১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি

-

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি কে? উত্তর হলো চন্দ্রাবতী। চন্দ্রাবতী কে? আজ জানব তার জীবনের না বলা কিছু কথা।
ড. দীনেশচন্দ্র সেনের মতে, চন্দ্রাবতীর জন্ম ১৫৫০ সালে কিশোরগঞ্জের পাতোয়ারি গ্রামে। তিনি সাহিত্যমনা একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য ধারার বিখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাস। দ্বিজ বংশীদাস তার কাব্যে বেহুলার দুঃখের চিত্র এবং একই সাথে চাঁদ সওদাগরের চরিত্রের দৃঢ়তা সুনিপুণভাবে তুলে ধরেন। তাই পরিবারের সাহিত্যিক প্রভাব চন্দ্রাবতীর উপরও পড়ে।
সাহিত্য অঙ্গনে চন্দ্রাবতীর একটি বড় কৃতিত্ব হলো তিনিই প্রথম কোন মহিলা কবি হিসেবে রামায়ণ অনুবাদ করেন। রামায়ণ অনুবাদ করার পেছনে রয়েছে প্রণয়ের এক করুণ ইতিহাস। সংক্ষেপে ঘটনাটি ছিল এমন :
চন্দ্রাবতীর বাল্যসখা ছিল জয়ানন্দ। বয়সের পরিণতিতে তা প্রণয়ে রুপ লাভ করে। ধীরে ধীরে তারা একে অপরের উপর গভীর প্রণয়ে আচ্ছন্ন হয়। কিন্তু কথায় আছে, ‘মানব মন সদা পরিবর্তনশীল। ভালো লাগা আর ভালোবাসাগুলোও নিত্য বদলায়। বদলায় মনের আকুতি’। তাই হয়েছে চন্দ্রাবতীর সাথে। চন্দ্রাবতীর এতকালের সখা তার থেকে দূরে সারে যায় কোনো এক মুসলিম রমণীর রূপে মুগ্ধ হয়ে। সৌন্দর্য মানুষকে আকৃষ্ট করে। করবে চিরকাল। তাই বলে ভালোবাসাটাই বিসর্জন দিতে হবে? হ্যাঁ, তাই করেছিল জয়ানন্দ।
চন্দ্রাবতী জয়ানন্দের বিরহে কাতর। মনের মানুষ যখন অন্যের হাত ধরে অদূরে চলে তখন তার বিদায়ের পথ নির্বাক হয়ে স্তিমিত দৃষ্টিতে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। বিরহ সইবে নাকি আত্মত্যাগ করবে এমন অবস্থায় উপনীত হয় চন্দ্রাবতী। প্রচণ্ড আত্ম-অভিমান নিয়ে দিনাতিপাত করতে থাকে চন্দ্রাবতী। সময় যায় স্রোত বয়ে যায় অকাতরে। চন্দ্রাবতীর সময় আর ফুরোয় না।
কিন্তু নিয়তি বারবার মানুষকে শিক্ষা দেয়। সেই শিক্ষা মানুষ গ্রহণ করে কেউবা করে না। জয়ানন্দ বুঝতে পারে তার বাল্যসখা চন্দ্রাবতীর ভালোবাসা ছিল নির্মোহ। তার বোধোদয় হয় এবং চন্দ্রাবতীর কাছে ফিরে আসে। কিন্তু অভিমানী চন্দ্রাবতী তাকে প্রতাখ্যান করে।
জয়ানন্দ এই অপমান সইতে না পেরে নদীতে প্রাণ বিসর্জন দেয়। এই দিকে চন্দ্রাবতী এই খবরে আরো মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা। কিন্তু চন্দ্রাবতী জীবনের এই গভীর বেদনা থেকে বের হয়ে আসতে চায়। তার জন্য সে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে শিবমন্দিরে উপাসনায় আত্মনিয়োগ করে।
‘মনের মন্দির যদি ভেঙে যায়
কাল বৈশাখের ঝড়ে
কুড়িয়ে নিয়ো, গড়ে তুলো আবার
মহান স্রষ্টার মন্দিরে।’
-মেহেদী হাসান
তাই করেছিল চন্দ্রাবতী। জগতের সব মোহ পরিত্যাগ করে শিবের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এ যেন পরম প্রশান্তির আশ্রয়, বেদনা লাগবের উপায়।
পিতার পরম মমতাও তাকে প্রণয় বেদনা ভুলতে সহযোগিতা করেছিল। পিতা দ্বিজ বংশীদাস আদেশ করেন রামায়ণ অনুবাদে আত্মনিয়োগ করতে। যাতে করে জীবনের বেদনাগুলো কিঞ্চিৎ ভুলে থাকা যায়।
পরম শ্রদ্ধেয় বাবার আদেশ পেয়ে রামায়ণ অনুবাদ করে চন্দ্রাবতী। সৃষ্টি হয়ে যায় ইতিহাস। প্রথম কোনো মহিলা কবি হিসেবে রামায়ণ অনুবাদ করেন চন্দ্রাবতী। অনুবাদে রাখেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। কিন্তু রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদটি করেছিলেন চন্দ্রাবতীর শত বছর পূর্বের কৃত্তিবাস ওঝা।
কবি চন্দ্রাবতী যে শুধু রামায়ণই রচনা করেছেন এমন নয়। বাংলা সাহিত্যের আরেক অমূল্য রতœভাণ্ডার ময়মনসিংহ গীতিকাও রচনা করেন চন্দ্রাবতী। ময়মনসিংহ গীতিকার দু’টি পালা কবি রচনা করেছিলেন। একটি হলো মলুয়া অপরটি দস্যু কেনারামের পালা।
ভালোবাসা সবার জীবনে আসে। কেউ পরিগ্রহ করে পরম সুখে দিনাতিপাত করে, কেউবা বিরহকে আঁকড়ে ধরে নতুনভাবে পথ চলে। সেই নতুন পথ চলাই বেছে নিয়েছিল বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি।


আরো সংবাদ



premium cement
‘আপত্তিকর ভাষা’ ব্যবহারে শাস্তি পেলেন জোসেফ শ্রীমঙ্গলে হত্যা মামলায় প্রেমিক গ্রেফতার জামায়াত নেতা কাজী ফজলুল করিমের মৃত্যুতে ড. রেজাউল করিমের শোক প্রকাশ বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে মাঠে থাকব : মুন্না আমতলীতে ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় জড়িতদের বিচার দাবি সিরিয়া নিয়ে আশা ও শঙ্কা ইসরাইলের সিরিয়ায় বাশারের পতনে ইসরাইল কতটুকু লাভবান অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ৫৭৯ কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ৫ এ দেশে রাজনীতি করতে হলে জনগণের সেবক হয়েই রাজনীতি করতে হবে : সেলিম উদ্দিন এখন সময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার : অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

সকল