২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পাঠাভ্যাস জীবন বদলায়

-

একজন আমলা, পুলিশ কিংবা অন্য যেকোনো কর্মজীবী- যিনি নিয়মিত পড়াশোনা করেন, টুকটাক ভাবনাচিন্তা লিখেন, মোটকথা- পাঠাভ্যাসকেন্দ্রিক জ্ঞান চর্চা করেন, সে অন্যদের মতো অন্যায়ে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন না। পারার কথা নয়। যার মধ্যে শব্দের আলো প্রবেশ করেছে তার বিবেক ক্রিয়াশীল হয়। খুঁজলে পাবেন- দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কিংবা অন্যায় আচরণ-দাপট দেখানো ব্যক্তিদের তালিকায় পাঠক কর্মকর্তা, লেখক শ্রমজীবীকে পাবেন না। যারা জীবনের মাকসাদে ভোগ নির্ধারণ করেছেন তারাই সব অপকর্মের হোতা! অন্তত আমার অভিজ্ঞতায় বইপ্রেমিকে অপরাধী হিসেবে পাইনি। যিনি বই নাড়েন চাড়েন, দু’চার কথা লিখেন- তাদেরকে সদালাপী, উপকারী ও সৎ হিসেবে পেয়েছি। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
শিক্ষক মানেই জ্ঞানের চর্চাকারী হবেন- বাস্তবতার সাথে মিলছে না। যিনি যে বিষয় পড়ান সেই বিষয়ের দু’চারখানা বই থাকা, নেড়েচেড়ে দেখাকে যদি জ্ঞানচর্চার সম্পূর্ণ কাজ মনে করেন তবে আর তর্কে যাচ্ছি না। তবে আমি যে শিক্ষকদের কিংবা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কথা বলছি তিনি বা তারা জ্ঞানের সাগরে সাঁতরাবেন। জ্ঞান সাগরের বেলাভূমিতে জ্ঞানের নুড়ি কুড়াবেন। যে বিষয়ে পড়াবেন সে বিষয়ের সাথে বাস্তব দুনিয়াকে রিলেট করে দেবেন। এটি করতে হলে তাকে রিসোর্স পারসন হতে হয়! অধিক ক্ষেত্র বা সূত্র থেকে না জানলে এটি সম্ভব হয় না। শিক্ষকের দুর্নীতি পাঠে ফাঁকি দেয়া। জানানোর প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের হক আদায় না করা। যে শিক্ষক পড়ে অতঃপর পড়ান তিনি আর দশজনের মতো দুর্নীতি করেন না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারেন না।
বই আলোর উৎস। পাঠাভ্যাস সেই আলোককে অন্তরের মধ্যে সঞ্চালক। জ্ঞানের আলো যার মধ্যে প্রবেশ করে- সে খুনি হলেও তার খুনের তরিকা ভিন্ন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, জনগণের খাদেম কিংবা সাধারণ-অসাধারণ যে কেউ- যারা বইয়ের সাথে, জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত থাকেন তারা অন্যায় করেন না এবং প্রশ্রয়দান করেন না। কালো অক্ষর থেকে উদগীরণ করা আলো মানুষকে মানবিক করে গড়ে তোলে। বিবেককে শাণিত রেখে তবেই দায়িত্ববোধের বেদনা জিইয়ে রাখে। একজন অ-পড়ুয়া মানুষ যেভাবে অবিবেচক হতে পারে, সীমারের মতো কঠোর আচরণ করতে পারে, যত্রতত্র চোখ উল্টাতে পারে কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে- বইয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত একজন জ্ঞান আহরণের মৌমাছি সেভাবে সেটি কখনোই পারে না, করে না।
যে পড়ে এবং যে পড়ে না, যে জানে এবং যে জানে না কিংবা যে লেখে এবং যে লেখে না- এই দুই শ্রেণীর মানুষের মধ্যে তুলনা করে মানবিকতা মাপুন। আপনিই প্রমাণ পেয়ে যাবেন। জ্ঞান কিংবা লেখা সমাজ বদলাতে পারে কি-না এই প্রশ্নের জবাব বিতর্কের অবকাশ রাখে কিন্তু যার বই পড়ার অভ্যাস আছে, মনের ভাব প্রকাশের স্বভাব আছে সে বাধ্য হয়ে হলেও নীতিবোধ প্রয়োগ করতে প্রস্তুত থাকেন। অনেকগুলো চোখ তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে। যদি পড়া এবং না পড়া- দুটোরই সুযোগ থাকে তবে পড়ার পক্ষ নেবেন। হৃদয়কে শুদ্ধ করার জন্য, নিজেকে আলোকিত করার ক্ষেত্রে যতগুলো বিকল্প আছে তার মধ্যে সর্বোত্তম বিকল্প পড়া এবং পড়া। পড়ার সাথে সাথে চিন্তা করার জরুরত আরো বেশি।
