১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

হতাশা থেকে বাঁচুন

-


জীবন সবসময় নিস্তরঙ্গভাবে বয়ে চলে না। কখনো সুখ আসে। কখনো আসে দুঃখ। স্রোতস্বিনী নদীর মতো জোয়ার-ভাটা চলতেই থাকে। এটি মানবজীবনের অমোঘ বিধান। তাই জীবনে কখনো হতাশ ঘিরে ধরলে হাল ছেড়ে দিতে নেই। বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের মাঝে মাঝি যেমন জীবনের শেষটুকু পর্যন্ত বইঠা নাড়তে থাকে, হাল ছাড়ে না। আমাদেরকেও তেমন শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তবে যে কেউ হতাশা থেকে সহজেই মুক্ত হতে পারে না। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য নানান উপায় অবলম্বন করলেও কর্মপদ্ধতির অসারতার কারণে অনেক সময় ব্যর্থ হতে হয়। তাই ইসলাম আমাদের এ ক্ষেত্রে কিছু অতীব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। যেগুলো হতাশা থেকে মুক্তির ক্ষেত্রে শতভাগ কার্যকরী।

নিম্নে কুরআন ও হাদিসের আলোকে তার কিয়দংশ আলোকপাত করা হলো :
১. তাওয়াক্কুল করা : ভরসাহীনতা আমাদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করে। ফলে আমরা হয়ে পড়ি দিকভ্রান্ত, ছন্নছাড়া। উত্তাল সমুদ্রে মাঝিহীন তরীর মতো। তাই কখনো হতাশাগ্রস্ত হলে সর্বপ্রথম আল্লাহর দিকে ফিরতে হবে। একমাত্র তাঁর ওপর ভরসা রাখতে হবে। মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস দৃঢ় করতে হবে যে, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন।’ (সূরা তালাক-৩)
২. রহমতের আশায় থাকা : সবসময় আমাদেরকে আল্লাহর রহমতের আশায় থাকতে হবে। আশাহত হওয়া যাবে না। আশাহীনতা কাজের গতিকে নি®প্রভ করে দেয়। এনে দেয় হতাশা। এ জন্য নিরাশাকে মনের মধ্যে ঠাঁই দেয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সূরা জুমার-৫৩)

৩. রবের তরে নিজেকে সঁপে দেয়া : বিপদাপদ হতাশার অন্যতম কারণ। কিন্তু মুমিনের গুণ হলো তারা এতে ভেঙে পড়বে না; বরং আল্লাহর কথা স্মরণ করবে। নিজেকে সঁপে দেবে তাঁর তরে। বিশ্বাস করবে এটি রবের পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষামাত্র। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত মুমিন তারাই যারা কোনো বিপদে পড়লে বলে, আমরা আল্লাহর জন্য। তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সূরা বাকারা-১৫৬)
৪. অল্পে তুষ্ট হওয়া : অল্পে তুষ্টতা জীবনকে সুখে রাখার বড় চাবিকাঠি। দুনিয়ার নানান অর্জন ও অর্থলিপ্সা জীবনের শান্তি কেড়ে নেয়। জীবনকে করে তোলে মূল্যহীন। ফলে আমরা আটকে পড়ি হতাশার বেড়াজালে। তাই আমাদেরকে শান্তির জীবন কাটাতে হলে অল্পতে তুষ্ট থেকে রবের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। তাহলে না পাওয়ার বেদনা আমাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করতে পারবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহর কসম! পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হলো- তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙুল চুবানোর পর লক্ষ করে দেখুক আঙুল কী পরিমাণ পানি নিয়ে এলো?’ (মুসলিম-৫১৫৬)

৫. সালাতুল হাজত পড়া : হতাশা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় সালাত আদায় করা। সালাতুল হাজত মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। হতাশামুক্ত করে তাকে। রবের পক্ষ থেকে পূরণ করা হয় তার যাবতীয় প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সূরা বাকারা-৪৫) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সা: যখন কোনো সমস্যায় পড়তেন বা চিন্তাগ্রস্ত হতেন তখন তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (মুসনাদে আহমাদ-৫/৩৮৮)
৬. রিজিকের চিন্তা না করা : আমরা জীবিকার চিন্তায় অধিকাংশ সময় হতাশায় পড়ি। বলা যায়, জগতের প্রায় মানুষই জীবিকার চিন্তায় হতাশায় ভোগে। অথচ রিজিক আমাদের জন্য নির্ধারিত। মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই সৃষ্টিকুলের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই রিজিকের ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘জগতের সব প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর।’ (সূরা হুদ-৬)
জীবনে সুখ যেমন স্থায়ী নয় তেমনি দুঃখও চিরকাল থাকে না। দিন বদলে দিন আসে। তাই আমাদের সামান্য বিপদে হতাশাগ্রস্ত হওয়া কখনোই উচিত নয়। বিপদাপদে আল্লাহর ওপর ভরসা করে নিজের কাজে মন দেয়া এবং সুদিনের অপেক্ষায় থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল জামাত, জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল