১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হাসিনাকে ভারতে না-রাখলেই দিল্লির জন্য ভালো অপশন হতো!

শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

এই মুহূর্তে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের মধ্যে একটি খুব বড় অস্বস্তির উপাদান হলো ভারতের মাটিতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি!

৫ অগাস্টের পর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার জানিয়েছে, সে দিন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে ‘সাময়িক’ আশ্রয় চেয়েছিলেন বলেই তা মঞ্জুর করা হয়েছিল। অন্তত একবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এটাও উল্লেখ করেছেন, ‘সুরক্ষার কারণে’ তাকে এ দেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

মূল কারণটা যা-ই হোক, বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে গত জুলাই-অগাস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থান যার শাসনের বিরুদ্ধে ছিল, সেই শাসক নিজেই এখন প্রতিবেশী দেশের আশ্রয়ে ও আতিথেয়তায় রয়েছেন।

বহু পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন, সেই অভ্যুত্থানের যেহেতু একটা ভারত-বিরোধী মাত্রাও ছিল – কারণ ভারতের সমর্থন ছাড়া এভাবে শেখ হাসিনার পক্ষে এতদিন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা অসম্ভব হতো বলে আন্দোলনকারীরা ধারণা করতেন– আর সেই ভারতই যখন শেষমেশ অপসারিত প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দিল, তাতে কূটনৈতিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস আরো জোরালো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নিজে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতের মাটিতে বসে শেখ হাসিনা যেন রাজনৈতিক বিবৃতি না-দেন, ভারতকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সম্প্রতি স্বীকার করেছে, শেখ হাসিনার মুখে লাগাম পরানোর কথা তারা একাধিকবার ভারতকে বলেছে– কিন্তু তাতে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এর পাশাপাশি ‘গণহত্যা’র বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে যাতে বাংলাদেশে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়, সে জন্য তাকে ভারতের কাছে ফেরত চাওয়ার কথাও বলেছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা। দু’দেশের মধ্যেকার প্রত্যর্পণ চুক্তির কথাও তুলেছেন তাদের কেউ কেউ।

সম্ভবত এটা জেনেই, যে ভারত তাকে কখনো বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না, কিন্তু তাতে কূটনৈতিক সম্পর্কের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।

দিল্লিতে প্রথম সারির থিঙ্কট্যাঙ্ক মনোহর পারিক্কর আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো তথা বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ স্ম্রুতি পট্টনায়ক সেই প্রথম দিন থেকে বলে আসছেন, শেখ হাসিনাকে ভারতে না-রাখতে হলেই দিল্লির জন্য সেটা সবচেয়ে ভালো অপশন হতো!

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, 'আমি এখনো মনে করি প্রথমেই শেখ হাসিনা যদি তৃতীয় কোনো দেশে চলে যেতে পারতেন, সেটা দিল্লির জন্য সেরা সমাধান হতো। হয়তো শেখ হাসিনার জন্যও!'

'কিন্তু যেহেতু সেটা সম্ভব হয়নি এবং শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো ছাড়া এখন ভারতের সামনে কোনো উপায় নেই– তাই এটার পরিণাম (কনসিকোয়েন্স) আমাদের এখন ভোগ করতেই হবে।'

এই পরিণামের একটা দিক হলো ঢাকার নতুন সরকারের সাথে কূটনৈতিক মূল্যে দাম চোকানো।

অগাস্টের মাঝামাঝি ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ সাময়িকীকে পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, "বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত কখনো নাক গলায় না, এই ‘মিথ’টাকে বেআব্রু করে দিয়েছিল শেখ হাসিনাকে ভারতে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা।”

ফলে ভারতের সমর্থনেই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে ছিলেন- বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে জল্পনার আকারে থাকা এই মতবাদটা এখন এক ধরনের ‘কনফার্মেশন’ পেয়ে গেছে বলে অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, এবং একই কারণে ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্কও তিক্ত থেকে তিক্ততর হচ্ছে।

কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতির স্বার্থে ভারত কি ভবিষ্যতে কখনো শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে?

কোনো প্রশ্নই ওঠে না। প্রথম কথা, বাংলাদেশে তিনি সুষ্ঠু বিচার পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তাই নেই। কেন ভারত তাকে একটা ক্যাঙ্গারু কোর্টের মুখে ঠেলে দিতে যাবে?'

'দ্বিতীয়ত, আজ যদি ভারত শেখ হাসিনার সংকটের মুহূর্তে তার পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের নেইবারহুডে কোনো দেশের কোনো নেতাই ভারতের বন্ধুত্বে আর কখনও ভরসা রাখতে পারবেন না,' বিবিসিকে বলছিলেন ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ টিসিএ রাঘবন।

ফলে ধরেই নেয়া যেতে পারে শেখ হাসিনা এখন লম্বা সময়ের জন্যই ভারতে থাকছেন– এবং যতদিন ধরে সেটা ঘটছে, ততদিন ঢাকা ও দিল্লির মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্কটা স্বাভাবিক হওয়াটা খুবই কঠিন!

সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement