৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কামরুল আলমের উপন্যাস ‘নীলার নীল কষ্ট’

-

‘নীলা তুমি কি চাও না হারাতে ঐ নীলিমায়
যেখানে দু’টি মন এক হয়ে ছবির মতো জেগে রয়?
নীলা তুমি কি জানো না আমার হৃদয়ের ঠিকানা
যেখানে তোমার আমার প্রেম মিলে মিশে এক হয়।’
নীলা নামের মেয়েটির কষ্টগুলোর বর্ণনা পড়তে পড়তে এক সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাইলস্-এর এই জনপ্রিয় গানটির কথা মনে পড়ে গেল, যেখানে নীলার প্রেমিক তাকে সম্বোধন করে গানের চরণের মধ্য দিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলছে। এ যেন ‘নীলার নীল কষ্ট’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ইমরানেরই মনের কথামালা যে কিনা নীলার প্রেমিক। নীলাকে লক্ষ্য করে ইমরানের বলা কথাগুলোর প্রতিধ্বনি যেন আমরা শুনতে পাচ্ছি গানটির সুরে সুরে। ইমরান নীলাকে নীলিমায় হারিয়ে যাওয়ার আহ্বান করছে, নীলার হাত ধরে সুখের সোনালি ঠিকানার গন্তব্যে পৌঁছাতে চাচ্ছে। সে তার হাত দু’টি বাড়িয়েই আছে; কিন্তু নীলা সেই হাতটি ধরার জন্য তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। তার মনে কি তাহলে ইমরানকে নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সংশয়-সন্দেহ আছে? সে কি তাহলে ইমরানকে ভালোবাসে না? জীবনসাথী হিসেবে কি তাহলে ইমরানকে তার পছন্দ নয়? ইমরানের মন এমনি নানান প্রশ্নের দোলাচলে দুলতে থাকে। আর এভাবে দোদুল্যমান অবস্থায় উপন্যাসের কাহিনীও এগিয়ে যেতে থাকে।
‘নীলার নীল কষ্ট’ বইটির রচয়িতা কামরুল আলম। ছড়াকার, গীতিকার ও শিশুতোষ লেখক হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠিত হলেও গল্পকার ও ঔপন্যাসিকের খাতায় বলা যায় সম্প্রতি নাম লিখিয়েছেন। ইতোমধ্যে তার তিনটি উপন্যাস ও বড়দের উপযোগী একটি ছোটগল্পের বই প্রকাশ হয়েছে। চতুর্থ উপন্যাসটি প্রকাশের অপেক্ষায়। এতদিন তিনি ভালো ভালো ছড়া, শিশুতোষ গল্প ও গান আমাদের যেভাবে উপহার দিয়েছেন, আশা করি তেমনি ভালো ভালো গল্প-উপন্যাসও আমরা তার কাছ থেকে উপহার পাবো। ‘নীলার নীল কষ্ট’ তারই একটি অন্যতম প্রচেষ্টা।
উপন্যাসের শুরুতে অবশ্য ইমরানকে দেখা যায়নি। শুরুতেই তাকে নিয়ে এলে বিষয়টা ততটা ইন্টারেস্টিং মনে হতো না। লেখক এখানে ইমরানকে নীলার সামনে হাজির করেছেন এমনভাবে, যাতে পাঠকদের জন্য চমক থাকে। উপন্যাসের শুরুতে আমরা দেখতে পাই একটি অফিস কক্ষ যেখানে নীলা আরো চাকরিপ্রার্থীর সাথে বসে আছে ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য এবং তার সিরিয়াল আসার আগেই তাকে ভেতরে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। সে সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছে এই চাকরির উদ্দেশ্যে। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের একটি ছেলে বা মেয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর চাকরি নামক সোনার হরিণের জন্য চেষ্টা করছে। নিজ শহরে বা রাজধানী ঢাকা শহরে এসে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিচ্ছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই পরিচিত দৃশ্য এটি। এমন পরিচিত দৃশ্য দিয়েই এই উপন্যাসের সূচনা। ইন্টারভিউয়ের একটা পর্যায়ে দেখা যায় তার বস্ তাকে বলছেন এই অফিসে কাজ করতে হলে উনাকে সন্তুষ্ট করেই তাকে চলতে হবে। এ সময় তার মনের ফ্লাশব্যাকে ভেসে ওঠে অতীতের দৃশ্য। ছাত্রজীবনে একবার নিজ এলাকার চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট আনতে গিয়ে তাকে অনাকাক্সিক্ষত অযাচিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজও আবার রাজধানী ঢাকার বুকে এই অফিসে তেমন কিছু ঘটবে না তো?

আসলে আমাদের সমাজে এখনো মেয়েরা উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে, ক্যারিয়ার তৈরির ক্ষেত্রে পদে পদে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। কিছুসংখ্যক ‘পুরুষ’ নামক হায়েনার লালসাকাতর ছোবলের ফলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তাদের দেহ-মন। ভেঙে যায় শিক্ষা অর্জন ও ক্যারিয়ার গঠনের স্বপ্ন। এমনকি বিয়ের পরও মেয়েরা স্বামীর সাথে কোথাও ভ্রমণে গেলে সেখানেও যেন নিরাপদ নয়। ওঁৎ পেতে থাকে হায়েনারা। যার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ হলো কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এমসি কলেজের ঘটনা। যদিও দেশকে আমরা তুলনা করি সিঙ্গাপুরের সাথে!
জীবনে কিছু কষ্ট পাওয়ার পরও নীলার স্বামীভাগ্য ভালোই বলতে হবে। শুধু ভালোই নয় অনেক মেয়ের কাছে যা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। নীলা একজন কবি। ইমরান যদিও কবি নয় তবুও ‘প্রেমে পড়লে মানুষ নাকি কবি হয়ে যায়’ এই কথাটির বাস্তব প্রমাণ হলো সে। সে তার কাঁচা হাতের লেখা দিয়ে নীলার কবি হৃদয়কে জয় করতে চেয়েছে। যেমন তার কাব্যচর্চার কিছু প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পাই-
‘রাখাল বালকের মতো বাঁশিতে সুর তুলতে পারলে
হয়তো আমার সুরের টানে ছুটে আসতে তুমি।
জ্যোৎস্না রাতে বাঁশবাগানের নিচে দাঁড়াতাম তোমাকে নিয়ে
পকেটভর্তি টাকা না থাকলেও
তারাভর্তি আকাশের দিকে তাকাতাম দু’জনে।
আজ সত্যিই তুচ্ছ মনে হচ্ছে নিজেকে, বড়ই তুচ্ছ।’
নীলাকে ভালোবেসে দীর্ঘ দিন যাবৎ সে অবিবাহিত ছিল। পাঁচ বছর পর যখন নীলার সাথে আচমকা কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা হয়ে গেল তখনই সে নীলার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নীলার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অঘটন যা সে বহুদিন যাবৎ ইমরানের কাছ থেকে গোপন রেখেছিল অবশেষে তা জানতে পেরেও ইমরান নীলাকে তার জীবনে গ্রহণ করে নিতে একটুও পিছপা হয়নি। অঘটনকে দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখেছে সে, যাতে নীলার কোনো হাত ছিল না।

বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে যখন নীলা তার নিজ শহর সিলেটে বেড়াতে এলো তখনো আবার একটি দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিল। এমসি কলেজের ছাত্র নামক কিছু হায়েনা যখন ইমরানকে বেঁধে রেখে নীলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল তখন আমরা একটি অলৌকিক ঘটনা দর্শন করি। যদিও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটা অলৌকিক নয়; বরং স্বাভাবিক ঘটনাই। বিপদে পড়লে যেসব দোয়া-দরূদ পড়ার জ্ঞান সে অর্জন করেছিল ওই সঙ্কটময় মুহূর্তে ইমরান তা-ই তার জীবনে প্রয়োগ করল। আর এর ফলাফলও দেখতে পেল দ্রুতই। তার পরিচিত এক বড় ভাই যিনি সিলেটে তার হোস্ট ছিলেন অন্য দিকে ওই ছেলেগুলোরও কোনো এক সূত্রে ক্ষমতাধর বড় ভাই ছিলেন তার মাধ্যমে নীলা ও ইমরান সেসব বখাটেদের কাছ থেকে উদ্ধার পেয়ে গেল। শুধু উদ্ধারই নয়; বখাটেগুলো তার কাছে ক্ষমাও চাইল। উপন্যাসের শেষে এ থেকে আমাদের জন্য বড় একটি শিক্ষা রয়েছে। বিপদাপদে পড়লে সাথে সাথে মহান প্রভুকে স্মরণ করা কর্তব্য, আর শুধু সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেই নয় স্বাভাবিক মুহূর্তেও সর্বদা তাঁর কথা স্মরণ রাখা আমাদের দায়িত্ব। তিনিই উদ্ধারকারী।
‘নীলার নীল কষ্ট’ উপন্যাসটি বের করেছে সিলেটের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা পাপড়ি। প্রচ্ছদ করেছেন নাঈমুল ইসলাম গুলজার। বইটির প্রকাশকাল একুশে বইমেলা, ফেব্রুয়ারি ২০২৪। মূল্য ১৮০ টাকা। আমরা বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি। সেই সাথে লেখকের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করি।


আরো সংবাদ



premium cement
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : উপদেষ্টা কুষ্টিয়ায় আটক বাংলাদেশী নাগরিককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে আবু সাঈদসহ জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে দেশে ইসলামি পরিবেশ আসবে : খলীল আহমদ কাসেমী আলোকচিত্রে জলবায়ু সহনশীলতার সাহসী গল্প গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সহায়তা প্রদান বেতাগীতে নয়া দিগন্তের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা আবারো সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্ধেক ভোটার : জরিপ স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ডেঙ্গুতে আরো ৪ জনের মৃত্যু

সকল