একজন কবিকে নিজের বৈশিষ্ট্য বাঁচিয়ে রাখে
- আবু জাফর দিলু
- ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
উত্তরাধুনিক বা ভিন্ন নামীয় যা কিছুই বলি না কেন, অর্থাৎ সবাই যা লিখছে তা থেকে ভিন্নতা, স্বাতন্ত্র্যতা, ম্যাজিক চমক ইত্যাদি পরিভাষায় কবিতার নতুনত্ব বিকশিত হওয়া চাই। বর্তমানে লেখালেখিতে লক্ষণীয় কিছু কবির কবিতার ফ্যাশন শিরোনামহীন কবিতা। এটা কবির দুর্বলতা থেকেই হয়ে থাকে নিশ্চিত। কবিতার শিরোনাম আবশ্যিক একটি বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়ে খামখেয়ালির কোনো সুযোগ নেই। যে কবিতায় রসবোধ বা ভালোলাগা নেই, অনুরণন নেই বা কোনোরূপ বার্তা নেই সে কবিতা ঝুড়িতে পড়ে থাকার মতো। আর পাঠক হাতে গোনা কিছু ব্যতীত স্রোতের শাওলার মতো। স্রোতের তোড়ে যেমন শ্যাওলা ছোটে। অনেক কবিই যখন কবির কবিতা বোঝে না, পাঠক সেখানে কতটুকু দায়বদ্ধ রাখে। আর facebook পাঠক বলতে যা বুঝি হদ্দ দুর্বল পাঠক। পরিসংখ্যানগত এমন মন্তব্য করা হলেও এর ভালো দিকটাও তুলে না ধরলেই নয়। ফেসবুকে যারা বন্ধু রয়েছেন তার পরিসংখ্যান বাস্তব প্রেক্ষাপটে সংখ্যা অনুপাতে হাতেগোনা মোটামুটি একটি সংখ্যা প্রথিতযশা লেখক ও পাঠক লেখালেখি করে থাকেন। যারা স্বনামধন্য লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাদের বেশির ভাগ অংশই ফেসবুক মাধ্যমে লেখালেখি প্রকাশ করেন না। ফেসবুক এখন আন্তর্জাতিক একটি বিশাল মাধ্যম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সাহিত্য পড়ুয়ার সংখ্যা কম হলেও অনেকেই তাদের মনের অভিব্যক্তি ফেসবুকে প্রকাশ করে থাকে এবং ফেসবুকের সব লিখিয়েদের সব ধরনের লেখা কমবেশি পাঠ করে থাকে। মন্তব্যও করে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই সাহিত্য পাঠ করার কারণে পাঠের অভ্যাস ও জ্ঞানমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি আশা জাগানো বার্তা। কথায় বলে, পড়তে পড়তে পড়ুয়া, লিখতে লিখতে লিখিয়ে ও গাইতে গাইতে গায়েন। এভাবেই খুবই হাতে গোনা কেউ ভালো লেখকের কাতারে শামিল হওয়ার সুযোগ পান। এই স্তরে পাঠক থাকার কারণে লেখালেখিতে লিখিয়ের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। ফেসবুকে লক্ষণীয় মন খুশি বা ঘুষ মন্তব্য বা মোহমন্তব্য মানসম্পন্ন কিছু লেখক বাদে অধিকাংশ লিখিয়েকেই নর্দমার দিকে ধাবিত করছে। যে কবিতা একবার পড়লে আর দ্বিতীয়বার পড়ার ইচ্ছে জাগে না সে কবিতা কোনো গ্রেডের কবিতা ভেবে দেখার বিষয়। অনেকেই বা কেউ কেউ ডিকটেশন দিয়ে কবিতা লেখায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে তাদের মননশীলতার বিষয়টিও আমি তেমন বুঝে উঠতে পারি না। কেউ আছে গো-বেচারা জি হুজুর মার্কা আনুগত্যতায় তার অগোচরেই বিলীন হওয়ার পথে ধাবিত হতে থাকে। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, দেশ এবং দেশের বাইরে অসংখ্য কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ব্যাকরণবিদ, বাংলা বিভাগের ছন্দ, অলঙ্কার, অনুপ্রাস, উপেক্ষা, তুলনামূলক সাহিত্যতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ক শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশই কিন্তু সাহিত্যিক নয়। সাহিত্য রচনায় সবার জন্য এটা ধরাবাধা শর্তও নয়। তবে প্রয়োজনে একজন লেখকের জ্ঞান অর্জন তার সম্পূর্ণ নিজস্ব বিষয়। ডিগ্রিধারী না হয়েও তা সম্ভব। এর ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে। লেখালেখি প্রসঙ্গে এটাও আলোচনায় উঠে আসে, আমি কি লিখি? নাকি কেউ আমাকে দিয়ে লেখায়? লেখায় তো বটেই, আমরা বুঝি আর না বুঝি।
অন্তর্হিত ব্যতীত দিব্য চোখে যা লেখা হয় তা নিতান্তই ফরমাইশি ও নি®প্রাণ লেখা। লেখালেখির প্রাথমিক স্টেজে প্রকৃত অর্থে লিখিয়ের সত্তা ফুটে ওঠে না। এটিই স্বাভাবিক। ব্যতিক্রমী লেখক বাদে লেখনীতে সত্তা খুঁজে পেতে অন্তত দুই থেকে তিন-চার বছর সময়ক্ষেপণ করতেই হয়। এই স্টেজে অনুসরণ কিংবা অনুকরণ, শব্দ টোকানো, জোড়াতালি দেয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বদ্ধমূল ধারণায় বলা যায়, যে চারা রোদ বৃষ্টি ঝড় থেকে বঞ্চিত তার পক্ষে লিকলিকে হওয়া ব্যতীত নিজ পায়ে সটান দাঁড়িয়ে থাকা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। এমন কিছু লেখক বা কবি আছেন, যারা দিবানিশি কবিতা লেখার খোরাক হিসেবে টোকাইপনা প্যাটার্ন শব্দ খুঁজে ফিরেন এবং জোড়া তালি দিয়ে কোনো মতে একটি কবিতা দাঁড় করান। এসব কারণে এটাও বলতে শোনা যায়, কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা নাকি বেশি। ফেসবুকের কতিপয় কবিতা বাদে অসংখ্য কবিতা খবরের কাগজের মতো কবিতার আকরে দেখতে পাওয়া যায়। কার্বন বা প্যারোডি লিখিয়েরা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এরা এক দিন হেলায় সময় হারিয়ে খোঁড়া হতে বাধ্য। উত্তরাধুনিক কবিতা লেখা নিয়ে ব্যতিক্রমী কিছু মন্তব্যও পরিলক্ষিত হয়, গৎবাঁধা ৪০ কিংবা ৬০ বা ৭০ দশকের খুঁটিবান্ধা তিন মাত্রার ছন্দে অর্থাৎ স্বরবৃত্ত ছন্দ, মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখতেই হবে এটা আবশ্যক নয়। নতুন থেকে নতুন মাত্রা যোগ হোক। কিন্তু তাদের থেকে অদ্যাবধি পথ চলার মতো শ্রেয় মসৃণ পথ দেখানো বা আবিষ্কারমূলক পন্থা বা পথ প্রদর্শন পাওয়া যায়নি বা করতে পারছেন না বা পারেননি। উপমার সাহায্যে বলা যায়, পথ চলার জন্য বাসপথ বা রেলপথ যতটা বিজ্ঞানসম্মত হবে ততটাই মানুষের জন্য সুখপ্রদ বা সুখময় যাত্রা হবে। অছন্দের গদ্য লেখা অবশ্যই বিগত দিন থেকেই চলে আসছে। অনেক ভালো মানের কবিতাও বেরিয়ে এসেছে। তথাপি বলতেই হয়, ছন্দের কবিতার নান্দনিক গাঁথুনি, সুললিত পাঠ, বোধগম্যতাসহ মসৃণ দেহ নির্মাণ বেশি সুপ্রতিষ্ঠিত বলেই মনে হয়। ইদানীং বিভিন্ন বই ও পত্রিকাসহ বিশেষ করে ফেসবুকের অধিকাংশ লেখা কবিতায় স্বরবৃত্ত ছন্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দেও কবিতা লেখা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ নতুন যোগ মাত্রায় পার্বিক ছন্দে কবিতা লিখছেন। কতক লিখিয়ের যুক্তি এখন যা লেখা হচ্ছে, পরবর্তী ধাপে নতুন প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। যে যাই বলুক, কবিতার যৌক্তিক ব্যাখ্যায় শব্দ প্রয়োগের নান্দনিক উপস্থাপনা ও ব্যতিক্রমী বাঙময়তা, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাস ও নানামুখী অলঙ্কার ও স্বাতন্ত্র্য ধারায় শব্দের মোচড় প্রয়োগ কবিতাকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করে থাকে। আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও মননশীলতা জুতসই প্রয়োগের মাধ্যমেও কালের স্বাক্ষর রাখার মতো কবিতা লেখা যেতে পারে বলে মনে করি। কবিতার বানানের বিষয়টি ভিন্নমাত্রার প্রসঙ্গ। যথাসম্ভব প্রমিত শব্দের শুদ্ধ বানানের দিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক। মোদ্দা কথা, একজন কবিকে তার বৈশিষ্ট্যগত সত্তা বাঁচিয়ে রাখে। কবিতা ভেতর থেকে উত্থিত হয়। কারো কোনো ফরমায়েশ অনুযায়ী নয়। কবিতা প্রসঙ্গে সহজ ভাষায় আরো বলা যায়, মেয়েরা যখন মেয়ে হয়ে ওঠে মাতৃত্বের পরিপূর্ণ রূপ পায়। অনুরূপ কবি যখন কবি হয়ে ওঠেন তখনই তার কবিতা কাল-উত্তীর্ণ হয়ে ওঠে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা