১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

গণহত্যা কার্যপত্র

-

ভিড়ের ভেতর ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি, হঠাৎ
তীব্র জনস্রোতের ঢেউয়ে ভেসে গেলাম রাজপথের
ছাত্র-জনতার উত্তাল জলোচ্ছ্বাসের ভেতর, কানে ভেসে
এল ইতিহাসের দুনিয়া কাঁপানো পদশব্দ, ফরাসি
বিপ্লবের বাস্তিলের পতনধ্বনি স্লোগান হয়ে এসে মিশে
গেল রুশ বিপ্লবের সাথে, আরব বসন্তের রৌদ্র মাড়িয়ে
সেই স্লোগান একাকার করে তুলল আমার চারপাশ।
কোথাও উড়ে এসে পড়ল টিয়ার শেল, কানের তন্ত্রি
ফাটিয়ে গর্জন করে উঠল শব্দবোমা, স্বৈরাচারের মুখ
থেকে নিসৃতঃ রাজাকারের অপবাদ সশব্দে কোরাস কণ্ঠে
তাড়িয়ে দিল মৃত্যুভয়, প্রত্যেক মানুষের হাতে উঠে
এল পোষ্টার, কেউ ধরিয়ে দিল হাতে হাতে জ্বলন্ত
মশাল, শাহবাগের বিন্দু থেকে জনতার পায়ের আওয়াজ
ক্রমশ বাড়াতে থাকল বৃত্তের পরিধি।

ফ্যাসিবাদের সশস্ত্র পাহারাদাররা উদ্যত মেশিনগানের
পেছনে ঘন হয়ে বসে খেলা করে কার্তুজের বেল্ট নিয়ে,
পাশে সাজানো সাঁজোয়া যান থেকে খুনীদের হেলমেট
জানিয়ে দেয় তাদের পৈশাচিক প্ল্যান, অথচ উত্তাল দেশে
জনতার পদধ্বনি ক্রমশ ঘনীভূত হয়, আরেকটি বাস্তিলের
পতন ঘটাতে চোখভরা স্বপ্ন আর বুকভরা সাহস নিয়ে
মিছিলের দীর্ঘ সারি ঘিরে ফেলে জল্লাদের ঘর।

আকাশে তখন কোনো রোদ ছিল না, পাখি ছিল না,
মিছিলে নিহতদের জন্যে বারুদের ধোঁয়া হয়ে উঠেছিল
সুগন্ধি আগরবাতি, আহতদের পাশে মেয়েরা-মায়েরা
মিলে তৈরি করেছিল যাযাবর অ্যাম্বুলেন্স, আমি বুঝতে
পারছিলাম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ভয় বলে কিছু থাকে না,
লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার বুকের ভেতর কেউ যেন ঢেলে
দিয়েছিল জ্বলন্ত সীসা, মেঘের কারুকাজ মিছিলের রাস্তায়
সৃষ্টি করেছিল বিবর্ণ গ্রাফিতি।

সময় কি বারবার আসে? সময় একবারই আসে ছড়ি
ঘোরাতে ঘোরাতে, ব্ল্যাকবক্স ভেঙে যায়, টুকরো টুকরো
সময় যে যার মুঠোয় নিয়ে মানুষ ছুটতে থাকে দুর্গের দিকে,
সেখানেই পৌঁছুতে হবে যেখানে প্রতিদিন জন্ম নেয় খাদক
স্বৈরাচার, আর তার কারখানায় তৈরি হয় গণহত্যার গোপন
কার্যপত্র।
স্বৈরাচার সেটাতে অনুমোদন দেয় প্রতিদিন।


আরো সংবাদ



premium cement