৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ঘুম এবং জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’

মৃত্যু : ২২ অক্টোবর ১৯৫৪, জন্ম : ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ -

ভাতপাগল-ঘুমকাতুরে মানুষের কাছে ভাত আর ঘুমের চেয়ে বড় কিছু নেই। বাড়িতে-গাড়িতে অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে এবং উপাসনালয়ে ঘুমিয়ে যাদের অভ্যাস আর একবেলা ভাত না খেলে যাদের শরীর কী যেন কেমন করে, তাদের জন্য ভাত প্রাণবর্ধক আর ঘুম মহৌষধ বটে। কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন : ‘ঘুমের কাছে সবই তুচ্ছ।’ আর শামসুর রাহমান তার ‘অনিদ্রা’ নামক কবিতায় লিখেছেন : ‘ঘুম, যেন মা দিলেন ডাক আদুরে মাদুরে,/ঘুম, পিতা দিলেন বুলিয়ে মাথা অলীক আঙুলে।/...অনিদ্রা আমার শত্র“, তবু তার শত্র“তাই ঠেকে সহনীয়/কেননা নিশ্চিত জানি তুমিই জননী অনিদ্রার।’ পৃথিবীখ্যাত লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’ উপন্যাসে মাকান্দো নামের এক জনপদে হঠাৎ অনিদ্রা দেখা দেয়ার কাহিনী আছে। জনপদটির প্রতিষ্ঠাতা হোসে আর্কাদিও বুযেন্দিয়া বললেন, কখনো আর যদি না ঘুমোই তো খুবই ভালো হয়। জীবনের কাছ থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়া যাবে। কিন্তু কালক্রমে দেখা গেল জনপদের সবাই অনিদ্রার সাথে সাথে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যেতে লাগল; সবকিছুর নাম ও কার্যকারিতা তারা ভুলে যাচ্ছে। তা ঠেকাতে তারা জিনিসপাতির গায়ে নাম ও তাদের প্রয়োগযোগ্যতা লিখে রাখতে শুরু করল। যেমন তারা লিখল : ‘এটা হলো গরু। যাতে সে দুধ উৎপাদন করতে পারে, সেজন্য রোজ সকালে তাকে অবশ্যই দোহাতে হবে। আর সেই দুধ অবশ্যই জ্বাল দিতে হবে, যাতে করে কফির সাথে মিশিয়ে কফি ও দুধ বানানো যায়।’ প্রাচীন গ্রিসের মহাকবি হোমার তাঁর ‘ইলিয়াড’-এ ঘুমকে মৃত্যুর সহোদর বলেছেন। আর ইংরেজ রোমান্টিক কবি শেলী সব প্রকার যন্ত্রণার মহৌষধ ভেবেছেন ঘুমকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঘুমকে ভাবা হয় স্রষ্টার নিয়ামত বা উপহার হিসেবে।

অনেকে ঘুমের ভেতর কথাও বলে। কেউ কেউ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ঘরে-বারান্দায়-ছাদে-উঠানে হাঁটাচলাও করে। ঘুমের সাথে থাকে স্বপ্ন। যেমন কান টানলে মাথা; আর মাথা টানলে কান। একলা ঘুম কিংবা কারো সাথে ঘুম যাপন করার নিশ্চয়ই ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। ঘুমের কিছু রূপক অর্থও বোধ করি আমরা টের পাই। জয় গোস্বামী তার ‘আলোহাওয়া’ কবিতায় লিখেছেন: ‘যদি আমি ঘরের অভাবে/একবার সাহস করে ওই,/ওই একজনকে নিয়ে গাছের ধুলোর পথে/সারাদিন লুকিয়ে ঘুমোই!’ অন্য একজন অথবা পরিবারের অনেকজনকে নিয়ে ঘুমানোর কথা আমাদের জানা। কিংবা হয়তো কিছুই জানি না এসবের আমরা। জীবনানন্দ দাশ [জন্ম: ১৮ ফেব্র“য়ারি ১৮৯৯; মৃত্যু: ২২ অক্টোবর ১৯৫৪] যে ঘুমের বিবরণ লিখছেন, তার সবটুকু কি আমাদের কাছে চেনা? ‘বধূ শুয়ে ছিলো পাশে- শিশুটিও ছিলো;/প্রেম ছিলো, আশা ছিলো- জ্যোৎøায়,- তবু সে দেখিলো/কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?/অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল- লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।’- এই ঘুম কি মৃত্যুকে প্রকাশ করে; এটাই কি সবমানুষের জন্য শেষ ঘুমের আয়োজন? বিরতিহীন-যন্ত্রণাহীন শান্তির ঘুম! এই ঘুম অনিবার্য। ‘এই ঘুম ভাঙিবে না আর।’ এর নাম রাখা হয়েছে মৃত্যু।
মৃত্যু এক অমোঘ বিধান। একে অমান্য করা কিংবা অতিক্রম করার কেনো কৌশল কিংবা শক্তি মানুষের আয়ত্তে নেই। অবশ্য সবাই যে মৃত্যুকে ভয় পায় বা বরণ করতে চায় না- এমন নয়; স্বাচ্ছন্দ্যে মৃত্যুকে আবাহন করার মতো সরল-সাহসী লোকের সংখ্যা এবং প্রবণতাও বিবেচ্য। ইচ্ছামৃত্যু তো সেরকম ব্যাপারই। ‘আট বছর আগের একদিন’ কবিতায় আমরা ইচ্ছামৃত্যু-গ্রহণকারী এক আপাত সুখী পুরুষের গল্পই পাঠ করি, বোধ হয়। চাঁদে-পাওয়া, ঘোরলাগা বিবর্ণ এই লোকটির বর্তমান অবস্থা কবি তুলে ধরছেন এভাবে :
শোনা গেল লাশকাটা ঘরে

নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে- ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ‘ল তার সাধ।
কবি ও কথাশিল্পী জীবনানন্দ জীবনকে দেখেছেন প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে থেকে, এক নতুন জীবনজিজ্ঞাসার আলোকে। সৃষ্টিজগৎ, প্রকৃতি আর মানুষের চলাচল তার কবিতা-ক্যানভাস। আর তিনি নির্মাণ করেছেন সাধারণ মানুষের বোধ-অতীত অনন্যসব বোধ, তার নির্যাস। তাই তাকে বিবেচনা করা যায়, সাধারণের-অবোধ্য অথচ অবশ্যবিবেচ্য চিন্তাভুবন প্রকাশের রূপকার আর বিস্তৃত ভাবনাবলয়ের নিরাবেগ ভাষ্যকার হিসেবে। জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’ তাই অবশ্যই রহস্য-উদ্রেককারী কবিতা। মানবজীবনের অজানা-অধরা প্রবণতা, ব্যক্তির অনুদ্ঘাটিত আত্ম-পরিক্রমা আর প্রকৃতির রহস্যঘেরা সত্যাসত্যের ও লৌকিক-অলৌকিকতার মোহনবর্ণন এই কবিতাটি।
জীবনানন্দের কবিতায় ‘চাঁদ’ ও ‘জ্যোৎস্না’ অনুষঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে উদ্দীপনা-জাগানো বিষয়রূপে। যতদূর জানা যায়, তাঁর ব্যক্তিজীবনে রয়েছে চাঁদ-জ্যোৎস্না’র বিস্ময়কর উপস্থিতি ও প্রভাব। জীবনানন্দের বরিশালের বাড়ির কাছেই এক বাড়িতে একবার আত্মহত্যা করেছিল কেউ। তারপর থেকে ওইবাড়িতে তেমন কোনো লোক প্রবেশ করত না- লোকশ্র“তি ছিল, সেখানে ভূত বাস করে। বেশ কিছুদিন পর আবিষ্কৃৃত হলো, সে বাড়ির কোনো এক ঘরে সিলিং-এ ঝুলতে-থাকা আত্মহননকারীর বস্ত্রের অংশবিশেষ। জীবনানন্দ না-কি গিয়েছিলেন সেই ভুতুরে বাড়িতে; ইচ্ছামৃত্যু ঘটার আনুমানিক আট বছর পরে। আর সেদিন ছিল ১৪ অক্টোবর। এই তারিখটি কবি জীবনানন্দের জীবন-পরিক্রমা এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি সম্বন্ধে দারুণ প্রভাব ও চিন্তা সঞ্চার করে। যেদিন তিনি শেষবারের মতো ছেড়েছিলেন বরিশাল, কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য, সেদিন ছিল ১৪ অক্টোবর; ১৪ অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় পড়ে তিনি মারা যান ২২ অক্টোবর। আবার এই ১৪ অক্টোবর তারিখে বরিশালের বগুড়া রোড থেকে, ওই ভুতুড়ে বাড়িটি যে রোডে অবস্থিত, রাতে জ্যোৎøার বিশেষ রূপ পরিলক্ষিত হয়। আগ্রহী অনেক মানুষ ওই তারিখে ভিড় করেন সেখানে জ্যোৎস্না দেখার নেশায়। পৃথিবীর আরো কিছু স্থানে জ্যোৎস্নার বিশেষ রূপের উপস্থিতির কথাও আমরা জানতে পারি- অবশ্য তারিখটি তখন ১৪ এপ্রিল। নরওয়ে, হাঙ্গেরিসহ আরো কিছু দেশের বিশেষ স্থানে ঘটে এই ব্যাপারটি।
আমরা জাগতিক বা লৌকিক যে সুখ-অসুখের, শান্তি-অশান্তির পরিচয় জানি, সে বিবেচনায় বর্তমান কবিতায় ইচ্ছামৃত্যু বরণকারী বর্ণিত মানুষটি সুখে-শান্তিতেই ছিল। আত্মহত্যা করার মতো আপাত কোনো কারণ তার জীবনে ঘটেনি। পরিবার-সন্তানাদি নিয়ে তার ছিল স্বচ্ছন্দ ঠিকানা। কোনো আশা তার নিরাশায় নিমগ্ন হয়নি; তবে জ্যোৎøায় কী পেল সে কিংবা কী দিল তাকে এই পাগলাটে জ্যোৎস্না!

বধূ শুয়ে ছিলো পাশে- শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিল, আশা ছিল- জ্যোৎসায়,- তবু সে দেখিল
কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল- লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
যে লোকটি মারা গেল জ্যোৎস্নাশোভিত রাতে, সে-কি জীবনের ভারবহনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি চেয়েছিল ভিতরে ভিতরে? না-কি গভীর নিস্তব্ধতার অপ্রতিরোধ্য অসুখ আর টান তাকে তাড়া করছিল কিংবা আকর্ষণ করছিল নিবিড় কোনো ব্যক্তিগত অবসরে? সে-কথা জানে সে নিজে; আর জানে তার বিধাতা। কবির বিষ্ময়, জিজ্ঞাসা আর শেষত উপলব্ধি এরকম:
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
রক্তফেনা-মাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।
‘কোনোদিন জাগিবে না আর
জাগিবার গাঢ় বেদনার অবিরাম- অবিরাম ভার
সহিবে না আর-’
এই কথা বলেছিল তারে
চাঁদ ডুবে চ’লে গেলে- অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো-এক নিস্তব্ধতা এসে।

এই পৃথিবীর অসীম রহস্যের কতটুকু জানতে পেরেছে মানুষ? বাতাস কেন প্রবাহিত হয়? গাছের পাতার রঙ সবুজ কেন? পটলের ডিজাইনারের নাম কী?- এসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো পেয়ে গেছে বিজ্ঞান; কিন্তু একই মাটির মমতায় বেড়ে ওঠা আলু আর গাজর আলাদা আলাদা রঙ-আদল ধারণ করে কী প্রক্রিয়ায়! চাঁদের দিকে চোখ রাখলে মন খারাপ কিংবা মন ভালো হওয়ার কী হেতু!
- এসব কি জানা যায়? আর জানা বলতে আমরা যা বুঝি, তা-ই কি প্রকৃত জানা, ঠিক ঠিক বুঝতে পারা? প্যাঁচার ব্যাকুল জেগে থাকা, ‘গলিত স্থবির’ ব্যাঙের বেঁচে থাকবার আকুলতা কিংবা মশারির মর্মান্তিক প্রতিকূলতায় মশার জীবনপ্রীতি, মাছি-কীটাদির রৌদ্র-রৌদ্র খেলা কবিকে চিন্তাক্লান্ত করে অবিরাম। আকাশের প্রসন্নতা, মানুষের মৌলিক অধিকার, শিশুর স্বাভাবিক শিহরণ, ফড়িঙ-দোয়েলের অবোধ্য প্রহর-যাপন- এই সব ভাবনারাজি; জানি-জানি করতে করতে জীবনানন্দ ঘোরলাগা কবিতাবমন অনুভব করেন। বের হয় মুখ থেকে, কণ্ঠ থেকে অভিযোগসুলভ আপত্তি আর মমতাময় জিজ্ঞাসা ও বিস্ময়:
অশ্বত্থের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ প্যাঁচা এসে
বলেনি কি : ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
চমৎকার!-
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার!’
জগতের ‘তুমুল গাঢ় সমাচার’ আদৌ কি জানা যায়? এইসব খবরাখবর অন্বেষায় স্থির গবেষক যারা, তারা তো বিষণœ-অবসরে অবসন্নতার ক্লান্তি বইতে গিয়ে হেমন্তের রোদের ঘ্রাণমোছা বিকেলকে অসহ্য মনে করতেই পারে! যে মৃতের গল্প বলছেন কবি, তার তো কোনো অপ্রাপ্তি-অতৃপ্তি ছিল না। তবে কেন তাকে মরতে হলো ইঁদুর-বিড়ালের মতো! প্রেমে ব্যর্থতার যন্ত্রণা কিংবা দাম্পত্য-অশান্তি ভোগ করতে হয়নি তাকে, দারিদ্র্যের অভিশাপও কোনো আঘাত দেয়নি কখনো। সম্ভবত এতো প্রাপ্তি আর সাফল্যের প্রতিদান হিশেবে সে লাভ করেছে লাশকাটা ঘরে টেবিলের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার অধিকার! আবার এমনও হতে পারে, আমরা যেভাবে মানবজীবনকে বিবেচনা করি, জীবনের সঠিক হিসাব আসলে সে রকম নয়; আমাদের দেখা-জানা-বোঝা বিষয়ের বাইরে অবোধ্য-অনাবিষ্কৃত রয়েছে বিস্তর বিষয়! জীবনানন্দ জানাচ্ছেন :

জানি- তবু জানি
নারীর হৃদয়- প্রেম- শিশু- গৃহ- নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-
আরো-এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত- ক্লান্ত করে;
সত্যি আমরা বিপন্ন; অসহায়। বিস্ময়মোড়া পৃথিবীতে আমাদের অযথা অপেক্ষা কেবল লৌকিক অর্জন-লাভ লোভের মোহনীয় সিঁড়ির শেষধাপের জন্য! তাই, শেষ-অবধি প্রাপ্তি, কিছুই না-রেখে যাবার; শুধু ভোগ আর গ্রহণের আনন্দ! ‘জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার’ ‘শূন্য ক’রে চলে’ যাবার ঘোষণা ধারণ করে, তাই, জীবনানন্দকে লিখতে হলো অলৌকিক-অজাগতিক কিংবা যাপিতজীবনের বোধাতীত সব ভাবনারাজ্য-কল্পনারাজ্যের অসীম দিনলিপি আর রাতপঞ্জি।
অনেকের ঠিকমতো ঘুম হয় না। সারারাত জেগে জেগে আর পায়চারি করে কাটাতে হয়। দুশ্চিন্তার বহরও হয়তো সঙ্গী হয় মাঝে মধ্যে। ঘুমকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভেড়া গুনবার লোককাহিনির কথাও আমাদের অনেকের জানা। আবার কেউ কেউ বিছানায় যাওয়া মাত্রই ঘুমের গভীরে তলিয়ে যেতে পারে। সারা দুনিয়ার অনেক মানুষের দিবানিদ্রার অভ্যাসও রয়েছে। আমরা বাঙালিরা ঘুমের দেশের বাসিন্দা। শৈশবে ঘুমের গল্প আর ছেলেভুলানো [মেয়েভুলানো] ছড়া শুনতে শুনতে বেড়ে উঠতে থাকি আমরা- ‘ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি মোদের বাড়ি যেও/খোকার [খুকুর] চোখে ঘুম নেই ঘুম দিয়ে যেও’; ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে?’; কেবল ঘুমোবার নয়, ঘুম থেকে জাগবার কথাও আছে।
কবি নজরুল বলেছেন- ‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে। দুনিয়াখ্যাত নাট্যকার হেনরিক ইবসেন বলেছেন সুখী এবং জ্ঞানী লোকেরা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন। ঘুমাতে হবে, জাগতেও। কতরাত না ঘুমিয়ে থাকা যায়? কতকালই বা কেবল ঘুমিয়ে থাকা চলে? চারিদিকে আমাদের জীবনের যে বিপন্নতা, জগতে ক্রমাগত বাড়তে থাকা যে জটিলতা তার থেকে কতকাল নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়- ঘুমের ছলে! ঘুম ভেঙে আমরা উঠে দাঁড়াবার তাগিদটুকুও অনুভব করি না?


আরো সংবাদ



premium cement