১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের সংস্কার উদ্যোগে জাতিসঙ্ঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

- ছবি : ইউএনবি

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি জাতিসঙ্ঘের জোরালো সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসঙ্ঘের পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিসবিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের সাথে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে, দেশের উত্তরণ, আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ এবং জাতিসঙ্ঘের সাথে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (ইউএসজি) রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এর সংস্কার প্রচেষ্টায় জাতিসঙ্ঘের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে।

বহুপাক্ষিকতার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং জাতিসঙ্ঘের সাথে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিনের প্রথম সফরে ১০ অক্টোবর নিউইয়র্কে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জাতিসঙ্ঘের সমর্থনকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব সমর্থনের নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করার জন্য ডিকার্লোকে ধন্যবাদ জানান।

সাক্ষাৎকালে তারা জাতিসঙ্ঘ শান্তি কাঠামোতে বাংলাদেশের অবদান এবং দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও আলোচনা করেন।

জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব ইউএসজির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ‘বৈশ্বিক মনোযোগের পাশাপাশি বৈশ্বিক পদক্ষেপের’ ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, যা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি করছে।

পুরো অঞ্চলে সম্ভাব্য ছড়িয়ে পড়ার দিকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমারের সঙ্কট সমাধান এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সহজতর করতে জাতিসঙ্ঘকে বৃহত্তর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

তিনি মহাসচিবের বিশেষ দূতকে বাংলাদেশের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তুলে ধরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবের কথা স্মরণ করেন এবং এ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতা কামনা করেন।

জবাবে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মধ্যে চলমান সহযোগিতার প্রশংসা করেন।

তিনি মূল ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কার উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে আরো সহযোগিতার প্রস্তাব দেন।

জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে, তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সেক্রেটারি জেনারেলের নতুন বিশেষ দূত জুলি বিশপ এই সমস্যাটি সামগ্রিকভাবে সমাধানে সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করবেন।

এর আগে, পররাষ্ট্র সচিব সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ‘নারীর অগ্রগতি’ শীর্ষক একটি বক্তব্য দেন।

তিনি তার বক্তব্যে নারী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এজন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি নারী শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ, নারীর কল্যাণ ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পররাষ্ট্র সচিব ১৯৯৫ সালের বেইজিং ঘোষণা ও প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন, সিইডিএডব্লিউ এবং উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি (ডব্লিউপিএস) অ্যাজেন্ডার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। ২০০০ সালে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন রেজুলেশন ১৩২৫ প্রণয়নে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত এ সময় আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement