রাখবে, যেখানে জনগণই হবে প্রধান অংশীজন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
উপদেষ্টা বলেন, বিগত বছরগুলোতে দু’দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গণফোরামের এমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ রাজনৈতিক নেতারা, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, ব্যবসায়ী নেতা, সম্পাদক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সেলিব্রেটিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সময় হাইকমিশনার ভার্মা বলেন, তারা বাংলাদেশের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে ‘অত্যন্ত গুরুত্ব’ দিয়ে দেখেন এবং বাংলাদেশের জনগণের আগামীর যাত্রায় মঙ্গল কামনা করেন।
হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো জোরদার হয় এই বিশ্বাস থেকে প্রতিবেশী হিসেবে আমরা সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করি। আমাদের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি আন্তঃসম্পর্কিত।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই বঙ্গোপসাগরের শান্তি ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ‘পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।’
হাইকমিশনার ভার্মা বলেন, তাদের পারস্পরিক আন্তঃসংযোগ এবং অংশীদারিত্বমূলক আন্তঃনির্ভরশীলতা দ্রুত পরিবর্তিত সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সমাজ, জনগণ এবং ব্যবসায়কে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে যে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটেছে এবং যা এই অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করেছে— তা পারস্পরিক সংবেদনশীলতার ফলাফল, যা আমরা একে অপরের উদ্বেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি দেখিয়েছি।’
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দুটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমাজের কথা পুনর্ব্যক্ত করে ভার্মা বলেন, তারা পরস্পর এই অঞ্চলকে অনেক কিছু দিতে পারে। যখন তারা একসাথে কাজ করে এবং তাদের ভৌগোলিক নৈকট্যকে নতুন সুযোগ হিসেবে রূপান্তরিত করে।
পঁচাত্তর বছর আগে ১৯৫০ সালে ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের জনগণ তাদের গণপরিষদের মাধ্যমে নিজেদের সংবিধান রচনা করেছিল এবং ভারতকে একটি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছিল।
এই ৭৬ বছর ভারতের জন্য দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্ত হয়ে একটি আধুনিক সক্ষম জাতি হিসাবে রূপান্তর একটি অসাধারণ যাত্রা। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী মানবতার অগ্রগতিতে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করেছে।
এই রূপান্তর শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রেই নয়, সুপ্রশাসনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতীয় এই কূটনীতিক বলেন, ‘এটি প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের ক্ষমতায়নের বিষয়। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়ন সুরক্ষিত করার বিষয়।’
ভার্মা বলেন, ভারতের বিশাল আকার, ক্ষমতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতি হিসাবে ভারতের রূপান্তর আজ নতুন সক্ষমতা তৈরি করছে এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, এই যাত্রায় বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অভিন্ন ইতিহাস ও ভৌগোলিক অবস্থানে যুক্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অভিন্ন ত্যাগের কারণেও আবেগগতভাবে সংযুক্ত।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক সবসময়ই জনকেন্দ্রিক। সীমান্তের দু’পাশে পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সংযুক্ত। সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের প্রতি আমাদের অভিন্ন ভালোবাসা আমাদের বন্ধনকে সংজ্ঞায়িত করে।’
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কাজগুলো সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে সংযুক্ত করেছে। নৃত্য, থিয়েটার ও সিনেমার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকেও সংযুক্ত করেছে। দুটি জাতির মানুষের মধ্যে একটি গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে— যা পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধাকে উৎসাহিত করে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি নয়াদিল্লির কর্তব্য পথ থেকে ৭৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে জাতিকে নেতৃত্ব দেন।
সংবিধান প্রণয়নের ৭৫ বছর এবং জন-অংশীদারিত্বের উপর বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ঐক্য, সাম্য, উন্নয়ন এবং সামরিক দক্ষতার এক অনন্য মিশ্রণে এ বছর দিবসটি উদযাপন করা হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো এমপি।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলোতে ‘জন অংশীদারি’ বাড়ানোর ভারত সরকারের লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় ১০ হাজার বিশেষ অতিথিকে প্যারেড প্রত্যক্ষ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের এই বিশেষ অতিথিরা ‘স্বর্ণিম ভারত’র স্থপতি। এদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরা অবদান রাখা ব্যক্তি এবং যারা সরকারের প্রকল্পগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা