১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলামে ওস্তাদের মর্যাদা

-

ইসলামে জ্ঞানার্জনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জ্ঞানার্জন যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি জ্ঞান অন্বেষণে শিক্ষকের (ওস্তাদ) ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাঝিবিহীন নৌকা যেমন পারের দিশা পায় না, তেমনি শিক্ষকবিহীন ছাত্রও সঠিক জ্ঞানার্জন থেকে বঞ্চিত হয়। তাই শিক্ষকের সাথে সদাসর্বদা উত্তম আচরণ করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘মূর্খ ব্যক্তির মর্যাদা কম যদিও সে বয়সে বড়, জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদা বেশি যদিও সে বয়সে ছোট।’
পবিত্র কুরআনের নাজিলকৃত প্রথম সূরা আলাকে বলা হয়েছে- ‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবাঁধা রক্তপিণ্ড হতে। পড়ো, তোমার রব মহামহিম। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক, আয়াত : ১-৫) মহান আল্লাহ তায়ালা ওই আয়াতগুলোর মাধ্যমে শিক্ষকতার এ পেশাকে মহিমান্বিত করেছেন।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। এ পৃথিবীতে শিক্ষকতা এক উত্তম পেশার নাম। শিক্ষকরা তাদের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি নিরক্ষরদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতগুলো পাঠ করেন এবং তাদের পবিত্র করেন। আর তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষা দেন’। (সূরা জুমা, আয়াত-২) অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা:-কে পৃথিবীতে শিক্ষকের ভূমিকায় প্রেরণ করেছেন। তিনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূল সা: নিজের শিক্ষকতার বিষয়ে বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি’। (ইবনে মাজাহ-২২৯)
মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন বলে পবিত্র কুরআন থেকে জানা যায়। মানবজাতির প্রথম মানুষ আদম আ:-কে সৃষ্টি করার পর তাঁর শিক্ষকরূপে তিনি আদমকে বিশ্বের সব জ্ঞান শিখিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে শিক্ষকের ভূমিকায় রাখার মাধ্যমে শিক্ষাগুরুর মর্যাদাকে অতি উচ্চ পর্যায়ে স্থান দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে তিনি বলেন- ‘এবং তিনি আদম আ:-কে সব বস্তুর নাম শিক্ষা দিলেন, তারপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, এ বস্তুগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৩১) এ ছাড়াও কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে- ‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনিই শিখিয়েছেন মনের কথা প্রকাশ করতে।’ (সূরা আর-রাহমান, আয়াত : ৩-৪)
শিক্ষক সবার শ্রদ্ধার পাত্র। তবে শিক্ষককে হতে হবে আদর্শবান। তিনি যেরূপ ছাত্রদের শাসন করবেন অনুরূপ রতাদের স্নেহও করবেন। কথায় আছে, শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যে। শুধু শাসনের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ছাত্রদের সাথে দূরত্ব তৈরি করা কোনো আদর্শ শিক্ষকের কাজ হতে পারে না। শিক্ষাগুরুর মর্যাদার এক উজ্জ্বল নমুনা দেখিয়েছেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব তথা বাদশাহ আলমগীর। তার সন্তানদের একজন শিক্ষক পড়াতেন। একদা বাদশাহ আলমগীর দেখলেন শিক্ষক তাদের পড়াতে এসেছেন আর তার সন্তানেরা গুরুর চরণে পানি ঢালছে। কিন্তু গুরুর পদযুগল কেন তারা স্বহস্তে পরিষ্কার করে দিলো না সে জন্য তিনি ব্যথিত হন। এ জন্য তিনি সে শিক্ষকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দিল্লিপতি হওয়ার পরও শিক্ষকের প্রতি তার সম্মান ছিল অকৃত্রিম। যা সত্যই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের এক অনন্য উপমা।
একজন আদর্শ শিক্ষক তার কাজের প্রতি থাকবেন দায়িত্ববান। তিনি তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মন ও মননের বিকাশে সর্বদা প্রচেষ্টা চালাবেন। কিন্তু তার মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপ সাধিত হলে আদর্শিক জায়গা থেকে তিনি বিচ্যুত হবেন। তখন তিনি বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য বলে বিবেচিত হবেন। আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মেলবন্ধন সাধিত হলে কবি কাজী কাদের নেয়াজের ভাষায় আমরা বলতে পারব- ‘আজ হতে চির-উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া


আরো সংবাদ



premium cement
বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বৃষ্টিতে ভাসবে ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট! মিয়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরার সিদ্ধান্ত ভারতের ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু করার দিকে আরো এক ধাপ এগুলো ভারত! সেই আফগানিস্তানের কাছে শোচনীয় হার দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনূসের সাথে সাক্ষাত হচ্ছে না মোদির লেবাননে পেজারের পর ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণে নিহত ২০, আহত ৪৫০ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ গ্রেফতার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আসলে কী হয়েছিল? মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করুন : তথ্য উপদেষ্টা বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’

সকল