আমিরাতে ক্ষমার মেয়াদ বাড়ল ২ মাস, বাংলাদেশীরা কি সুযোগটি নেবে
- এস.এম.ফয়জুল্লাহ শহীদ, দুবাই থেকে
- ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪, আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫
আগের ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার আরো দু'মাস সময় বাড়িয়েছে। সকল অবৈধ অভিবাসী যাতে এই শেষ সুযোগে তাদের অবস্থান বৈধ করতে কিংবা দেশত্যাগ করতে পারে, সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আগের দু'মাসে বাংলাদেশীরা তেমন সাড়া না দেয়ায় এই সুযোগ কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন ওঠেছে।
এক সিনিয়র অভিবাসন কর্মকর্তা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অভিবাসী নাগরিকদেরদের জন্য (১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) দেয়া ভিসা অ্যামনেস্টির শেষ সুযোগটি বাড়িয়ে (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে)। তিনি বলেন, 'যদি আপনি কোনো চাকরির প্রস্তাব পাওয়ার অপেক্ষায় এখনো থেকে থাকেন, তবে এখনই দেশে ফিরে যান এবং পুনরায় আসুন।'
খালিজ টাইমস জানায়, দুবাইয়ের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ রেসিডেন্সি অ্যান্ড ফরেনার্স অ্যাফেয়ার্স (জিডিআরএফএ) দুবাইয়ের কাস্টম হ্যাপিনেস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালেম বিন আলি বলেন, 'এই দুই-চার মাসের সাধারণ ক্ষমার সুবিধা গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ইউএইতে পুনঃপ্রবেশের নিষেধাজ্ঞা নেই। তাদের কোনো রকম জরিমানাও করা হয়নি।'
মূলত গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিনা জেল জরিমানায় দেশত্যাগ কিংবা আমিরাতে তাদের অবস্থান বৈধকরণের জন্য এ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়।
এ ঘোষণায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী তাদের অবস্থান বৈধ করেছেন বলে জানিয়েছেন আবুধাবি দূতাবাস ও দুবাইয়ের শ্রম কাউন্সেলর। তবে যারা দূতাবাস, কনস্যুলেট, ইমিগ্রেশন সেন্টার, তাসহিল বা আ'মের সেন্টারে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে এসেছেন, তাদের ৯৫ শতাংশই বৈধ হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন, বাকি ৫ শতাংশ দেশে ফিরতে চান বলে জানিয়েছেন।
কাউন্সিলর বলেন, 'সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ১০-১২ লাখ। এর মধ্যে বৈধ অভিবাসী যদি ধরা হয় ৯ লাখ, তাহলে বাকি তিন লাখ অভিবাসীর হিসাব গেল কোথায়? এর একটি বড় অংশ এদেশে অবৈধই রয়েই গেছেন।'
অথচ সরকার ও দূতাবাস যথেষ্টই ‘সক্রিয়’ ছিল এবং এখনো আছে বলে দাবি করেন দুবাই কনসুলেট ও আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।
৩১ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল রাশেদুজ্জামান সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময়কালে বলেন, 'সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে ইচ্ছুকদের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে ছয় হাজার ৮৩৩টি। সেপ্টেম্বরে এক বছর মেয়াদের জন্য নবায়নকৃত পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে ৮১৭টি।'
তিনি আরো বলেন, 'সাধারণ ক্ষমার মেয়াদের সময়সীমার প্রতি দৃষ্টি রেখে সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট পাঠানোর বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দুবাই কনস্যুলেট অফিস ও উত্তর আমিরাত থেকে দেশে যেতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে আবুধাবি দূতাবাসের ইস্যুকৃত ট্রাভেল পারমিটের সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় শ'।'
করোনাভাইরাস মহামারী-পরবর্তী সময়ে আমিরাতে ভিজিট ভিসায় আসা বাংলাদেশীদের একটি বড় অংশ অবৈধ রয়ে গেছেন। ২০১২ সালের মধ্য অগাস্ট থেকে আমিরাতে চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত বাংলাদেশীর অনুপ্রবেশ, অব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ী বানিয়ে লাইসেন্স করা, তথ্য ও নানা কৌশলে ভিসা জালিয়াতিসহ নানাবিধ অপরাধ প্রবণতায় বাংলাদেশীদের জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের জন্য সাধারণ কর্মী ভিসা বন্ধ করে দেয় আমিরাত সরকার। এই সুবাদে বর্ধমান শ্রমবাজারের এই সুবর্ণ সুযোগ লুফে নিয়েছে ভারত, নেপালসহ আরো অনেক দেশ।
আরবদের গৃহকর্মী, ব্যক্তিগত গাড়িচালক, ফ্রি জোনসহ সীমিত কিছু ক্যাটাগরিতে ভিসা খোলা রাখা হলেও তার সুফল বাংলাদেশীরা তেমন একটা নিতে পারেননি। পরে ইনভেস্টর ভিসায় অনেকে এসে পড়ে পড়েন মহাবিপাকে। মহামারী-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশীদের জন্য ভিজিট ভিসা খুলে দেয়া হলে আদম ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে কিংবা ভাগ্য বদলের আশায় আড়াই থেকে তিন লাখ বাংলাদেশী আমিরাতে প্রবেশ করেন। তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবার নারী কর্মী। তারা আবার বৈধ কাজের চেয়েও অবৈধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী ওয়ার্ক ভিসা দিয়ে বৈধতা পেলেও উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে কিংবা ভিজিট ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়াসহ নানা কারণে বৈধ হতে পারেননি।
বাংলাদেশীরা সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে অনাগ্রহী কেন?
আমিরাত সরকারের ধারণা, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যাই বেশি। কেবল আবুধাবিতেই বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও কৃষি খামারে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অবস্থায় আছেন।
অনেকের ধারণা, ভিজিট ভিসায় আমিরাতে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া প্রান্তিক প্রবাসীদের সবার পক্ষে তিন-চার লাখ টাকা খরচ করে নতুন ভিসা লাগানো সম্ভব না হওয়া এর অন্যতম কারণ। তবে সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হলে দেশজুড়ে ‘পাকড়াও অভিযান’ হাতে নেয়া হতে পারে। এতে ধরপাকড় শুরু হলে আটককৃতদের ওপর কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছে দূতাবাস ও সরকারি সূত্রগুলো।
সময় শেষে ধরপাকড় কি হবে?
সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষে ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে আবাসিক এলাকা, বিপণী বিতান, কোম্পানির আবাসন ও শিল্প এলাকাগুলোয় জোরদার তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হতে পারে। এতে ধৃতদের আগের সব জরিমানা ও কারাদণ্ডসহ হতে পারে আমিরাতে পুনরায় প্রবেশে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সাজা। অবৈধ অভিবাসীদেরকে যেসব কোম্পানি কাজ দেবে তাদেরকেও গুনতে হবে মোটা অংকের অর্থদণ্ড।
সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ বাড়ানোতে কি লাভ হতে পারে?
যদিও কর্তৃপক্ষ বারবার সতর্ক করে দিচ্ছে যে এই সাধারণ ক্ষমার মেয়াদে যথাসাধ্য সুযোগ গ্রহণ করতে । তবে শেষ মুহূর্তে বাড়ানো আরো সময়ে আরো বেশি সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী দেশে প্রত্যাবর্তন কিংবা আমিরাতে তাদের অবস্থান বৈধকরণের সুযোগ পাবেন বলে অভিবাসী বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এর আগে ২০১৮ সালের অগাস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সর্বশেষ সাধারণ ক্ষমা বলবৎ ছিল। এসময় প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশী সেই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেন। তারও আগে ২০০৭ ও ২০১৩ সালে আরো দুটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষিত হয়েছিল এ নিয়ে এটা চতুর্থবারের মতো ক্ষমার সুযোগ ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা