আগামী বছর রোহিঙ্গা বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত জাতিসঙ্ঘের
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২১
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় সীমার রূপরেখা অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রণয়নে ২০২৫ সালে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের জাতিসঙ্ঘ সম্মেলন আয়োজনের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ৭৯তম ইউএনজিএর সপ্তাহব্যাপী উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বুধবার (স্থানীয় সময়) ইউএনজিএর তৃতীয় কমিটিতে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার পর জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ আবদুল মুহিত বক্তৃতা প্রদানকালে বলেন, ‘আমাদের জন্য এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্বার্থে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আজ এখানে প্রাপ্ত এক বার্তায় বলা হয়, ওআইসি ও ইইউ যৌথভাবে পেশ করা ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি ইউএনজিএর তৃতীয় কমিটিতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে, এটিকে ১০৬টি দেশ সমর্থন দিয়েছে। যা আন্তর্জাতিক সমর্থনের একটি উল্লেখযোগ্য স্তরে পৌঁছেছে।
প্রস্তাবটির মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০২৫ সালে যতটা দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের একটি উচ্চস্তরের সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য একটি ব্যাপক, উদ্ভাবনী, সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা প্রস্তাব করার জন্য সম্মেলনের লক্ষ্য সামগ্রিক সঙ্কট পর্যালোচনা করা।
এ বছর অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে প্রস্তাবটি অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলিমসহ সকল শরণার্থীর প্রত্যাবর্তনের অধিকার নিশ্চিত করার এবং স্বেচ্ছা, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন ও পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এতে হত্যা, ধ্বংস ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ, মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা, শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক- বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক সশস্ত্র বাহিনী অথবা সশস্ত্র গ্রুপে নিয়োগসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপব্যবহারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
প্রস্তাবে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সব দায়বদ্ধতা প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রস্তাবটি একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয় এবং সম্পূর্ণভাবে পাঁচ দফার ঐকমত্যের উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরা হয়।
রাষ্ট্রদূত মুহিত তার বিবৃতিতে বলেন, ঐক্যমতের মাধ্যমে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।
তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি কিভাবে একটি জটিল ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা বর্ণনা করেন।
এ সঙ্কটের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় গত সাত বছরে কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি বলে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।
আজ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাব দু’টির কথা উল্লেখ করে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা পরিকল্পনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়নের ওপরও জোর দেন।
সূত্র : বাসস