১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

কুরআন মজিদে রাসূলের জীবন

-

এ পৃথিবীর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি এ পৃথিবীকে সাজিয়েছেন তার অসংখ্য সৃষ্টির দ্বারা। এসব সৃষ্টির সেরা হলো মানুষ। এ মানুষ থেকেই সৃষ্টি করেছেন সেরাদের সেরা অসংখ্য নবী-রাসূল। তাঁরা আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মনোনীত। তাঁদের জীবন-ব্যবস্থা অহি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাঁদের শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। আর তাঁরা হলেন উম্মতের শিক্ষক। তাঁদের জীবনচরিত উম্মতের জন্য হিদায়াতের আলোকবর্তিকা। এ হিসেবে সাইয়্যেদুল মুরসালিন রাহমাতুল্লিল আলামিন, খাতামুন নাবিয়্যিন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনচরিত উম্মতের জন্য অনুকরণীয় মডেল। কেননা, পবিত্র কুরআন ও ইসলাম তাঁর জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর জীবন চরিত জানা ব্যতীত কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়।
মহানবী সা: মুহাম্মদ ও আহমদ এ দুটি নামে সর্বাধিক পরিচিত। দুনিয়াবাসী রাসূল সা:-কে চিনে মুহাম্মদ নামে, যে নাম রেখেছেন তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালিব। কুরআন মাজিদে মুহাম্মদ সা: এ নামটি শুধুু চেনার জন্য চার জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নং আয়াতে, সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতে, সূরা মুহাম্মদের ২ নং আয়াতে এবং সূরা আল ফাতাহ্’র ২৯ নং আয়াতে। আর পূর্ববর্তী আসমানি গ্রন্থে তিনি আহমদ হিসেবে পরিচিত, যা উল্লেখ করা হয়েছে সূরা আস সাফের ৬ নং আয়াতে। মুহাম্মদ অর্থ প্রশংসিত, আর আহমদ অর্থ প্রশংসাকারী। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্ম নামেও ডেকেছেন। যেমন- হে কম্বল আচ্ছাদিত! (সূরা মুদ্দাচ্ছির-১), হে বস্ত্রাবৃত! (সূরা মুযযাম্মিল-১) ইত্যাদি।

জাতির পিতার দোয়ার ফসল : মহানবী সা: হলেন- মুসলমানদের জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম আ:-এর দোয়ার ফসল। হজরত ইব্রাহিম আ: দোয়া করেছিলেন- হে আমাদের রব! তাদের (বংশের) মধ্য থেকেই তাদের জন্য এমন একজন নবী প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতগুলো পাঠ করে শুনাবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় (সূরা বাকারাহ-১২৯)।

আনুগত্যের স্বীকৃতি : আমাদের প্রিয়নবী সা:-কে প্রেরণের আগেই আল্লাহ তায়ালা সব নবী-রাসূল থেকে তাঁর আনুগত্যের স্বীকৃতি নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- আর আল্লাহ যখন নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকে গ্রন্থ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করার পর তোমাদের সাথে (অহির জ্ঞান) যা আছে তার সত্যতা প্রত্যায়নকারী একজন রাসূল (মুহাম্মদ সা:) আগমন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তার সাহায্যকারী হবে। তিনি আরো বলেন, তোমরা কি এতে স্বীকৃত হলে এবং প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলে? তারা বলেছিল, আমরা স্বীকার করলাম। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো, আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম। (সূরা আলে-ইমরান-৮১) এ আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শেষ নবীকে যারাই অমান্য করবে তারাই আল্লাহর অবাধ্য এবং আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করার দায়ে দোষী হবে। (তাফসির ফি যিলালিল কুরআন)

পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবে তাঁর স্বীকৃতি : পূর্ববর্তী সব আসমানি কিতাবে শেষ নবীর স্বীকৃতি রয়েছে। সব নবী-রাসূল তাদের উম্মতকে শেষ নবীর আগমন বার্তা দিয়েছেন এবং তাঁর গুণ বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা উম্মি রাসূলের আনুগত্য করছে তারা (ইহুদি ও খ্রিষ্টানগণ) তার বর্ণনা নিজেদের কাছে বিদ্যমান তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পাচ্ছে। (সূরা আরাফ : ১৫৭) আমাদের নবীর আগে প্রেরিত হয়েছেন হজরত ঈসা আ:। তিনি তাঁর উম্মতকে শেষ নবীর আগমন বার্তা দিয়েছেন। স্মরণ কর, যখন মরিয়ম তনয় ঈসা আ: বলল- হে বনি ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে এমন একজন রাসূলের সুসংবাদ দিচ্ছি যিনি আমার পরে আসবেন। তাঁর নাম আহমদ (সূরা আসসাফ-৬)

আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত : নবী-রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মনোনীত। কেউ নিজের প্রচেষ্টায় নবী-রাসূল হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- আল্লাহ ফিরিশতা ও মানবকুল থেকে রাসূল মনোনীত করে থাকেন। (সূরা আল হাজ-৭৫) আরো ইরশাদ করেন- অবশ্যই তাঁরা ছিল আমার মনোনীত উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ছোয়াদ-৪৭) অন্যত্র ইরশাদ করেন- আর আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। (সূরা আল-আনয়াম : ১২৪) আর এমন কোনো জাতি নেই যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক প্রেরিত হয়নি। (সূরা আল-ফাতির : ২৪) আরো ইরশাদ করেন- আর প্রত্যেক উম্মতের জন্যই রয়েছে রাসূল। (সূরা আল ইউনুছ : ৪৭) আরো ইরশাদ করেন- আর প্রত্যেক জাতির জন্য একজন পথ প্রদর্শক রয়েছে। (সূরা রাদ-৭)

আল্লাহর ভাষ্যকার : মহানবী সা: নিজের থেকে কিছুই বলেন না, যতক্ষণ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বলার নির্দেশ না করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- আর তিনি নিজের থেকে কিছুই বলেন না, যতক্ষণ তার কাছে প্রত্যাদেশ না করা হয়। (সূরা নজম-৩-৪) আরো ইরশাদ করেন- আর যদি রাসূল আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত, তবে অবশ্যই আমি তার দক্ষিণ হাত ধরে ফেলতাম এবং তার জীবন-ধমনী কেটে দিতাম। তার পরে তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তাকে রক্ষা করতে পারে। (সূরা আল হাক্কাহ : ৪৪-৪৭) আরো ইরশাদ করেন, আমি শুধু সে অহিরই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি নাজিল করা হয়। (সূরা আনআম : ৫০)

হেদায়েতের আলোকবর্তিকা : রাসূলুল্লাহ সা: হলেন মানবজাতির জন্য হেদায়েতের আলোকবর্তিকা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে নূর তথা হেদায়েতের আলোকবর্তিকা হিসেবে রাসূূল ও সত্য প্রদর্শনকারী কিতাব এসেছে। (সূরা আল-মায়েদা : ১৫) অন্যত্র ইরশাদ করেন- আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী ও আলোকদীপ্ত প্রদীপ হিসেবে। (আপনাকে প্রেরণ করেছি) (সূরা আহযাব : ৪৬)

হেদায়েতের গাইড বুক প্রদান : তাঁর কাছে প্রেরিত কুরআন মাজিদ হেদায়েতের শ্রেষ্ঠ গাইড বুক। পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থ বিকৃত হয়ে গেছে, কিন্তু কুরআন মাজিদ হুবহু বিদ্যমান রয়েছে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি; কেবলমাত্র কুরআন মাজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আল্লাহর বাণী- আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর : ৯) আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- আমি আপনার প্রতি যে কিতাব নাজিল করেছি তা প্রতিটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসেবে এবং হেদায়েতের রহমত ও সুসংবাদ সেসব লোকদের জন্য যারা মস্তক অবনত করেছে। (সূরা আন-নাহাল : ৮৯)
আরো ইরশাদ করেন, তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্য আপনি দ্রুত অহি আবৃত্তি করবেন না। এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমারই দায়িত্ব। এরপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব। (সূরা আল-কিয়ামাহ : ১৬-১৯) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- প্রত্যেক যুগের জন্য কিতাব রয়েছে। (সূরা রা’দ-৩৮) আরো ইরশাদ করেন- এটা তো সমগ্র জগদ্বাসীর জন্য একটি উপদেশ, তোমাদের মধ্যে সেসব লোকদের জন্য, যে নির্ভুলভাবে চলতে চায়। (সূরা আত-তাকভীর-২৭ :২৮) আরো ইরশাদ করেন- এ কুরআন মানুষের জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং মুত্তাকিদের জন্য উপদেশ। (আল ইমরান : ১৩৮)

রিসালাতের স্বীকৃতি : আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদের অসংখ্য আয়াতে মহানবী সা:-এর রিসালাতের স্বীকৃতি দান করেছেন। যেমন- আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনরূপে প্রেরণ করেছি এবং আপনি জাহান্নামবাসীদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবেন না। (সূরা আল বাকারা : ১১৯) আরো ইরশাদ করেন- আমি আপনাকে মানবমণ্ডলীর জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি; আর (এ ব্যাপারে) আল্লাহর সাক্ষীই যথেষ্ট। (সূরা নিসা-৭৯) অন্যত্র ইরশাদ করেন- এভাবে আমি আপনাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির প্রতি, যার আগে বহু জাতি গত হয়েছে, তাদের কাছে আবৃত্তি করার জন্য, যা আমি আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি; তথাপি তারা দয়াময়কে (আল্লাহকে) অস্বীকার করে। (সূরা আর-রা’দ : ৩০) আরো ইরশাদ করেন- আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা বানি
ইসরাইল : ১০৫) আরো ইরশাদ করেন- হে নবী! আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী হিসেবে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। (সূরা আল-আহযাব : ৪৫) আরো বলেন- আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। (সূরা সাবা: ২৮) আরো ইরশাদ করেন- আপনি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা ইয়াসিন : ০৩) (চলবে)


আরো সংবাদ



premium cement
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার বিষয়ে ইসরাইলকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা ফতুল্লায় যুবককে কুপিয়ে হত্যা বদলে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর অবলুপ্তির তত্ত্ব! উত্তাল বঙ্গোপসাগর, ভোগান্তিতে কুয়াকাটা ব্যবসায়ীরা ধামরাইয়ে মাইক্রোবাসে গ্যাস রিফিলের সময় বিস্ফোরণ, চালক নিহত ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী নাদিম হত্যা মামলায় তাঁতী লীগের নেতা গ্রেফতার কিম সৈন্যদের বলেছেন দক্ষিণ শত্রু, বিদেশী দেশ চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসলেন বিএনপির সাবেক এমপির ছেলে ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা মামলায় আ’লীগ নেতাদের জামিন, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন সাভারে সেপটিক ট্যাংকে নেমে ২ শ্রমিকের মৃত্যু সিনওয়ার নিহত : গাজা যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু

সকল