০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,
`

বাংলাদেশী পর্যটক কমেছে ভারতে, ব্যবসায় স্থবিরতা

বাংলাদেশী পর্যটক কমেছে ভারতে, ব্যবসায় স্থবিরতা - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে পট-পরিবর্তনের ফলে ভারতে পর্যটক সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। আর এর ফলে ভারতে এর নেতিবাচক প্রভাব সব ধরনের ব্যবসাতেই পড়ছে। পোশাক থেকে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী- সব ব্যবসাতেই পর্যটক কমে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে মন্দা।

বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল করোনা। এখন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভ্রমণ, চিকিৎসা বা ব্যবসার কাজে যারা নিয়মিত ভারতে আসেন, তারা সীমান্ত পারাপার কমিয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় অভিবাসন দফতরের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অনেকটাই কমবে ভারতে আগত বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা।

পত্রিকাটি জানায়, গত ১০ বছরের হিসাব বলছে, ভারতে আসা পর্যটকদের সংখ্যায় আমেরিকার পরই বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরের হিসাব অবশ্য গোলমেলে। ২০১৯ সালে ভারতে আসেন ২৫,৭৭,৭২৭ জন বাংলাদেশী। পরের তিন বছর করোনার ধাক্কায় ওই সংখ্যা অনেকটা কমে যায়। ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ লাখের কম পর্যটক এসেছিলেন ভারতে। ২০২১ সালে আড়াই লাখেরও কম। ২০২৩ সালে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১২,৭৭,৫৫৭ জন। আবার ২০২৩ সালে পর্যটক সংখ্যা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়ে ২১ লাখের বেশি হয়। কিন্তু চলতি বছরে অগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা ১৩ লাখেও পৌঁছয়নি।

আনন্দবাজার জানায়, শেষ চার মাসের হিসাব এখন পর্যন্ত না মিললেও পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে আগস্ট মাস থেকেই। সাধারণভাবে প্রতি মাসে দেড় লাখ থেকে দু’লাখ বাংলাদেশী পর্যটক ভারতে আসেন। গত জুন মাসে সেটা দু’লাখ টপকে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই থেকেই বাংলাদেশে অস্থিরতার জন্য তা কমতে শুরু করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার মাস আগস্টে সংখ্যাটা এক লাখেও পৌঁছয়নি। ওই মাসে ভারতে এসেছিলেন ৯৯,১৭৩ জন। পরের মাসগুলোতে চূড়ান্ত হিসাব না পাওয়া গেলেও অভিবাসন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘চলতি বছরে অগস্ট পর্যন্ত মোট ১২,৮৫,৭৮৩ জন বাংলাদেশী ভারতে এসেছেন। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে বছর শেষে সংখ্যা ১৫ লাখে গিয়ে থেমে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।’

ভারতীয় পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনেও বাংলাদেশি পর্যটক কমে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে সংসদে তথ্য পেশ করলেও কোন রাজ্যে কত পর্যটক এসেছেন, সে হিসাব তার মন্ত্রণালয় আলাদা করে রাখে না বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। মন্ত্রী বিস্তারিত না-জানালেও বাংলাদেশী পর্যটকদের একটা বড় অংশই পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এমনকি চিকিৎসা, ব্যবসা এবং ভ্রমণের জন্য তাদের বড় অংশ কলকাতাতেই থাকেন। সেই সংখ্যাও খুবই কমেছে বলে জানাচ্ছেন পর্যটকদের উপরে নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা।

আনন্দবাজার জানায়, কলকাতায় এসে বাংলাদেশীরা মূলত থাকেন মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায়। এখানকার সদর স্ট্রিট, কিড স্ট্রিট, মার্কুইজ় স্ট্রিটে প্রায় সারা বছরই গিজ গিজ করেন বাংলাদেশীরা। এই এলাকার হোটেল, রেস্তোরাঁ থেকে মুদ্রা বিনিময়কারী ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের উপরেই বেশি নির্ভর করেন। সকলেই যে সমস্যায় তা জানিয়েছেন নিউ মার্কেটের শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে পর্যটক নেই বললেই চলে। তার প্রভাব সব ধরনের ব্যবসাতেই পড়ছে। পোশাক থেকে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম- সব ব্যবসাতেই পর্যটক কমে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে।’

এতে আরো বলা হয়, গত জুলাই থেকে কলকাতার চিকিৎসা-পর্যটনও ধাক্কা খেয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির দাবি, বাংলাদেশী রোগীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ হয়ে গেছে। সেটা ক্রমশ আরো কমছে। তবে এর একটা বড় কারণ ভিসা পাওয়ার সমস্যাও। জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ছাড়’ দেয়া হলেও তুলনায় রোগী কম। দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার মুকুন্দপুর এলাকায় অনেক বাড়িতেই চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশী রোগীর পরিবার থাকে। কিন্তু সেই ব্যবসায় এখন মন্দা। ওই ব্যবসার সাথে জড়িত অমিতাভ করের কথায়, ‘রোগী নেই! ফলে রোগীর পরিবারও নেই। শুধু বাড়িভাড়াই নয়, এই এলাকার অন্য ব্যবসায়ীরাও সমস্যায়। এখানে বেশি কেনাকাটা মূলত বাংলাদেশের পর্যটকেরাই করেন।’


আরো সংবাদ



premium cement

সকল