০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বিপদ যখন নেয়ামত

-

জীবন প্রবাহ দ্বিকেন্দ্রিক; শরতের প্রকৃতির মতো কখনো সবুজ গালিচার সদৃশ, কখনোবা জীবন প্রহরে বিস্তার করে ধূসর জীর্ণতা। রোদ বৃষ্টির স্বভাবে জীবনে কোমল এবং কঠোর দুটি সময় বিদ্যমান। বিপদের নানা রকম আওতার মধ্যে আমাদের জীবন কাটাতে হয়, রবের পক্ষ থেকে যা ইমতেহান বা পরীক্ষা হিসেবে। সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো- বিপদের সময় আযাযিল মন মস্তিষ্কে দ্রুত কুমন্ত্রণা দিতে থাকে; এতে আমরা বিপদে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়ি আর এই হতাশা থেকে ধারণা জন্মে ‘আমাকে রব পছন্দ করেন না’ বলে এই বিপদ দিয়েছেন কিন্তু রবের সাথে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সে খেয়ালই থাকে না হতাশাগ্রস্ত হৃদয়গুলোতে।
বিপদে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা হাসিল হয় আল্লাহর অসীম রহমত, বিপদে তাওয়াক্কুল মানেই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের এক মহাসুযোগ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না, করলে তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা আনফাল, আয়াত-৪৬)
পেরেশানিতে গুনাহ ঝরে পড়ে : ব্যক্তিগত জীবন পরিক্রমা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত পুরো পৃথিবীতে সমস্যা চলছে। আল্লাহ তায়ালা কাউকে বিপদের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে পরীক্ষা করেন, কাউকেবা কয়েক মুহূর্ত। হৃদয়ে গেঁথে নিতে হবে- বিপদ কখনো কখনো আমাদের জন্য সদকায়ে জারিয়া হতে পারে, হতে পারে গণিমত হিসেবে। বিপদের প্রতিটা মুহূর্ত গুনাহ ক্ষমার মাধ্যম, পেরেশানিতে বান্দার অজস্র গুনাহ ঝরে পড়ে। বিপদের বিদঘুটে অনুভূতি রবের কাছে ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়, এদিক বিবেচনায় বিপদ রবের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য নেয়ামতস্বরূপ।
আল্লাহ বলেন-‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে এবং ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দিন।’ (সূরা বাকারা-১৫৫)
এমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অবাধ্য সম্প্রদায়কে বিভিন্ন বিপদ ও শাস্তিদানের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছেন। কোনো জাতি যতক্ষণ ইসলামের পথে ছিল ততক্ষণ আল্লাহ তাদের শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান করে রেখেছিলেন; আবার যখন আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হয়েছে, আল্লাহর অভিশাপ ও গজবের পাত্রে পরিণত হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, ‘কোনো জনপদ ধ্বংস করার আগে আমি সেখানকার বিত্তবান ও প্রভাবশালী লোকদের সৎকর্ম করার নির্দেশ দেই। কিন্তু তারা আমার আদেশের অবাধ্য হয়ে অন্যায় ও জুলুমে লিপ্ত হয়। তখন ন্যায়সঙ্গতভাবেই আজাবের ফায়সালা হয়ে যায় এবং তারা ধ্বংস হয়।’ (সূরা বনি ইসরাইল-১৬)
বিপদ আত্মশুদ্ধির পথ : স্বভাবত সবার ওপরই নিশ্চিতভাবে বিপদ আপতিত হয়। বিপদের সময় আল্লাহওয়ালাদের ঈমান বেড়ে যায়, দুনিয়ার সামান্য কষ্ট জাহান্নামের অগ্নিযন্ত্রণা ক্ষমার এক মহান সুযোগ নিয়ে আসে।
আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের কর্মের প্রতিক্রিয়াতেই জলে-স্থলে বিপর্যয় ও বালা-মুসিবত ছড়িয়ে পড়ে, তিনি তখন তোমাদের কৃতকর্মের ফল কিছুটা আস্বাদনের সুযোগ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা পেয়ে সৎপথে ফিরে আসতে পারো।’ (সূরা রুম-৪১)
‘বিপদে ধৈর্য যাচাই করা হয়’ এ কথাটি এক দিকে সান্ত¡না অন্য দিকে সফলতা লাভের উত্তম উপকরণ, মুমিনের জন্য বিপদে ধৈর্য ধারণ করা সহজতর।
আল্লাহ বলেন, আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি। (সূরা আম্বিয়া-৩৫)
আল্লাহ যেহেতু সবার পরীক্ষা নেবেন; অপ্রত্যাশিত সময়ের কালো মেঘ সরে গিয়ে রৌদ্র উজ্জ্বলতা আসবে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসার হৃদয়গুলোতে এ সুসংবাদের অপেক্ষা করাই উত্তম। সব বিষয় আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ আছে, এ ধারণা একজন মুমিন সর্বদাই পোষণ করে।
ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- ‘যদি সব উম্মত তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অন্য দিকে যদি সব উম্মত তোমার কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতি করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তায়ালা তোমার তকদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজও শুকিয়ে গেছে।’ (তিরমিজি, হাদিস-২৫১৬ )
তারাই ধৈর্যশীল যারা বিপদে পতিত হলে বলে- ‘সব অবস্থাতে আল্লাহ আমাদের নির্ভরতার কেন্দ্র, সুখ-দুঃখ সব তাঁরই হাতে।’ বিপদের মুহূর্তে হৃদয়ে এ উপলব্ধি এনে দেয় অসীম সওয়াব ও আন্তরিক শান্তি, বিপদ থেকে উত্তরণও তখন সহজ হয়। মূলত বিভিন্ন উপায়ে আল্লাহ তায়ালা এর পরীক্ষাগুলো আমাদের আত্মশুদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে দেয়, বিপদেই মানুষ কৃতকর্ম নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও মৃত্যু তোমাদের পাকড়াও করবেই।’ (সূরা নিসা-৭৮)
মৃত্যুর এ আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার বার্তা, সে প্রস্তুতির লক্ষ্যে আমলকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ বলেন- ‘সে-ই সফল হয়েছে যে নিজের নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে।’ (সূরা শামস-১০)


আরো সংবাদ



premium cement