বাজারে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দরকার
- ২৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
অনেক সাধারণ খাদ্য দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। যেমন দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ, দেশী মুরগি ও তার ডিম। এগুলো আর শহরে পাওয়া যায় না ব্যাপারটা কেবল এমন নয়, বেশির ভাগ মফস্বলেও এগুলো এখন দুষ্প্রাপ্য খাদ্য তালিকার মধ্যে পড়েছে। দেশীয় বিভিন্ন প্রাজাতির মাছের অভাব পূরণ করছে ফার্মে উৎপাদিত বিভিন্ন হাইব্রিড মাছ। অন্য দিকে, মুরগি ও ডিমের অভাব পূরণ করছে ফার্মে উৎপাদিত মুরগি ও ডিম। ফার্মের হাইব্রিড মাছ-মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা স্বস্তিদায়ক। বিশেষ করে ডিমের জোগান পর্যাপ্ত থাকায় ডিমের দামটা কম থাকায় প্রয়োজনীয় ডিম আমিষের জোগান দিচ্ছে। এক ডজন ডিম এক শ’ টাকারও কম। গরিবের জন্যও ডিম খাওয়া কঠিন হয়ে ওঠেনি। এখন সেই ডিমের দাম হু হু করে বাড়ছে। একটি সহযোগী দৈনিক খবর দিয়েছেÑ এক মাসে ডিমের দাম ৪২ শতাংশ বেড়েছে। এরসাথে ফার্মের মুরগি, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দামও বেড়েছে। বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের একটি প্রবণতা রয়েছে। একটি পণ্যের দাম একবার বেড়ে গেলে সেটা সাধারণত আর কমে না।
পত্রিকার খবরে প্রকাশ, কাঁচাবাজারে চারটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ডিমের দাম এখন সর্বোচ্চ। এক ডজন ফার্মের মুরগির ডিম কিনতে ক্রেতাকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ২০ টাকা। প্রতি হালি ডিম কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। এক ডজন কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। একইভাবে দুষ্প্রাপ্য দেশী মুরগির ডিম ও হাঁসের ডিম কিনতে হলেও কিছু বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। সস্তার আমিষ হিসেবে অনেকে রোজ ডিম খান। পাঁচ-সাতজনের একটি পরিবারে এখন ডিম বাবদ মাসে ৬০০ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক মাস আগে প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম ২২-২৬ টাকা ছিল। ডিম উৎপাদকদের পক্ষ থেকেও ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। তাদের মতে ডিমের দাম এতটা কম ছিল উৎপাদন করে খামারিদের পোষত না। ফলে অনেকে তাদের খামার গুটিয়ে নিয়েছেন। তাই ডিমের সরবরাহ আগের চেয়ে কমে গেছে। বাংলাদেশের পণ্যবাজারের এটি একটি সাধারণ সমস্যা। উৎপাদকেরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পান না। বাজার ব্যবস্থায় যে নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার সেটা থাকে না। কৃষকেরা যেমন বারবার মার খেয়ে যান, খামারিদেরও একই অবস্থা হয়েছে। মুরগি ও ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে ভারসাম্যপূর্ণ একটি ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। যাতে করে কৃষক ও খামারিরা উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপদে না পড়েন কিংবা লোকসানে না পড়েন। এখন ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে। ১৪০-১৪৫ টাকার মুরগি এখন ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরো দু’টি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছেÑ একটি হচ্ছে পেঁয়াজ অন্যটি হচ্ছে কাঁচামরিচ। এগুলোর দাম পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় এগুলোর দাম অস্বাভাবিক ওঠানামা করে।
নিত্যপণ্য না কিনে উপায় থাকে না। চাল, ডাল, আটা, লবণ প্রভৃতি না কিনে পারা যায় না। আমাদের দেশে এ ধরনের নিত্যব্যবহার্য পণ্য নিয়ে প্রায় ফটকাবাজারি হয়। এবার যে চারটি পণ্যের দাম বাড়ছে এর মধ্যে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বিষয়টি মানা যায়। এগুলোর দাম একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকা উচিত, যাতে ভোক্তা ও উৎপাদক ক্ষতিগ্রস্ত না হন। অন্য দিকে, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দাম এ দেশে যেন একটি ফটকাবাজারির আইটেম। প্রায়ই এ দু’টি পণ্য নিয়ে কালোবাজারি হয়। পেঁয়াজের যথেষ্ট উৎপাদন হওয়ার পরও অনেক সময় এ কাঁচা পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। একইভাবে কাঁচামরিচের দাম নিয়েও যেন অনেকে ফটকাবাজারের অন্যায় সুবিধা নেয়। উৎপাদক ও ভোক্তাকে বাঁচাতে হলে একটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা উচিত। সেটা কায়েমের জন্য সরকারের দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান দরকার।