১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কৃষ্ণচূড়ার জীবন

-

প্রকৃতির সাথে জীবনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। সাহিত্যেও প্রকৃতি হয়ে ওঠে আনন্দময়। প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং রহস্য সাহিত্যে ফুটে ওঠে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙ লাল। সকালের সূর্যের রঙও লাল। আর লাল হলো বিজয়ের রঙ। সাহিত্যে লালের ব্যবহার চমৎকার। যেমন নজরুলের একটি কবিতায় আছেÑ ‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া।’
গ্রীষ্মের খরতাপে ধরা যখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তখন প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দিতে একটু শীতলতার ছোঁয়া নিয়ে হাজির হয় কৃষ্ণচূড়া। ঘনসবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া দুলে ওঠে প্রকৃতির আহ্বানে। ঝাঁঝালো রোদের উষ্ণতা ভেদ করে পথিকের চোখ আটকে যায় কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে। লালহলুদ, লালকমলা রঙের ফুলগুলো অবর্ণনীয় রূপে মেলে ধরে নিজেদের। এমন কোনো মানুষ নেই যে এই রূপের কাছে আটকে যায় না, একটু চোখ তুলে তাকায় না। একবার হলেও চোখ তুলে দেখে, হৃদয়ের মাঝে এক অনাবিল তৃপ্তি পেতে চায়। কারণ ফুল মনকে আন্দোলিত করে বরাবরই। জাগরিত করে ভালোলাগার জগতকে। আর সেই ফুল যদি হয় কৃষ্ণচূড়ার মতো এত সুন্দর তাহলে তো মন উড়বেই বসন্ত আর কৃষ্ণচূড়ায়। চির সবুজ এই বৃক্ষে বসন্তকাল থেকে ফুলের দোলা চলতে থাকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত। কৃষ্ণচূড়া বাংলাদেশের খুব পরিচিত একটি ফুল। শহর বন্দর নগর গ্রাম সব জায়গায় দেখা মেলে এই কৃষ্ণচূড়ার। উচ্চতায় ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হলেও এর ডালপালার বিস্তৃতি অনেক। চার পাশে ডালপালা শাখা-প্রশাখার বিস্তারে বেশ ঝোপালো হয় ও অনেকটা অঞ্চলজুড়ে এর ব্যাপ্তি থাকে, যার কারণে এই গাছ যথেষ্ট ছায়া দিতে পারে। এর পাতাগুলোও অনেক সুন্দর। গাঢ় সবুজ চিরল চিরল পাতাগুলো। ফুলদণ্ড লম্বা। একসাথে অনেক ফুল ফোটে। লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফুলগুলো এতই বেশি ফোটে দূর থেকে মনে হয় যেন কোথাও আগুন লেগেছে। বসন্ত থেকে ফুল ফোটা শুরু হয় গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত থাকে। কোথাও কোথাও শীতের শেষদিকে ফুল ফুটতে শুরু করে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। চমৎকার কারুকাজে সজ্জিত প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। ফুল আর পাতা মিলে খুব দৃষ্টিনন্দন হয়ে থাকে এই কৃষ্ণচূড়া। এই কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়, যদিও জঙ্গলে এটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলে এ বৃক্ষটি জন্মায়। এ বৃক্ষটি শুধু যে সৌন্দর্য বর্ধক তা নয়, এটি উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতেও বিশেষভাবে উপযুক্ত। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চির সবুজ। কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়া জন্মায়। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থাও সহ্য করতে পারে। মজার বিষয় হলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এই ফুল ফোটে। যেমন বাংলাদেশে সাধারণত মাঘ মাসের শেষ বা ফাগুনের শুরু থেকে ফুল ফুটতে শুরু করে আর ভারতবর্ষে সাধারণত ফাগুন-চৈত্র মাসে ফুল ফোটে। দৃষ্টিনন্দন এই ছায়া বৃক্ষটির বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (উবষড়হরী ৎবমরধ)। এটি ফ্যাবেসি (ঋধনধপবধব) পরিবারের অন্তর্গত। ফাগুনে ফোটা আগুনলাল এই কৃষ্ণচূড়া গুলমেহের নামেও পরিচিত।
পরিশেষে আল মাহমুদের একটি কবিতা স্মরণ করি। কবিতাটি ফেব্রুয়ারির ভাষাশহীদদের নিয়ে লেখা। তিনি লিখেছেনÑ ‘কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁকে ফুল ফুটেছে রক্তবরণ/ ফেব্রুয়ারির শহীদ ভাইয়ের মুখগুলোকে করছি স্মরণ।


আরো সংবাদ



premium cement