১৬ অক্টোবর ২০২৪, ৩১ আশ্বিন ১৪৩০, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কর ফাঁকি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধে জাতিসঙ্ঘকে পররাষ্ট্র সচিবের আহ্বান

পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মো: জসিম উদ্দিন - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনা সরকারের একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার উল্লেখ করে কর ফাঁকি ও অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধে জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মো: জসিম উদ্দিন।

মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স লি জুনহুয়ার সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।

বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’-এর আকাঙক্ষা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চলমান সংস্কার কর্মসূচি সম্পর্কে তুলে ধরেন।

এই সংস্কার কার্যক্রম কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য, জাতিসঙ্ঘ ও বাংলাদেশের পাঁচ দশকের সম্পর্কের ভিত্তিতে, বিশেষত জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন পররাষ্ট্র সচিব।

এছাড়াও বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের সময়ে এবং উত্তরণ পরবর্তী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন তিনি। কোভিড-১৯ মহামারি এবং বৈশ্বিক সংঘাতের ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য এসডিজি অর্জন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে, পররাষ্ট্র সচিব, জাতিসঙ্ঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর অফিসের উন্নয়ন সহযোগিতাসহ, সামগ্রিকভাবে জাতিসঙ্ঘের অধিকতর সহযোগিতা কামনা করেন।

এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের নেতৃত্বে সাধারণ পরিষদে গত ৬ মে পল্লী উন্নয়ন দিবস সম্পর্কিত গৃহীত রেজ্যুলেশনে, জাতিসঙ্ঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টকে এই দিবস পালনের বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে নির্বাচন করায় স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব।

এ সময় আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জুনহুয়া, জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটির চলমান সভায় বাংলাদেশের সভাপতিত্বের প্রশংসা করেন এবং জাতিসঙ্ঘ সচিবালয় থেকে সর্বাত্মক সমর্থনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, বিশেষত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা খাতে সহায়তার মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশকে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে।

এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রকৃতপক্ষে একটি নতুন সূচনা এবং এলডিসি হতে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা থেকে সহায়তা অব্যাহত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এসডিজি বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি ২০২৫ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সম্মেলনে উদ্ভাবনী অর্থায়ন, টেকসই ঋণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কারসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহায়তাকে শক্তিশালী করার প্রয়াস থাকবে বলে জানান জুনহুয়া।

এই বৈঠকের আগে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মো: জসিম উদ্দিন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ক্লাইমেট অ্যাকশন ও জাস্ট ট্রানজিশনবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা সেলউইন চার্লস হার্টের সাথেও বৈঠক করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করাসহ প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত অন্যান্য বিপর্যয়ের কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি অনেক দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান’-এর জন্য ২০৫০ সাল পর্যন্ত ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হবে। অ্যাডাপ্টেশনের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু অর্থায়নের ঘাটতি এবং গৃহীত ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেন।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি জাতিসঙ্ঘের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন।

জলবায়ু সম্পর্কিত বৈশ্বিক আলোচনায় দীর্ঘদিন বাংলাদেশের নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন বিশেষ উপদেষ্টা হার্ট। কপ-২৯-এ বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পর্যায়ে অংশগ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অ্যাডাপ্টেশন ও রেজিলিয়েন্স নিশ্চিত করতে দেশভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির ওপরও জোর দেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন এলডিসি, এলএলডিসি এবং সিডস-এর জন্য জাতিসঙ্ঘের উচ্চ প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমার সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সংস্কার কর্মসূচিতে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা, এলডিসি হতে উত্তরণ এবং উত্তরণের সময় ও উত্তরণ পরবর্তী ধাপে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা এবং জাতিসঙ্ঘের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন তারা।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement