১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

উত্তর-ঔপনিবেশিকবাদে কবি ফররুখ আহমদ

-

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ভেতর দিয়ে এবং পূর্ণতা লাভ করে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তবে সে সময়ে (১৯০৫-১৯১১) বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের খুব একটা বিকাশ ঘটেনি বঙ্গভঙ্গ রদের (১৯১১ সালে) কারণে। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতিতে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন শুরু হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে ব্যবধান যেমন কমতে থাকে তেমনি যোজন দূরত্বও বাড়তে থাকে। একই ধর্মের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দলগুলো স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্য গড়ে তোলে এবং হিন্দু-মুসলিম দূরত্ব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠায় দ্বিজাতিতত্ত্বের উদ্ভব হয়। ইতিহাসের ভাষ্যমতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ আগেই অঙ্কুরিত হয়; কিন্তু চল্লিশের দশকের শুরুতে (কারো কারো মতে ত্রিশের দশকের শেষ বছরে) ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠে। অথচ সে জাতীয়তাবাদ অনেকটাই আবেগী ছিল বলে সময়কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে মুসলমানরা তাদের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এমন এক সময়েই কবি ফররুখ আহমদের ব্যক্তিমানসে পরিবর্তন আসে। তিনি বাম তথা কমিউনিস্ট ভাবধারা থেকে পশ্চিমবঙ্গের জ্ঞানপ্রদীপ মাওলানা আবদুল খালেকের অনুপ্রেরণায় ইসলামী ভাবধারায় আত্মনিয়োগ করে ঘুমন্ত জাতিকে দিকনির্দেশনা দিতে সিন্দাবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
যার কারণে তিনি পরিচিতি লাভ করেন ‘মুসলিম জাগরণের কবি’ ও ‘রোমান্টিক কবি’ হিসেবে। আবার কেউ কেউ তাকে আধুনিক-উত্তর আধুনিক কবি হিসেবেও চিহ্নিত করার প্রাণান্ত ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভিন্ন মতও রয়েছে। যেমন কেউ কেউ তাকে ‘‘জীবনানন্দ দাশের তথাকথিত কেউ কেউ ‘কবি’ বলে ভূষিত করেন’’। মত-দ্বিমত তাকে নিয়েই হয় যিনি কবি হিসেবে মানবতাকে স্পর্শ করেছেন এবং দুর্যোগ-দুর্দিনে মানুষের কাছে ছুটে আসেন। তার এ ছুটে আসা কাব্যশক্তির মাধ্যমে। ফলে তাকে মানবতার কবি হিসেবে দেখাই ভালো। কিন্তু ১৯৭৪ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাসিত বুদ্ধিজীবী ও সমালোচক অ্যাডওয়ার্ড ডব্লিøউ সাঈদ অরিয়েন্টালিজম-এর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের প্রচলিত পণ্ডিতদের জ্ঞানভাষ্যকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করে নোংরা আবর্জনার সাথে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন। শুরু হলো নতুনভাবে বিশ্বকে দেখার। পাশ্চাত্যরা স্তম্ভিত, তাদের দীর্ঘ চার শত বছরের প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানভাষ্য এক নিমিশেই ধ্বংস হতে দেখে। আর এ ধ্বংসের পথে ফ্রানৎজ ফাঁনো, মিশেল ফুকো, জ্যাঁক দেঁরিদা, আবদুর রাহমান জান মোহাম্মদসহ বেশ ক’জন পণ্ডিত পাশ্চাত্য জ্ঞান-পরিভাষার অন্ধকারে প্রাচ্যের জন্য আলোর সন্ধান করেন। সাঈদ সে আলোতে পূর্ণতা এনে দেন। যে ভিত্তি তিনি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন বা চেষ্টায় সফল হয়েছেন সেখানেও পশ্চিমা সাম্রাজ্য ও আধিপত্যবাদী পণ্ডিতেরা সমন্বিতভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাদের প্রতিরোধের দেয়ালে হাতুড়ি চালিয়েছেন চিনুয়া এ্যাচেবে, নাগুয়ি, নোয়াম চমস্কি এবং গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। এসব পণ্ডিত ক্রমাগতভাবে চলে আসা সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও মনস্তাত্তিক আগ্রাসনের ধরন, কারণ এবং মাধ্যমকে চিহ্নিত করে উপনিবেশিত আমজনতাকে সজাগ রাখার চেষ্টা করেছেন এবং করছেন।
তবে এ কথা সর্বজন স্বীকৃত (এখানে সর্বজন বলতে পাশ্চাত্যের আগ্রাসনবিরোধী পণ্ডিতদের বোঝানো হয়েছে) নয়া সাম্রাজ্যদের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র হলো পরিভাষা। তাই যুগে যুগে ভাষাকে সূক্ষ¥ভাবে আঘাত করে একটি জাতির আত্মপরিচয়কে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা সাম্রাজ্যবাদীরা করেছেন এবং তাদের সাহস জুগিয়েছেন এবং জোগাচ্ছেন পুঁজিবাদীরা। আর এ পুঁজিবাদীরা হলেন দু’ধরনের : এক, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণকারী। দুই, শিক্ষার আলো বিকশিত করার নামে যারা প্রথম বিশ্ব-তৃতীয় বিশ্ব নামের দেয়াল তৈরি করে প্রান্তজন ও কেন্দ্রীয়জন নামের শোষিত ও শোষক-শাসক তৈরি করেন। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহারে বাধ্য করার যে সাংস্কৃতিক ‘হেজেমনি’ তৈরি করেছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।
পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীরা আরো একটি বিষয়ে আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করে। তা হলো সাহিত্য। সাহিত্যে বিশ্বজনীন বা ‘ইউনিভার্সালিটি’ নামের যে পরিভাষা রয়েছে তার মাধ্যমে ‘ইউরোচেন্ট্রিক’ কাঠামোবাদকে প্রতিষ্ঠিত করে। এর মধ্য দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে তথাকথিত ‘আমরা’ (পশ্চিমারা) শ্রেষ্ঠ এবং তথাকথিত ‘তারা’ (প্রাচ্যরা) নিকৃষ্ট। বোধ করি একটু সচেতন পাঠক মানেই মনে পড়বে ডেভিড হিউমের বিখ্যাত নিবন্ধ ‘স্টান্ডার্ড অব টেস্ট’-এর কথা। যেখানে তিনি সুস্পষ্ট করেছেন টেস্টের কোনো স্টান্ডার্ড নেই। এটি ব্যক্তি-অঞ্চল-ভৌগোলিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। যাকে আদর্শ তথা স্টান্ডার্ড ধরব কিসের ওপর ভিত্তি করে মেনে নিবো? কারণ পশ্চিমের পরিভাষা এবং প্রাচ্যের পরিভাষা ছাড়াও চিন্তা-চেতনা, ভাব-আদর্শ, গ্রহণ-বর্জন ও বিকাশ-প্রকাশের ধরণেও বেশ বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। যার কারণে ১৮৪১ সালে ভার্জিনিয়া ওলফ-এর লেখায় বলতে শুনি পৃথিবীতে কোনো নিরপেক্ষ ভাষা নেই যা দিয়ে সবাইকে একই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মূল্যায়ন করা যায়। বরং প্রতিটি পশ্চিমা ভাষার একটি আগ্রাসী শক্তি রয়েছে যার মাধ্যমে তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের ভাষাকে গ্রাস করছে। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ-আফ্রিকা অঞ্চলের দেশসমূহ, যেখানে অসংখ্য ভাষা ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশ সে পথে চলছে বেশ দুর্বার গতিতে। ফলে আমরা দেখি সংস্কৃতি বিকাশের সবচেয়ে বড় যে ক্ষেত্র নাটক-ছায়াছবি সেখানে ভুল ইংরেজির প্রচলন করে ‘হাইব্রিড’ জাতি তৈরির কাজ করে চলেছেন প্রযোজক বা ছবি পরিচালকরা। পাশাপাশি আমরা দেখি বাংলা গদ্য-কবিতা-নাটক-উপন্যাসে প্রতিনিয়ত ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আর অফিস-আদালত-দোকানপাটের নাম ইংরেজি না হলে বাঙালির জাত যায় যায় অবস্থায় আছে।
এর পাশাপাশি আমরা ফার্ডিনান সস্যুরের কথাকে স্মরণ করতে পারি। তিনি এটি প্রমাণ করেন যে, কেন্দ্র বলে কিছু নেই, এটি অন্তঃসারশন্য। যদিও আমরা বিশৃঙ্খলা এড়াতে কেন্দ্র তৈরি করি, সে কেন্দ্রকে দখল নিয়েই পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা আধিপত্যের নতুন নতুন ফাঁদ বিছিয়ে দেয়। আর এসব ফাঁদ-জাল-দেয়ালকে ভেদ ও প্রতিরোধ করতে না পারলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে উন্মেষ ঘটেছে তা বিকশিত না হয়ে ‘হাইব্রিড’ হয়ে উঠতে পারে। ফলে আমরা কবি ফররুখ আহমদকে ‘মুসলিম জারগণ’ (রেনেসাঁন্স শব্দটি ব্যবহারে আমার ব্যক্তিগত আপত্তি আছে), ‘সেকেলে’, ‘রোমান্টিক’, ‘আধুনিক’ ও ‘উত্তরাধুনিক’ কবি হিসেবে অভিধা আরোপ করে খাটো করে রাখার মতো হীন মানসিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।
‘আধুনিক’ ও ‘উত্তরাধুনিক’ শব্দ দু’টি ‘ইউরোচেনিট্রক’ ধারণার বিকাশমান পরিভাষা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ শব্দগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা ও কাঠামোকে অনুসরণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যেমনটি দাবি করেন ফয়েজ আলম ও ফকরুল চৌধুরী। এ দু’জন পশ্চিমা জ্ঞান-ভাষা-পরিভাষার মধ্যে লুকিয়ে থাকা উপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে আমাদের সামনে তুলে আনেন এবং সর্তক করে দেন উল্লেখিত পরিভাষা ব্যবহারে। পাশাপাশি আমরা পিটার বেরির উত্তর-উপনিবেশবাদ অধ্যায়ের নিগূঢ় কথাকে স্মরণ করতে পারি। তিনি দাবি করেন আধুনিক, উত্তর-আধুনিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক শব্দগুলো কারো আগে ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই ‘এডপ্ট’, ‘এডাপ্ট’ ও ‘এডেপ্ট’ শব্দগুলোর বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে। কেননা, একদল সাহিত্যিক পশ্চিমা আঙ্গিক ও বিষয়বস্তুকে ধারণ করে লিখেন তাদের আমরা পশ্চিমা আধুনিক তথা আদর্শ হিসেবে চিহ্নিত করি বা আমাদেরকে আদর্শ হিসেবে মানতে বাধ্য করা হয়। আরেক দল পশ্চিমা আঙ্গিককে ধারণ করে স্থানীয় বিষয়বস্তুকে নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেন, যাদেরকে আমরা তৃতীয় বিশ্বের আধুনিক সাহিত্যিক বলি। অন্য দিকে যারা স্থানীয় আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে লিখেন এবং নিজস্ব ইতিহাসবোধকে লালন করেন, তাদের আমরা পুঁথি সাহিত্যিক অভিধায় প্রলেপ লাগিয়ে সেকেলে করে তোলার চেষ্টা করি।
কিন্তু আজ যখন সমুদ্রে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীনভাবে ভাসছে তখন আমাদের নজরুল বা ফররুখের কাব্যের কথাই মনে পড়ে। বিশেষ করে ফররুখ কাব্য আমাদের ঘুমিয়ে পড়ার যে কারণ তুলে ধরেছে এবং ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে যে অন্ধকারময় ভবিষ্যতের কথা বলেছে তা আজ সত্যের মতোই উঠে এসেছে। ফলে ফয়েজ আলমের ভাষায় তাকে আমরা উত্তর-উপনিবেশিক কবি ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারি না। কারণ উত্তর-উপনিবেশবাদী লেখকেরা উপনিবেশবাদে জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন-ইতিহাসবোধ-মানবতাবোধ-বিশ্বজনীনবোধকে কেবল প্রশ্নবিদ্ধই করে না, স্থানীয় মানুষকে নিজস্ব উৎকৃষ্ট সংস্কৃতি-মূল্যবোধ-ধর্মবোধ-মানবতাবোধকে জাগিয়ে তুলে ভ্রাতৃত্ববোধের জন্ম দেয়। শোষিত মানুষের পাশে উদারচিত্তে হাত বাড়ায়।
প্রসঙ্গক্রমে একটু বলে রাখা ভালো আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক একই গোত্রীয় কেননা এরা একই আদর্শে লালিত-পালিত এবং আধিপত্যবাদের নেশায় লড়াইরত দু’টি দল। তাদের মূল লক্ষ্যই হলো উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট সৃষ্টির মাধ্যমে প্রথম ও তৃতীয় বিশ্ব সৃষ্টি করা।
ফলে, আমরা ফররুখ আহমদকে এসব অভিধায় ডাকতে পারি না। তিনি সর্বজনীন সাম্যের কথা বলেছেন। তিনি সাম্যকে খুঁজেছেন ইসলামের ঐতিহ্যের মাঝে এবং তার সিন্দবাদ, পাঞ্জেরী ও হাতেম তাঈ কেবল মুসলামনদের কাণ্ডারি হিসেবে ধরা দেয়নি, ধরা দিয়েছে সব নির্যাতিত-ক্ষুধিত-শোষিত-নিপীড়িত মানুষের আদর্শ বা কাণ্ডারি হিসেবে। সুতরাং একজন কবির যে দায়িত্ব তা তিনি শতভাগ পালন করেছেন।
ফলে, তিনি কেবল একজন কবি। অতি-কবি, শ্রেষ্ঠ-কবি বা আদর্শ কবি নন, কেননা এসব শব্দে আধিপত্যবাদীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। তাকে অবশ্যই উত্তর-উপনিবেশবাদের আলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ক্ষমতায় থাকার জন্য হাসিনা এত মানুষ হত্যা করেছে, যা ইতিহাসে নেই’ আমি রেজাল্ট চাই না, আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই : শহিদ সবুজ মিয়ার মা ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়খরা ঘুচাল পাকিস্তান যেভাবে শহিদ হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ হতে পারে নতুন মুখ! শুক্রবার ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ ছাত্র অসন্তোষের জেরে পাঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাশিয়াকে সমর্থন প্রশ্নে বেইজিংকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে চীনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া মানে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া : ভারতকে রিজভী রিপাবলিকান-সমর্থিত নির্বাচনী বিধি বাতিলের রায় জর্জিয়ার বিচারকের ইইউ বৈঠকে জয়ের পরিকল্পনা পেশ জেলেনস্কির

সকল