বই আপনাকে পরিবর্তন করবে। ভেতর থেকে বাহ্যিকসহ স্থায়ী পরিবর্তন। পড়ার পরিবেশ আপনাকে মানুষ বানাবে। যে পড়ে, বিষয়ের গভীর জ্ঞান রাখে তার কাছে বসে দেখুন- সমৃদ্ধ হবেন। আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। বই যাদের চক্ষুশূল কিংবা বই কেনার ক্ষেত্রে যারা মনে করে বই, সে তো আমারও একখানা আছে- তাদের সাথে তর্কে/ঝগড়ায় আপনি জিতবেন না। যারা বোধের বদলে মাথা দিয়ে ঠেলে, যার মুখের জবাবে হাত ব্যবহার করে তারা এই আলোতেও বর্বর। বই পড়া ছাড়া সভ্যতার পরিবর্তন সম্ভব নয়। বই কেবল সেলফে সাজিয়ে রাখার জন্য নয়; বরং মস্তিষ্কের খোরাক তৈরির জন্য কিনুন। পড়বেন তো বদলাবেন। সমাজে যতজন ভালো লোক তাদের প্রত্যেকেই কমবেশি পড়ে। অথর্ব-বর্বর বইকে বিষের ভাণ্ডার মনে করে। কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে ভোগা রুচিহীনরা বই কেনাকে অপচয় মনে হয়। জ্ঞানের থেকে যাদের কাছে টাকার মূল্য বেশি- তাদের এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
কেবল বই পড়ার আন্দোলন দিয়ে এই সমাজ বদলে দেয়া সম্ভব। পাঠাভ্যাস বাড়ানো ব্যতীত জাতিকে সংশোধন করা প্রায় অসম্ভব। লোকমুখে শুনে সত্য জানা যায় না। সত্য ধর্মগ্রন্থের পৃষ্ঠায়, গল্প-কবিতার বুক থেকে খুঁজে খুঁজে বের করতে হয়। যে প্রজন্মের পাঠাভ্যাস নেই সে প্রজন্মের মূর্খতাই শক্তি। যারা পড়ে এবং যারা পড়ে না তাদের মধ্যে তুলনার প্রশ্ন অবান্তর। অজ্ঞতা যাদের শক্তি অহঙ্কার তাদের অস্ত্র। একজন বিনীত মানুষ, সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষ অবশ্যই পড়েন। বিশ্বের ধনীরাও কল্পনাতীত সময় বের করেন বইয়ের থেকে জীবনের অর্থ খোঁজার আশায়। বই মানুষের ক্ষুদ্রতাকে প্রকাশ করে। ভুল সংশোধন করতে সহায়তা করে। যে অধিক জানে তিনি সবচেয় বেশি চুপ থাকেন। শত্রু না বাড়াতে চাইলে, দুঃখ থেকে বাঁচার জন্য মনের মধ্যে ভুবন তৈরি করতে চাইলে পাঠের বিকল্প নেই। আপনি কী পড়বেন সে ব্যাপারে সিলেক্টিভ হতে পারেন। কিন্তু পড়বেন না অথচ মানুষ হবেন- অসম্ভব! কল্পন্তে সম্ভব!


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের হারের বৃত্তেই ম্যানসিটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে ইইউ’র ১০ লাখ ইউরো বরাদ্দ গোলান মালভূমিতে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব ৬ মাসের জন্য বাড়ালো জাতিসঙ্ঘ আইএসকে নির্মূল করার এখনই সময় : এরদোয়ান নির্বাচনী সময়ের বিষয়ে সরকারের ‘স্পষ্ট বক্তব্য’ চায় বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীরাও রাবিতে ৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, ৩৩ জনকে শাস্তি প্রকল্পের পুরো কাজ দেখতে ৯ জোনে তদারকি কমিটি সড়ক দুর্ঘটনাকে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে : তথ্য উপদেষ্টা করাচি থেকে জাহাজে আগের চেয়ে বেশি পণ্য এলো আগামী বছর দেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট : গোলাম পরওয়ার

সকল