বাংলাদেশের জন্য সুদের হার কমানোর কথা ভাবছে চীন : রাষ্ট্রদূত
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:১৫
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চীন বাংলাদেশের জন্য ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য ঢাকার অনুরোধ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেনের নির্ধারিত চীন সফরের এক দিন আগে তিনি আজ এ কথা জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চীনের রাষ্ট্রদূত এখানে তৌহিদ হোসেনের সাথে দেখা করেন এবং ‘পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবহিত করেন যে চীন বাংলাদেশের জন্য সুদের হার কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেইজিং ঢাকার পূর্ববর্তী অনুরোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের সাথে পানি প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের একটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত।
তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘চীন বাংলাদেশের সর্বকালের, সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু এবং তারা দৃঢ়ভাবে সরকার নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
তৌহিদ হোসেন সোমবার পাঁচ দিনের সরকারি সফরে বেইজিং যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার এটা হচ্ছে চীনে প্রথম সফর।
রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আরো জানান যে আসন্ন সফরকালে চীনা পক্ষ বাংলাদেশের সাথে পানি প্রবাহ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর আগে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।
অন্যদিকে উপদেষ্টা বাংলাদেশীদের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডের নিকটবর্তী কুনমিংয়ে কমপক্ষে তিন থেকে চারটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল মনোনীত করতে চীনকে অনুরোধ করেছেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে একটি পূর্ণাঙ্গ তৃতীয় স্তরের চীনা হাসপাতাল স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ জমি এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করতেও প্রস্তুত।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘চীন বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য সবকিছু করবে।’
রাষ্ট্রদূত এ সময় হোসেন ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি আলোচনার জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত ও উপদেষ্টা উভয়ই আশা প্রকাশ করেছেন, হোসেনের চীন সফর দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে।
এই সফর ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করার বছরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, তার সফর দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত ও কারিগরি সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গভীর সমঝোতা, বন্ধুত্ব ও প্রাণবন্ত অংশীদারিত্বকে আরো জোরদার করবে।
হোসেন চীনের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে পুনরায় ফিরে যাওয়ার জন্য ঢাকা ‘খুব জোরালো’ এবং ‘সক্রিয়’ চীনের ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ইয়াও পুনর্ব্যক্ত করেছেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডাকে সম্মান করে।
তিনি আরো বলেন, চীন বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ চীনে বাংলাদেশী পণ্যের ১০০ শতাংশ শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকারের প্রশংসা করে এবং আশা প্রকাশ করেন যে এলডিসি-উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর ধরে ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই বাজার প্রবেশাধিকার অব্যাহত থাকবে।
জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমের পাশাপাশি, এ বছর বাংলাদেশী পেয়ারা ও কাঁঠাল চীনের বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশে ফল সংরক্ষণ ও সংরক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চীনা উচ্চ প্রযুক্তির শক্তি সাশ্রয়ী সহায়তার জন্য উপদেষ্টা অনুরোধ করেছেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের আওতায় আরো রেল যাত্রীবাহী কোচ যোগ করার জন্য হোসেন চীনের সহায়তা চেয়েছেন।
বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের আমন্ত্রণে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ২০-২৪ জানুয়ারি চীনে সরকারি সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হোসেন চায়না ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং সাংহাই ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজে বক্তৃতা দেবেন এবং বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সাংহাইতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে আলেঅচনা করার কথা রয়েছে।
সূত্র : বাসস