আত্মার বিশুদ্ধতার কবি বিয়র্নসন
- সাঈদ চৌধুরী
- ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০৫
বিয়র্নস্টের্নে বিয়র্নসন (১৮৩২-১৯১০) সাহিত্যে নোবেলজয়ী তৃতীয় সাহিত্যিক। ১৯০৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তার মহৎ এবং বহুমুখী কবিতার প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে এই সম্মাননা দেয়া হয়। যার কবিতা সর্বদা অনুপ্রেরণার সতেজতা এবং আত্মার বিরল বিশুদ্ধতায় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
বিয়র্নসন ১৮৩২ সালে নরওয়ের কেভিকনে (KEVI KNE) ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের সৌকর্যমণ্ডিত প্রাকৃতিক পরিবেশেই কেটেছে তার শৈশব।
স্কুলে অধ্যয়নের সময় তৎকালীন বিখ্যাত লেখকদের রচনা অত্যন্ত মনোযোগসহকারে পড়তেন। তিনি স্যার ওল্টার স্কটের ছোটগল্পের মুগ্ধ পাঠক ছিলেন। সমকালীন শীর্ষ সাহিত্যিকদের লেখার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণও করতেন।
অবশ্য নাট্য সমালোচনার মাধ্যমে সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন বিয়র্নসন। তখন সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন। তবে খুব কম সময়ের মধ্যে একজন মৌলিক লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
বিয়র্নসন দ্রুততম সময়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠার উচ্চাকাক্সক্ষা লালন করতেন। অন্যের সমালোচনা করতে গিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। এতে অগ্রসর লেখকদের সঠিক মেজাজটি পাঠককে উপহার দিতে পেরেছেন।
১৮৫৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি অসলোতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সাহিত্য পর্যালোচনা করতেন। এতে সাহিত্য সমালোচক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। পাশাপাশি ফিচার, প্রবন্ধ ও সামাজিক নাটক লিখেছেন। তখন নাটক রচনায় সর্বাধিক সফলতা পেয়েছেন। নরওয়ের নাট্যশৈলীকে তিনি ডেনীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করেছেন।
তবে, সুয়েডীয়রা তাকে দাম্ভিক ও অহঙ্কারী বলে ভাবত। একদিন সুয়েডীয় সংবাদ সম্মেলনে বিয়র্নসন চমৎকার বক্তৃতা দেন, যার বিষয় ছিল সুইডেন ও নরওয়ের ভ্রাতৃত্ব এবং মৈত্রী। এরপর তার সম্পর্কে সুয়েডীয়দের ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটে।
একটি যুগান্তকারী উপন্যাস (SYNNØVE SOLBAKKEN) লেখার পর তার খ্যাতি নরওয়েময় ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি নরওয়ের বাইরেও পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। বিশেষ করে ডেনমার্কে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
রাজনৈতিকভাবেও সক্রিয় ছিলেন বিয়র্নসন এবং ক্রমবর্ধমান নরওয়েজিয়ান জাতীয়তাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি সুইডিশ-নরওয়েজিয়ান ইউনিয়নের সমালোচক ছিলেন। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানাতেন। শান্তির প্রতি তার অঙ্গীকারের কারণেই তিনি নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সদস্য হন।
১৮৫৪ সালে পড়াশোনা শেষে বিয়র্নসন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। অসলোর একটি প্রভাতী দৈনিক পত্রিকায় (MARGENBLADET) যাত্রার সমালোচক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই সাথে চলে নাট্যচর্চা ও রচনা। ১৮৫৭ সালে বার্জেন শহরে থিয়েটারের মালিক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। তখন খ্যাতিমান সুন্দরী অভিনেত্রী কেরোলিন রেইমার্সের সাথে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৮৫৯ সালে বিয়র্নসন অসলোতে ফিরে আসেন। এখানে AFLENBLADET নামে এক সান্ধ্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অবশ্য কিছু দিন পর এই কাজ ছেড়ে দিয়ে ইতালি চলে যান। ১৮৬৫ সালে ইতালি থেকে আবার নরওয়ে ফিরে অসলোর ক্রিম্বানিয়া থিয়েটারের প্রধান কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিয়র্নসন প্রথম নরওয়েজীয় নাট্যকার যিনি সমাজের অসঙ্গতি, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়গুলোকে নাটকের মধ্যে নিয়ে আসেন। তার গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত নাটকের নাম THE GRUNTLE-যা ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। WHEN THE NEW WINE BLOOM ছিল তার সর্বশেষ নাটক।
ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- আর্ন (ARNE) : অ্যা স্কেচ অফ সরওয়েজিয়ান কান্ট্রি লাইফ-এ. স্ট্রাহান অনূদিত (১৮৬৬)। দ্য হ্যাপি বয় : অ্যা টেইল অব নরওয়েজিয়ান পিস্যান্ট লাইফ- সিভার ফ্রান্সিস অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত (১৮৭০)। সিনোভ সোলবাকেন-হাউটন মিফিন অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত (১৮৮১)। দ্য ওয়েডিং মার্চ-জি. মানরো অনূদিত (১৮৮২)। দ্য ব্রাইডাল মার্চ অ্যান্ড আদার স্টোরিস-হাউটন, মিফিন অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত (১৮৮২)। ক্যাপ্টেন মানসানা অ্যান্ড আদার স্টোরিস-হাউটন, মিফিন অ্যান্ড কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত (১৮৮১)। দ্য ফিশার মেইডেন-রাসমুস বি. অ্যান্ডারসন অনূদিত (১৮৮১)। রেইলরোড অ্যান্ড চার্চইয়ার্ড-জি. মানরো অনূদিত (১৮৮২)। ম্যানহিল্ড-রাসমুস বি. অ্যান্ডারসন অনূদিত (১৮৮৩)। থ্রি কমেডিস-আর. ফার্কুহারসন শার্প অনূদিত (১৯২৫)। থ্রি প্লেইস-এডুইন জর্কম্যান অনূদিত (১৮৮৯)।
বিয়র্নসন ১৯১০ সালে ৭৭ বছর বয়সে ফ্রান্সের প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম নরওয়েজিয়ান লেখক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিয়র্নসন মৃত্যুদণ্ড প্রতিরোধ, সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। (Reference : nobelprize.org, britishmuseum.org, litencyc.com, britannica.com, goodreads.com)
* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা